পদ্মাপাড়ের রবি

ছবি: লেখক

আনন্দধারা আর্টস ইউকের কাজ নিয়ে নতুন কিছু বলার অপেক্ষা রাখে না। লকডাউন চলাকালীন যত ফেসবুক লাইভ অনুষ্ঠান হয়েছে বা এখনো হচ্ছে, আনন্দধারার অনুষ্ঠান তাদের মধ্যে একেবারে প্রথম দিকের স্থান দাবি করতেই পারে। শুধু বাংলা গান নয়, বিভিন্ন সময়ে অত্যন্ত উচ্চমানের আলোচনা এই অনুষ্ঠানগুলোকে এক ভিন্নমাত্রা দান করেছে।

আনন্দধারা আর্টস ইউকের ফেসবুক লাইভ
ছবি: লেখক

ইমতিয়াজ আহমেদের পরিচালনায় আনন্দধারার গত কয়েকটি অনুষ্ঠান নিয়ে ইউকের পাশাপাশি ভারত ও বাংলাদেশেও প্রভূত সাড়া পড়েছে। এর মধ্যে প্রথমটি ছিল ‘রাখিবন্ধনে রবীন্দ্রনাথ’। শিল্পী স্বাগতালক্ষ্মী দাসগুপ্ত আর লাইসা আহমেদের মন ছুঁয়ে যাওয়া গানের সঙ্গে আলোচনায় ছিলেন কলকাতা থেকে রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য পবিত্র সরকার। দ্বিতীয় অনুষ্ঠান আবারও ভিন্ন ধরনের! ভারতের অন্যতম প্রধান সরোদিয়া পণ্ডিত তেজেন্দ্র নারায়ণ মজুমদার আর বাংলাদেশের প্রথিতযশা শিল্পী লাইসা আহমেদকে নিয়ে। বর্ষার বিভিন্ন রাগ, আর সেই রাগের ওপর রবীন্দ্রনাথের গান, হাজার হাজার দর্শক–শ্রোতা মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে শুনেছেন। সঙ্গে উপরি পাওয়া আলোচক হিসেবে পবিত্র সরকার আর শাস্ত্রীয় সংগীতশিল্পী ও কলাকার আর্টস ইউকের কর্ণধার চন্দ্রা চক্রবর্তী। লকডাউনের আগে বা পরে গানবাজনা আর আলোচনায় এত উচ্চমানের অনুষ্ঠান যে কতটা বিরল, দর্শকদের প্রতিক্রিয়া থেকেই তা স্পষ্ট।

পরের অনুষ্ঠান হলো দয়ার সাগর ঈশ্বর চন্দ্র বিদ্যাসাগরকে নিয়ে ‘অক্ষয় জ্যোতি’। পবিত্র সরকারসহ এবার আলোচক ছিলেন কলকাতা থেকে একানব্বই বছরের তরুণ রিটায়ার্ড চিফ জাস্টিস চিত্ততোষ মুখার্জী। রবীন্দ্রসংগীতে ছিলেন রাজশ্রী ভট্টাচার্য। এমন বিদগ্ধ আলোচকদের পাশে পাওয়া যে কত বড় সৌভাগ্য, ইমতিয়াজ আহমেদ তা বারবার স্বীকার করলেন।

আনন্দধারা আর্টস ইউকের ফেসবুক লাইভ
ছবি: লেখক

আনন্দধারার পরের অনুষ্ঠান ৪ অক্টোবর রোববার। এবারের অনুষ্ঠান যেকোনো সংগীতানুরাগীর জন্য ভীষণ আনন্দের। ‘পদ্মাপাড়ের রবি’—পদ্মার তীরে বসে লেখা কবিগুরুর গান, কবিতা, গদ্য রচনা নিয়ে আলোচনায় থাকছেন বিশিষ্ট লেখক ও গবেষক পীতম সেনগুপ্ত। সঙ্গে রবীন্দ্রগানে বাংলাদেশ থেকে অভয়া দত্ত আর মুস্তাফিজুর রহমান তূর্য।

একের পর এক অনুষ্ঠান, তার সঙ্গে দুরারোগ্য কর্কট ব্যাধির চিকিৎসা করা! লন্ডন, স্কটল্যান্ড আর অস্ট্রেলিয়ার অগণিত ছাত্রছাত্রীকে নিয়ে প্রতি সপ্তাহে একটানা চার ঘণ্টা করে গানের ক্লাস, দুই যমজ কন্যার পড়াশোনা, সেই সঙ্গে লন্ডনের অন্যতম শাস্ত্রীয় সংগীতের সংগঠন কলাকার আর্টসের প্রজেক্ট ডিরেক্টরের গুরুত্বপূর্ণ পদের যাবতীয় দায়ভার বহন করা—দিনটা তো মাত্র ২৪ ঘণ্টার। সংক্ষিপ্ত দূরাভাষ্যে ইমতিয়াজ আহমেদ জানালেন, ‘মনের আনন্দে যে কাজ করা হয়, তাতে তো কোনো পরিশ্রম মনে হয় না। চিকিৎসক হিসেবে আমার যে কাজ বা ছাত্রদের প্রতি আমার দায়িত্ব কিংবা আমার দুই কৃতী সন্তান উর্বী ও পূর্বার দেখভাল বা কলাকারের কাজকর্ম—সবটাই তো আমার জীবনের আনন্দের অংশ, তাই যত দিন সক্ষম আছি, যেন এভাবেই কাজ করে যেতে পারি।’

কলকাতা থেকে পীতম সেনগুপ্ত জানালেন, ‘আনন্দধারার কাজকর্মের সঙ্গে যুক্ত হতে পেরে আমি আনন্দিত ও গর্বিত। ভবিষ্যতে আরও নানা ধরনের কাজ করব আনন্দধারার সঙ্গে, কলকাতা, লন্ডন, বাংলাদেশের এই মিলিত অনুষ্ঠানমালা সারা পৃথিবীর সংগীতশ্রোতাদের জন্য অমূল্য উপহার হয়ে থাকবে, তা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই।’