জীবনের জন্য বিনোদন–সুবিধা

শিশু–কিশোর এবং বয়স্কদের জন্য বিনোদন ও শরীরচর্চার কথা মাথায় রেখে দক্ষিণ আফ্রিকার কেপটাউনে পাড়া–মহল্লায় সুইমিংপুল ও জঙ্গল জিমসামগ্রী তৈরি করেছে কর্তৃপক্ষছবি: লেখক

নীল পানিতে সাঁতার দিয়ে গা ভেজানোর শখে উন্মাদরোগগ্রস্ত কচিকাঁচার মন তো বটেই, বয়স্কদের পাকা মনও সবুজে রূপান্তরিত না হওয়ার মানুষ পাওয়া নিঃসন্দেহে অপ্রতুল। নীল পানি যেমন স্বচ্ছ কাচের মতো, তেমনি অপাপবিদ্ধ পরিষ্কার। সুইমিংপুল পাড়ে দাঁড়ালে নীল পানিতে শিশু–কিশোরদের আনন্দ–উল্লাসে পরিবেশ নীল হয়ে ওঠে।

শিশু–কিশোর এবং বয়স্কদের জন্য বিনোদন ও শরীরচর্চার কথা মাথায় রেখে দক্ষিণ আফ্রিকার কেপটাউনে পাড়া–মহল্লায় সুইমিংপুল ও জঙ্গল জিমসামগ্রী তৈরি করেছে কর্তৃপক্ষ।

সুইমিংপুলের ক্লোরিন পানি করোনামুক্ত থাকতে পারেনি। নিয়মের ফাঁসে পুলে করোনা আশঙ্কা থাকায় বন্ধ থাকার পর আবার জনসমাগম শুরু হয়েছে। সুইমিংপুলে প্রবেশ ফি একদম নামমাত্র। অনেক সুইমিংপুল আছে, যেগুলো ব্যবহারে ক্যাশ রেহাইমুক্ত।

বডি ফিটনেস ঠিক রাখার জন্য অথবা সঞ্চ‌িত সময়কে বিনোদনের মাধ্যমে জঙ্গল জিম ব্যবহার করা যায় ইচ্ছামতো। যেখানে সময় বা দিনের কোনো বাধ্যবাধকতা নেই।

যে কেউ যেকোনো সময় যতক্ষণ ইচ্ছা এর ব্যবহার আদায় করে নেওয়া যায় এবং বেগার হিসেবে নিখরচায়।

সুইমিংপুল কয়েক ধরনের হতে পারে। যেখানে আউটডোর ও ইনডোর সুইমিংয়ের সুযোগ আছে তা হলো কম্বিবাড। শুধু গ্রীষ্মে চলে সমারবাড। ভাল্ডবাড থাকে জঙ্গলে ঘেরা। এ ধরনের সুইমিংপুল থাকতে পারে।

সুইমিংপুলে যাওয়ার আগে গোসল করে যাওয়া উচিত সুইমিংয়ের জল বিশুদ্ধ রাখার কারণে। আবার নীল জলে সাঁতার শেষে শরীর কেমিক্যালমুক্ত করতে দ্বিতীয়বার গোসল করা উত্তম।

ছুটির দিনে ও খড় খড়ে রোদের দিন শিশুদের সঙ্গে মা বাবাদেরও সুইমিংপুলে আমোদ–প্রমোদে অংশ নিতে দেখা যায়। নিয়ম–শৃঙ্খলা বজায় রেখে যাঁর যাঁর ইচ্ছামতো নীল পানিতে ডুব দিচ্ছেন, সাঁতার দিচ্ছেন। এসব দেখভালের জন্য স্বেচ্ছাসেবক বা লাইফগার্ড থাকে।

সুইমিংপুলের জল প্রসেসিং হয়। সাপ্লাই থেকে রিজার্ভে আসে। সুইমিংপুলে বিশুদ্ধ পানি যায় ফিল্টেশন প্ল্যান্ট হয়ে। পুলের পানি ওভার ফ্লো হলে সেই পানি ড্রেন দিয়ে ব্লেনচিং ট্যাংকে যায়। সেটা আবার রিসাইক্লিন হয়ে পুলে যাওয়ার ব্যবস্থা আছে। এত স্বচ্ছ ও পরিষ্কার দেখে মনে হয় নীল কাচ।

বড় ও ছোটদের জন্য পাশাপাশি পুলের সুবিধা আছে। বাচ্চারা তাদের পছন্দের খেলনা অনুমোদনক্রমে সাঁতারের সময় ব্যবহার করতে পারে।

বডি ফিটনেসের জন্য অথবা সঞ্চ‌িত সময়কে বিনোদনের মাধ্যমে জঙ্গল জিম ব্যবহার করা যায় ইচ্ছামতো
ছবি: লেখক

এদিকে মেধা বিকাশ ও শরীর গঠনে বাড়ির পার্শ্ববর্তী জঙ্গল জিমে ব্যস্ত থাকে শিশু–কিশোরেরা। তা ছাড়া যেকোনো বয়সের মানুষ এই জিমে এসে তাঁদের শরীর টাইট বা আঁটসাঁট করতে পারেন।

কেপটাউনের গাছের নিচে বা ফাঁকা জায়গাতে বা ব্যবহারের উপযোগী স্থানে উন্মুক্ত জঙ্গল জিম দেখা যায়। সবচেয়ে মজার ব্যাপার হচ্ছে, এসব জঙ্গল জিমের কোনো যন্ত্রপাতি বা উপকরণ কেউ চুরি করছে না, এমনকি ছ্যাঁচড়া চোরও না। যেগুলো কোনো বাউন্ডারি বা নিরাপত্তার প্রহরী ছাড়াই পড়ে আছে।

জনগণের বিনোদনের জন্য এসব সুইমিংপুল ও জঙ্গল জিম বেশ জনপ্রিয়। এগুলো এলাকাবাসী যাতে ধারে–কাছেই পেতে পারে, তার জন্য কর্তৃপক্ষ যথেষ্ট সচেতন। তা ছাড়া প্রতিটা বিচ এলাকাতেও সুইমিংপুলের ব্যবস্থা আছে। সেসব সুইমিংপুলের নীল জলে স্নান করলে মনের মধ্যে একটা আলতো সুখ আসে।

জঙ্গল জিমে গেলে দেখা যায়, সেখানে অনেক পরিবার একত্র হয়ে সবাই মিলে মনোযোগের সঙ্গে ব্যায়াম চালিয়ে যাচ্ছে। অনেকে বাসা থেকে ব্যাগে করে প্রয়োজনীয় কাপড় নিয়ে জিম এলাকায় এসে জিমের পোশাক পরে শরীর ফিট রাখার কাজে ব্যস্ত।

নিয়মিত ব্যায়ামে শরীরের রোগপ্রতিরোধের ক্ষমতাও বৃদ্ধি পায়।
সুইমিংপুলে সাঁতার কাটার সময় কোনো প্রকার অসংগতি দেখা দিলে স্বেচ্ছাসেবী বাঁশিতে হুইসেল দিয়ে সতর্ক করে দিচ্ছেন। সেলফি যুগে এই মুহূর্তগুলো ধরে রাখতে কেউ পিছিয়ে নেই।

গাছের নিচে ছায়াঘেরা পরিবেশে, সবুজ ঘাস চত্বরে, ফাঁকা নিরিবিলি স্থানে, সমুদ্রের পাড়ে, রাস্তার ধারে, ফ্ল্যাট বা জনবসতি–সংলগ্ন এলাকায় এসব সুইমিংপুল ও জঙ্গল জিম গড়ে উঠেছে।

জনসাধারণের সুবিধার্থে রাষ্ট্র বা নগর কর্তৃপক্ষ এগুলো তৈরি করে থাকে। সুইমিংপুল ও জঙ্গল জিমের মতো ফুল ফুটিয়ে মানু‌ষের মনের মধ্যে বসন্ত ফুটিয়ে তোলে কর্তৃপক্ষ।

অনেক সুইমিংপুল আছে, যা নিজ উদ্যোগে বানানো। এমন নয় যে একটাও ফুল ফুটল না, অথচ রাষ্ট্রপক্ষ থেকে বলা হচ্ছে বসন্ত এসেছে।

মন ভালো যাচ্ছে না, এমন অবস্থায় ঘরে না থেকে, মনকে অবশ করে ব্যথা ভুলে থাকার চেষ্টা না করে পার্শ্ববর্তী জঙ্গল জিমে অথবা সুইমিংপুলের নীল জলে লাফালাফিতে মাতাল হয়ে মহুয়ার মিষ্টি নেশায় মত্ত থাকা যায়। আর এই নেশায় উন্মাদিত থাকলে তখন মনে আসবে না আর—
যে আমার মন নিয়েছে
সে কী হায় বলতে পারে
কেন এই দশা আমার
এ আঘাত কে দিয়েছে?
*মাহফুজার রহমান, কেপটাউন, দক্ষিণ আফ্রিকা। [email protected]