তুষারকন্যা

অলংকরণ: এস এম রাকিবুর রহমান

হু হু করে বইছে হিমেল হাওয়া,
শুনতে কি তুমি পাও?
দেখো হাড় কাঁপিয়ে শীত এসেছে,
যদি বাইরে যেতে চাও।
ঘরের ভেতর উষ্ণতায় বসে,
বুঝতে তুমি পারবে না যে,
কী কঠিন ঠান্ডা আছে,
যদি না তুমি দুয়ার খুলে দাও।
প্রকৃতি সেথায় নগ্ন রূপে,
দাঁড়িয়ে ছিল অপেক্ষাতে,
তুষার কবে আসবে নেমে,
শ্বেত বসনের রূপ সাজাতে।
জড়িয়ে নেবে অঙ্গ সে তার,
শুভ্র হিমের আঁচল দিয়ে,
যেন এক উর্বশী ওই নামবে ধরায়,
আজ তুষারকন্যা হয়ে।

নামল তুষার আকাশ ভেঙে,
স্নিগ্ধ শুভ্র তুলোর মতো,
এল বুঝি এই মাটির ধরায়,
মুছে দিতে সব গ্লানি যত।
ঠিকরে পড়ে রবির কিরণ,
ওই তুষারের গায়ে সাদা,
যেন লক্ষ হিরে ঝিলমিলিয়ে,
দুচোখে লাগায় ধাঁধা।
সাজিল দেখ শূন্য শাখা,
সাজিল চিরসবুজ বীথি,
শুভ্র কায়ায় লাগে অপরূপ,
লাগে সুন্দর এই সম্প্রীতি।
রাতের বেলায় রঙিন আলো
জ্বলছে যখন উৎসবের,
তুষারের গায়ে রঙের ছটা!
এই দৃশ্য যেন কল্পলোকের।
তুষারকন্যা যেন অপ্সরী,
আজ শুভ্র লেবাস পরে,
নয়নজুড়ানো এই রূপ দেখে দেখে,
পরান তবু না ভরে।

জানালার কাচের পাশে বসে রই
ধূমায়িত চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে,
আমি চেয়ে রই, অপার বিস্ময়ে,
চেয়ে রই, শুধুই বিমুগ্ধ হয়ে!
রূপ–যৌবনের যে অর্ঘ্য একদিন,
উজাড় করে সে দিয়াছিল ঢালি,
বিচ্ছেদের বেদনায় ক্ষতবিক্ষত হৃদয়,
আজ উৎকণ্ঠায় ওঠে আকুলি-বিকুলি।
প্রকৃতিমাতা অধীর হলো আজ,
বসন্তের উষসীরে করতে আলিঙ্গন,
তাই তো আলতো হাতে সরিয়ে দিল
উর্বশী তুষারের শুভ্র আচ্ছাদন।
ডেকে ডেকে সে,
বসন্তরে করে আহ্বান,
বলে, আয়, ওরে আয়,
ফুল ফোটানোর বেলা যে বয়ে যায়।
সবুজ ঘাসে সাদা আলপনা সাজিয়ে,
তুষার শোকে অভিভূত হয়ে পড়ে রয়,
পড়ে রয়, যতক্ষণ না বসন্তের
আগমনী হাওয়া বয়।