প্রতিদিন নতুন নতুন খারাপ সংবাদ, স্বস্তি নেই

>করোনাভাইরাসে পাল্টে গেছে জীবনের বাস্তবতা। আক্রান্ত হয়েছেন অনেকেই। করোনায় জীবন নিয়ে লিখছেন অনেকেই। এই চিকিৎসক ও তাঁর পরিবার করোনায় আক্রান্ত। সে কথাই তিনি লিখছেন। আজ পড়ুন ২২ তম পর্ব।

সকালে কর্তা আমার বাবাকে তার চেকআপে নিয়ে গেছে। আমি ওঠার আগেই ফিরেও এসেছে। নাশতা করে আমি আজও হাঁটতে গেলাম। টায়ার্ড লাগছে, আজ কাশিও আছে। বাসায় ফিরে দেখি সবার লাঞ্চ করা শেষ।

কর্তা বলছে এখন ভালো ফিল করছে, কিন্তু সেও করোনার ক্ষণিকের ভালো লাগা তারপরই খারাপ লাগার ফাঁদে পড়েছে। চোখমুখ দেখলেই বোঝা যায়। আজ নিজেই তার এক্সপেরিয়েন্স বলছে। জ্বর নেই, তেমন কাশিও নেই, ডায়রিয়া নেই, তারপরও ক্ষাণিক পরপর শারীরিক খারাপ লাগা এবং দুর্বলতা ঝেড়ে ফেলতে পারছে না। একদিক দিয়ে ভালো, আমাদের কষ্ট বুঝতে পারছে। তবে তার না হলেই ভালো হতো। এখন আর হুটহাট করে বাইরে যায় না, ভাগ্যিস সেটা আমি এখন করতে পারছি।

গতকাল আবার মায়ের বাসা থেকে অনেক খাবার এসেছে। খাওয়া আসলে হয় না, সবার রুচি ও মর্জিমতো খাবার বাইরে থেকেই আনা হচ্ছে বেশি।

আজ মেয়ে আমার সঙ্গে যায়নি, তার কাজ নিজের ঘর গোছানো।

সন্ধ্যায় কে কী খাবে জিজ্ঞেস করতেই তারা পরোটা খাবে বলতে বলতেই ছেলেকে দেখি দুই বার্নারে দুই প্যান দিয়ে দিতে, মেয়েটা ওরে ফাঁকি দিয়ে কাজ করিয়ে নিচ্ছে! তবে এ কাজটা ছেলেটা আগ্রহের সঙ্গে করে, ও ওর মনমতো এক্সট্রা ক্রিপসি করে বানায় ফ্রোজেন পরাটা।

আমার ভাইয়েরা কখনো চুলার পাড়ে যায়নি দেশ ছাড়ার আগে। মায়ের রান্না করতে ভালো লাগত, বা উপায় ছিল না বলে রাঁধত। তার মাঝেও কখনো কখনো রাত ১০টাতেও রান্তে যেত, ভাইদের জন্য। আমি খুব বিরক্ত হতাম! এখন ভাইয়েরা রাঁধে। হাপিত্যেশ করে কেন ছোটবেলায় যায়নি বলে!

আমি আমার ছেলেমেয়ে দুজনকেই নিজেদের কাজ করতে উৎসাহ দিই। মোটামুটি নিজেদের খাবার ম্যানেজ করার মতো করতে পারে। ঘর ক্লিন রাখা আর লন্ড্রি করাও (ওয়াশিং ম্যাশিন) করে নিতে পারে। তবে থালাবাটি ধোয়াধুয়ি করতে চায় না। পরিষ্কার করে ডিশওয়াশারে দিতে আপত্তি নেই। তবে এর বড় কারণ ওদের বাবা, ও এটা করতে পছন্দ করে। আমার মনে হয় থেরাপিউটিক তার জন্য। আমরা ওর একাজে কোনো আপত্তি করি না! আসলে পরিবারের প্রত্যেক সদস্য যদি সংসারের কাজে হাত লাগায়, বুঝতে পারার আগেই সব কাজ শেষ হয়ে যায়। তবে এ জন্য সবার আগ্রহ থাকতে হয়, শেখাতে হয়, যেমন ও যদি এটা করতে পছন্দ না করত, আমি চিৎকার, চেঁচামেচি করলেও লাভ হতো না। আর ও যদি এগুলো করতে না জানত, তাহলেও করত না। এ জন্যই আমার বাচ্চাদের কোনো পার্থক্য করি না, কাজ শেখাই, দুজনের সেম কাজ। খাবার আগে টেবিল গোছানো, রান্নায় সাহায্য করা, খাবার গরম করা যখন যা দরকার সেটা করে দেয়। আর খাবারের পরে প্লেট গ্লাস ফেলে রাখা? নৈবচ! এটা তাদের কাজ, সঙ্গে খাবার শেষে খাবার তুলে ফেলতে সাহায্য করা।

লেখক
লেখক

প্রতিটি কাজের স্কিলসেট লাগে, মেয়ে বিয়ের পর শিখবে বা ছেলেকে কেন এসব করতে হবে, এসব পুরোনো ধ্যানধারণা। আপনার ছেলেমেয়ে আপনাকে হেল্প করতে করতে শিখবে, নিজের জন্য শিখবে তার জন্য ছেলেমেয়ে ভেদাভেদ না করাই উচিত। সঙ্গে সেই পুরোনা মানসিকতাও বদলানোর সময়, প্লিজ কখনোই এটা বলবেন না ছেলেমেয়ে কে, যে আমার ছেলেমেয়ের পানিটা ঢেলে খাবার দরকার নেই। নিজেদের কাজ করতে শেখান। ১০টা কাজের লোক রাখার সামর্থ্য থাকলেও এসব লাইফ স্কিল শেখান। আপনি জানেন না আপনার আদরের পুতুলগুলোর জীবনে কখন কী পরিবেশে থাকতে হতে পারে, তাদের নিজেদের কাজ, রান্না ইত্যাদি ব্যাপার জানা থাকলে ভবিষ্যতে যেকোনো পরিবেশে নিজেদের মানিয়ে নিতে পারবে। মাঝরাতে মায়ের হাতের পায়েশ খেতে মনে চাইলে, নিজেরাই বানিয়ে নিতে পারবে।

আজ বৈরুতে আপডেট অনুযায়ী দেড় শর বেশি মারা গেছে, নিখোঁজ এখনো অনেক। তবে সরকারিভাবে সেখানে তেমন উদ্ধার তৎপরতা নাই। বরঞ্চ সারা দেশ থেকে কোদাল আর ঝাড়ু হাতে নারী–পুরুষ সবাই এসেছে শহর পরিষ্কার করতে, একে অপরের প্রতি সাহায্যের হাত বাড়াতে। আবার কেরালায় বৃষ্টির কারণে প্লেন দুর্ঘটনায় ১৯১ জন যাত্রীর সবারই কোনো না কোনো ইনজুরি হয়েছে, ২০ জনের মতো মারা গেছে। সবাই মধ্যপ্রাচ্য থেকে ফিরছিল।

প্রতিদিন নতুন নতুন খারাপ সংবাদ, স্বস্তির কোনো খবর নেই।

এদিকে আমি প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের একটি সাক্ষাৎকার দেখছি। এখানে প্রেসিডেন্টের সামনেও পায়ের ওপর পা তুলে বসা যায়। তুখোড় সংবাদিক। ট্রাম্পের সঙ্গে তার রীতিমতো বাগযুদ্ধ চলছে। ট্রাম্প তার প্রশ্নের উত্তর দিয়ে যাচ্ছে, তবে ভুলভাল বললে, সঙ্গে সঙ্গে ইন্টারভিওয়ার ট্রাম্পকে ভুল ধরিয়ে দিচ্ছে এবং তাকে প্রশ্নের উত্তরে এটা–সেটা বলা থেকে ফেরাচ্ছে। বাকস্বাধীনতা! বাকস্বাধীনতা মানে যা মুখে আসে সেটা বলা নয়! বরং যথাযথ কথা বলা। বাকস্বাধীনতা মানে অন্যকে মুখের ওপর ফালতু কথা বলা নয়, যা মুখে আসে তা–ই বলে গালি দেওয়া নয়। এর ব্যাপ্তি অনেক বড়। আর কথা বলারও একটি এটিকেট আছে, সেটা জেনে তারপর বাকস্বাধীনতার সংজ্ঞা শেখা উচিত। চলবে...