জার্মানির পার্লামেন্ট নির্বাচনে প্রার্থী বাংলাদেশি সাহাবুদ্দিন মিয়া

১৯৫৫ সাল, মাদারীপুরের রাজৈর থানার অন্তর্গত বাজিতপুর গ্রামে সাহাবুদ্দিন মিয়ার জন্ম। তিনি ১৯৭৮ সালে তিতুমির কলেজ থেকে বিএসসি শেষ করে ১৯৭৯ সালে জার্মানিতে আসেন। এরপর ডর্টমুন্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলেকট্রিক ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে লেখাপড়া করেন। ২০০৮ সালে তিনি জার্মানির গ্রিন দলে যোগ দেন। ২০১২ থেকে ২০২১ অবধি তিনি জার্মানির ভ্যার্ল শহরের গ্রিন দলের সভাপতি ছিলেন এবং এই শহরের মিউনিসিপ্যাল করপোরেশানের মেম্বর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। প্রায় চার বছর তিনি এখানে মেম্বার ছিলেন। ২০২০ থেকে তিনি জোস্ট জেলা পরিষদের মেম্বার। বর্তমানে তাঁকে করা হয়েছে কেন্দ্রীয় সংসদের প্রার্থী। তিনি নর্দরাইন ভেস্টফালিয়ার অঙ্গরাজ্যের গ্রিন দলের তালিকার ৩৮ নম্বরে আছেন। তিনি আশা করেন, ২৬ সেপ্টেম্বরের নির্বাচনে জার্মান পার্লামেন্টের সদস্য হতে নির্বাচিত হবেন।

প্রায় তিন সপ্তাহ যাবৎ তাঁদের ক্যাম্পেইন চলছে। জোস্ট জেলায় ১৪টি শহর আছে এবং প্রতি শহরে গ্রিন দলের কমিটি রয়েছে। সব কমিটি প্রতি সপ্তাহে শহরের মাঝখানে ক্যাম্পেইন চালিয়ে যাচ্ছে। তাঁকে কোনো না কোনো শহরে এই ক্যাম্পেইনে যোগ দিতে হচ্ছে। যেহেতু এবার তাঁর সংসদ সদস্য হওয়ার যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে, সেহেতু জার্মানি সব সমিতি তাঁকে ই–মেইল পাঠাচ্ছেন। তিনি নিয়মিত জার্মানির রেডিও, টেলিভিশন ও পত্রপত্রিকায় মাঝেমধ্যে সাক্ষাৎকার দিয়ে যাচ্ছেন। এভাবেই তিনি চালিয়ে যাচ্ছি তাঁর নির্বাচনী প্রচার।

জার্মানিতে অবস্থানরত বাঙালি প্রবাসীদের (যাঁদের জার্মান পাসপোর্ট রয়েছে) তিনি ডাক দিয়েছেন এবার গ্রিন দলকে ভোট দেওয়ার জন্য। এবারে জার্মানির বুন্দেসটাগের নির্বাচন হতে যাচ্ছে ২৬ সেপ্টেম্বর। নির্বাচনে প্রধান তিন দল ক্রিশ্চিয়ান ডেমোক্রেটিক ইউনিয়ন, সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টি ও পরিবেশবাদী গ্রিন পার্টির মধ্যে প্রতিদ্বন্দীতা হবে বলে ধারণা। এই দলগুলোর বাইরে ছোট কোয়ালিশন সহযোগী দল হিসেবে রয়েছে লিবারেল বা ফ্রি ডেমোক্রেটিক পার্টি, ক্রিশ্চিয়ান সোশ্যালিস্ট ইউনিয়ন ও বাম দল। এই দলগুলো ছোট হলেও ক্ষমতার বলয়ে তারা সব সময় অনুঘটক হিসেবে কাজ করে।

গ্রিন দলের মূল উদ্দেশ্যের মধ্যে রয়েছে—জলবায়ু রক্ষা করা, অভিবাসীদের অধিকার দেওয়া, পৃথিবার শান্তি রক্ষা করা এবং সব মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার দেয়া। সাহাবুদ্দিন মিয়া জানান, ‘গ্রিন দল যদি এবার সরকার গঠন করতে পারে, তাহলেই তারা জলবায়ু ভারসাম্য রক্ষা করবে। এবারের নির্বাচন হবে জলবায়ু রক্ষা করার নির্বাচন। আজ অবধি তিনি যেসব দলের যেসব কর্মসূচি দেখেছেন, তাতে কোনো দলেরই নির্বাচন প্রোগ্রামে জলবায়ু রক্ষার পদক্ষেপ উল্লেখ করেনি। তাই কোনো দলই জলবায়ু রক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় কোনো পদক্ষেপ আজ অবধি নেয়নি ও নেবেও না। জার্মানির সব জলবায়ু নিয়ে কাজ করা সংগঠন জলবায়ু রক্ষার দলকে ভোট দিতে অনুরোধ করছে। তিনি সব বাংলাদেশি জার্মানপ্রবাসীদের অনুরোধ করছেন জলবায়ু রক্ষা দলকে ভোট দিতে। জলবায়ু ধ্বংস হলে আমাদের জন্মভুমি বাংলাদেশ হবে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত। তাই জলবায়ু রক্ষা দলকে ভোট দিলে আমাদের বাংলাদেশের মতো এত উপকার পৃথিবীর আর কোনো দেশের হবে না।’

২৬ সেপ্টেম্বর স্থানীয় সকাল ৮টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা অবধি জার্মান কেন্দ্রীয় সংসদ বুন্দেসটাগে নির্বাচন হতে যাচ্ছে। তিনি বাংলাদেশি প্রবাসী ভাই-বোনদের অনুরোধ জানান, তাঁদের গ্রিন দলকে ভোট দিয়ে সরকার গঠনের সুযোগ দেওয়ার জন্য। সাহাবুদ্দিন মিয়া নর্দরাইন ভেস্টফালিয়ার প্রার্থী তালিকায় ৩৮ নম্বরে আসতে পেরেছেন। আশা করেছেন এবার বুন্দেসটাগের সদস্য হতে পারবেন। তাঁদের গ্রিন দল যত বেশি ভোট পাবে, সংসদে সদস্যসংখ্যাও তত বেশি হবে। তাঁর আহ্বান গ্রিন দলকে ভোট দিন, জলবায়ু রক্ষা করুণ।
নানা জনমত জরিপে বলা হয়েছে, আগে সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টি ২৬ শতাংশ, ক্রিশ্চিয়ান ডেমোক্রেটিক ইউনিয়ন ২২ শতাংশ ও পরিবেশবাদী গ্রিন পার্টি ১৮ শতাংশ ভোট পাবে বলে বলা হয়েছে।

গত রোববার নির্বাচনের আগে শেষ টেলিভিশন বিতর্কে প্রধান তিন দলের চ্যান্সেলর পদপ্রার্থীরা অংশ নেন। এতে অংশ নেন সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টির ওলাফ শলৎস, ক্রিশ্চিয়ান ডেমোক্রেটিক ইউনিয়নের আরমিন ল্যাশেট ও পরিবেশবাদী গ্রিন পার্টির আনালেনা বেরবক। বিতর্কটিতে বর্তমান সামাজিক সমস্যাগুলো যেমন, ন্যূনতম মজুরি, শিশুভাতা ও মৌলিক শিশুনিরাপত্তা, সামাজিক ভাতার ওপর নির্ভরশীল দরিদ্র পরিবার, অবসর ভাতা ইত্যাদি বিষয় বেশি করে সামনে আসে। এই বিতর্কের মধ্যেই সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টির ওলাফ শলৎস আভাস দিয়েছেন, আগামী দিনে বিজয়ী হলে তাঁর দল গ্রিন পার্টির সঙ্গে জোট সরকার গঠন করবে।
মোট ৭০৯টি আসনের মধ্য ২৯৯টি আসনে সরাসরি নির্বাচন হবে। অন্য আসনগুলো দলগুলোর প্রাপ্ত ভোটের অনুপাত অনুযায়ী মীমাংসিত হবে। ভোটাররা দুটি করে ভোট দেবেন। একটি ভোট সরাসরি প্রার্থী নির্বাচনের, অপরটি পছন্দের দলকে। নিয়ম অনুযায়ী, দলগুলো তাদের ভোটপ্রাপ্তির সংখ্যাতত্ত্বের ওপর ভিত্তি করেও মনোনীত প্রার্থীদের পার্লামেন্টে পাঠাতে পারবে। কোনো দল ৫ শতাংশের কম ভোট পেলে পার্লামেন্টে যাওয়ার গ্রহণযোগ্যতা হারাবে।

আগামী রোববার জার্মান পার্লামেন্টের ২০তম নির্বাচন। সারা দেশের প্রায় ছয় কোটি ভোটারের কাছে নির্বাচনকেন্দ্র নিয়ে যাওয়ার জন্য নাম ও নম্বরসংবলিত কার্ড ইতিমধ্যেই পৌঁছে গেছে। সেখানে ভোটকেন্দ্রের কথাও উল্লেখ আছে। করোনার কারণে এবার রেকর্ডসংখ্যক ভোটার ডাকযোগে ভোট দিচ্ছেন।

এবারের নির্বাচনে ৪৭টি দল ৬ হাজার ২১১ জন প্রার্থী দিয়েছে। ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা ছয় হাজার। রোববার সাপ্তাহিক ছুটির দিনে ভোটকেন্দ্রগুলো খোলা থাকবে সকাল আটটা থেকে সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত। আর ভোটের ফলাফল দুই ঘণ্টা পর রাত আটটার মধ্যেই প্রকাশ হওয়ার কথা।