‘পশ্চিম বাংলার বাঙালি মুসলমান : অন্তবিহীন সমস্যা’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন

কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসবিদ খাজিম আহমেদের লেখা ‘পশ্চিম বাংলার বাঙালি মুসলমান: অন্তবিহীন সমস্যা’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করা হয়েছে
ছবি: সংগৃহীত

গত মঙ্গলবার কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ে ইতিহাসবিদ খাজিম আহমেদের লেখা ‘পশ্চিম বাংলার বাঙালি মুসলমান: অন্তবিহীন সমস্যা’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করা হয়। বইটি উন্মোচন করেন কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মানস কুমার সান্যাল, সহ–উপাচার্য গৌতম পাল, রেজিস্ট্রার দেবাংশু রায় প্রমুখ। বইটি প্রকাশ করেন উদার আকাশ।

কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মানস কুমার সান্যাল বলেন, পশ্চিম বাংলার বাঙালি মুসলমানদের অন্তবিহীন সমস্যা, তার আত্মানুসন্ধান বা সমাধানে রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ দূরের কথা, ‘কওম’-গত আন্তরিক উদ্যোগও লক্ষ্যযোগ্য হয়ে ওঠেনি। যারা বিষয়টি নিয়ে ভাবিত, সদর্থে চিন্তাভাবনা ও দায়বদ্ধ থাকাটা জরুরি। কেন একটি জাতিসত্তা এত উপেক্ষিত, শিক্ষায় অনগ্রসর, কেন এত দরিদ্র, আর কেনইবা মুসলমান বুদ্ধিজীবী সমাজ নিজ সম্প্রদায়ের সমস্যাবলির স্বরূপ উদ্‌ঘাটনে ও নিরসনের দিকনির্দেশ সম্পর্কে আগ্রহী নন। হালকা একটি আলোর রেখা সম্প্রতি দৃষ্টিগোচর হয়ে উঠছে। কয়েকজন সমাজবিজ্ঞানী আলোচ্য সমস্যাবলি নিয়ে গবেষণা করছেন এবং গ্রন্থাকারে তা পাঠকসজ্জনের সামনে পেশ করছেন। তাঁদের মধ্যে খাজিম আহমেদ; এই উপমহাদেশবিষয়ক ইতিহাসবেত্তা গবেষক, দেশ বিভাগপরবর্তী পশ্চিম বাংলার কঠোরভাবে একেশ্বরবাদী জাতিসত্তার মর্যাদার অন্বেষক, অনন্যসাধারণ প্রাবন্ধিক; বিশিষ্টতম।

‘পশ্চিম বাংলার বাঙালি মুসলমান: অন্তবিহীন সমস্যা’ নামক প্রবন্ধগ্রন্থে ঐতিহাসিক খাজিম আহমেদ, একটি জাতিসত্তার ইতিহাস, উৎপত্তি-বিকাশ, রাজনৈতিক অবস্থান, সামাজিক প্রেক্ষাপট, সাংস্কৃতিক অধৌবিকাশ, ধর্মীয় পরিচয়ের প্রশ্নে উপেক্ষা, ‘মিশ্র সংস্কৃতি’ বা ‘কমপোজিট কালচার’-এর অনিঃশেষ গুরুত্ব, অর্থনৈতিক নিঃসীম দুর্বলতা সর্বোপরি মানবীয় মর্যাদা নিয়ে ‘বেঁচেবর্তে’ থাকার প্রয়োজনে পরম সাদরে লালিত ধর্মনিরপেক্ষতা কেন প্রয়োজন—ইত্যাকার বিষয় নিয়ে বিস্তৃত চর্চা করেছেন। অগণন প্রবন্ধাদির মধ্য থেকে ১৭টি রচনা নিয়ে গ্রন্থটি প্রকাশিত।

সঠিক ইতিহাস রচনা করতে গেলে কোনো পক্ষ, কোনো ধর্ম ও মতবাদের প্রতি বিশেষ আস্থা রাখা যে সর্বসময়ে উপেক্ষণীয়, তা তাঁর রচনায় বারবার পরিস্ফুট। যেমন বর্তমান গ্রন্থে ‘সেক্যুলারিজমের সওয়াল’ নামে একটি প্রবন্ধ থেকে কিছু অংশ উদ্ধৃত তিনি লিখেছেন, ‘এই দেশীয় মুসলমান সমাজের বেদনা এইখানে যে, স্বধর্মী কোনো ব্যক্তিত্ব তার সমাজের দুর্বলতার দিকটি যুক্তি ও সহানুভূতির সঙ্গে পর্যালোচনা করেননি। ...সাধারণভাবে মুসলিম নেতৃত্ব সস্তায় কেল্লাফতে করার জন্য এমন সব দাবি বা সমস্যার কথা তোলেন, যার ফলে অমুসলমানরা (এমনকি প্রগতিশীল অংশও) মুসলমানদের থেকে সরে যেতে বাধ্য হন। ...শুধু মুসলমানদের নিয়ে যদি কেউ একটি পৃথক রাজনৈতিক সংগঠন গড়ে তুলতে চান, তাহলে সুনিশ্চিতভাবে তা হবে মুসলিম স্বার্থবিরোধী। ...একমাত্র জন্মের সুবাদে মুসলমান নেতারা মুসলমানদের স্বার্থরক্ষা করতে সমর্থ, সাধারণ উপেক্ষিত মুসলমান সমাজ আর কতকাল এই ধরনের প্রচারের শিকার হবেন, তা আমাদের জানা নেই।’