নারী দিবসের ভাবনা-২

অলংকরণ: মাসুক হেলাল

কদিন আগেও জানতাম না নারী দিবস বলে নাকি একখান দিবস আছে! ফেসবুকের কল্যাণে জানলাম। দুদিন পরই ভুলে যাব! আমার কাছে নিজের বাচ্চা দুটোর জন্মদিন ছাড়া আর কোনো দিবসের গুরুত্ব নাই! ওদের জন্মদিনও ভুলে যাই! এক কেকে দুই জন্মদিন পালন করার চেষ্টা করি!

কে যেন জিজ্ঞেস করছিল, আমার আগ্রহ কম কি না? আমি নিরাসক্ত জীবন যাপন করি! কিছু হলে হোল! না হলে নাই! পুরাকালে জন্মালে ঋষি হতে পারতাম হয়তো! আসলে নয়! মেয়েরা তো ঋষি হয় না! ঋষিরও ধ্যান ভঙ্গ করায় নাকি! ওই যে, যেই লাউ, সেই কদু! ললিপপের মতো হাতে নারী দিবস বলে, সুন্দর সুন্দর কথা আর পার্পল শাড়ি! এইটা কি শুধু বাঙালি মেয়েদের জন্য? আসলে সব মেয়ের জন্য নয় তো! কয়েকজন মুখচেনা লোকের জন্য!

শাড়ির বিক্রি হবে, বিক্রি হবে ব্লাউজ, পেটিকোট, তাঁতের কাপড়, মালা, খোঁপা, সঙ্গে গয়না! বেসিক্যালি মুনাফা হবে ব্যবসায়ীদের!
এবার দেখা যাক যে মেয়েগুলোর আসলে দরকার বই, খাতা, স্কুল/কলেজ ফি, রাস্তা ভাড়া, লাঞ্চ মানি, সিকিউরড রোড, থাকার জায়গা, পরিষ্কার সহজলভ্য টয়লেট, স্যানিটারি প্যাড—তারা কী পেল?

কয়টা বাল্যবিবাহ রোধ হলো?
কয়টা মেয়ে রেপ ভিকটিম/হত্যা/আত্মহত্যার হাত থেকে রক্ষা পেল?
সামাজিক, পারিবারিক সহিংসতার হাত থেকে রক্ষা পেল?
কয়টা পরিবারের ছেলেরা শপথ করল বউ পেটাবে না!?
কয়টা পরিবার ঠিক করল যৌতুকছাড়া বিয়ে করবে?
কয়টা ছেলে বিয়ে করল সংসার করতে?
কয়টা ছেলের মানসিকতা পাল্টাল?
মায়ের সংসারের কাজ করতে কষ্ট হয় বলে তোমাকে বিয়ে করছি, না বলে নিজে মায়ের জন্য কাজ করতে রাজি হোল? কাজের লোক একজন রাখুন সামর্থ্য থাকলে!
মেয়েটির মা-বাবাও অসুস্থ থাকতে পারে, তার জন্য কয়জন রাজি হবে, সেই মেয়ের মা-বাবা সংসারের দায়িত্ব নিতে?

মেয়েদের তো শুধু দাও আর দাও শুনতে হয়, সঙ্গে নাই আর নাই!
হয়তো নয়! কী জানি! এতগুলো কোটি টাকা কোনো না কোনো উন্নয়নের জন্য খরচ করাই যেত - নয়?

অবশ্য সব মেয়েই ভিকটিম নয়! অনেকেই ঘরের কুটো নাড়াতেও চায় না! সুন্দর হলে বা মোটামুটি শিক্ষিত বা বাপের/পরিবারের সক্ষমতা হলেই ভাবে, পুরুষ জাতি তাদের পায়ে গড়াগড়ি খাবে, তাদের দেবী বানিয়ে পূজা করবে, হুজুর হুজুর করবে—ছেলেদের জন্মই এদের সেবা করার জন্য!

কারও আবার কোনো গুণই লাগে না, নিজেকে বড় ভাবার, বাকিদের তার প্রজা ভাবার!
এরাই পরে আবার তার ছেলের বউ বা আশপাশের মেয়েগুলোকে জ্বালিয়ে মারে! সঙ্গে ছেলেদের জীবনও মুড়ির খোলায় ভাজে!

কলেজজীবনে শিখেছিলাম, হিজ হিজ, হুজ হুজ। তখন বুঝতাম না, এখন বুঝি!
জীবনটাই হোল হিজ হিজ, হুজ হুজ! যত প্রেমপূর্ণ বাক্যেই বলি, কেউ কারও নয়। আমরা একটা জীবন হয়তো কাটাই কারও সঙ্গে, সহ্য করি, মেনে নিই, মানিয়ে নিই—তারপর? যাই একা! প্রত্যেকেই বিশ্বাস করি, আমাদের নিজেদের কৃতকর্মের ফল আমরাই ভোগ করব—কর্মটা একটু ভালো করি না কেন? চলবে...

আরও পড়ুন