প্রথম গ্লোবাল বেঙ্গলি লিট ফেস্ট শেষ

চতুর্দিকে মৃত্যু ও অতিমারিতে আক্রান্ত এই দুর্বিষহ সময়েও সামান্য কয়েকজনের একটি দল সাহস দেখাল কীভাবে সৃষ্টিশীল মননের দ্যূতিতে ঘনিয়ে আসা আঁধার থেকে মুক্তির আশার আলো দেখার চেষ্টা করা যায়! ৬ থেকে ৮ মে আয়োজিত হয়েছিল প্রথম ডায়ালগ ইন গ্লোবাল বেঙ্গলি লিট ফেস্ট অনুষ্ঠান।

ডায়ালগ ইন ভারতের প্রিমিয়ার নলেজ বেইজড সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম, যা সমাজমাধ্যমের অযৌক্তিক দ্বন্দ্ব ও ক্যাওসের মধ্যে একটি সুস্থ ডিজিটাল স্পেসের কথা ভাবছে, যা মানুষের মধ্যে সুস্থ সংলাপ বা আদান-প্রদানের ক্ষেত্র প্রস্তুত করবে। ডায়ালগ ইনের প্রতিষ্ঠাতা পিনাকী গাঙ্গুলি জানালেন যে তাঁদের এ প্ল্যাটফর্মে একটি বিশেষ রিওয়ার্ড সিস্টেম আছে পয়েন্টের ওপর ভিত্তি করে, যা থেকে গ্রাহকেরা রোজগার করতে পারেন।

টিজ অব ইন্ডিয়ার সহযোগিতায় ডায়ালগ ইন গ্লোবাল বেঙ্গলি লিট ফেস্ট–২০২১ এমন অনেক কিছুই করেছে, যা নেট দুনিয়ায় প্রথম বলা যায়। যেমন: ১০টি দেশের লেখক ও চিন্তাবিদদের একত্র করেছে (আমেরিকা, বাংলাদেশ, কানাডা, ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, জার্মানি, ভারত, নেদারল্যান্ডস, নাইজেরিয়া ও পাকিস্তান)। ৫০ জন বক্তা (লেখক, কবি, অনুবাদক, ভাষাবিদ, আবৃত্তিকার, রেডিও ও টিভি সঞ্চালক, লিটল ম্যাগাজিন ও ওয়েব ম্যাগাজিন সম্পাদক, ওয়েব টিভি পরিচালক, সাংবাদিক, অধ্যাপক, অ্যাডভার্টাইজমেন্ট গুরু, লিটারারি এজেন্ট, প্রকাশক) তাঁদের কাজ নিয়ে কথা বলেছেন। এ তিন দিনে ২১ ঘণ্টা সরাসরি সংলাপের মাধ্যমে ২০টি বিভিন্ন বিষয়ে বৈঠক হয়েছে, ৭০০-এর বেশি মানুষ পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সেই বৈঠকগুলোতে অন্তর্জালের মাধ্যমে উপস্থিত থেকেছেন, অনেকে এখনো প্রতিদিন সেগুলো দেখছেন।

অনুষ্ঠানের শুরুতে উপস্থাপনা করেছেন একুশে পদক বিজয়ী সাহিত্যিক সেলিনা হোসেন ও ভারতের লেখক–সম্পাদক–প্রকাশক ত্রিদিব চট্টোপাধ্যায়। এ ছাড়া ‘বাংলা সাহিত্যে নারীবাদী চিন্তাভাবনা’ বিষয়ে অংশগ্রহণ করেছেন সেলিনা হোসেন ও কবি মন্দাক্রান্তা সেন; ‘কবিতা প্রতিবাদের ভাষা’ বিষয়ে লন্ডন থেকে একুশে পদক বিজয়ী আবদুল গফ্ফার চৌধুরী, কলকাতা থেকে কবি সুবোধ সরকার এবং কবি শামস মোমিন নিউইয়র্ক থেকে অংশগ্রহণ করেছেন। বাংলা ক্রিয়াভিত্তিক শব্দবিজ্ঞানের অন্যতম প্রবক্তা ভাষাবিদ রবি চক্রবর্তীর সঙ্গে সে বিষয়ে আলোচনা করেছেন নারায়ণচন্দ্র দাস, পিন্টু দাস। অরিন্দম চক্রবর্তীর সঙ্গে অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেছিলেন আকাশবাণীর সঞ্চালক হৈমন্তী রায়। এ রকম আলোচনা অবশ্যই সংরক্ষণযোগ্য, এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না।

‘বাংলা ভাষায় বিজ্ঞাপনের বয়ান’ শীর্ষক বৈঠকে বিজ্ঞাপন গুরু শৌভিক মিশ্র, বিশেষজ্ঞ সুতীর্থ দাসের সঙ্গে সংলাপে শ্রোতা-দর্শকদের বিগত ১০০ বছরের বিজ্ঞাপনের ইতিহাস ভ্রমণ করিয়ে আনেন, যেখানে রয়েছে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রোডাক্ট এন্ডোর্সমেন্ট থেকে আজকের সোশ্যাল মিডিয়ার বিজ্ঞাপন। গ্লোবাল বেঙ্গলি লিট ফেস্ট ‘লাল পাহাড়ির দেশে যা’ গানটির ৫০ বছর পূর্তি পালন করে কবিস্রষ্টা অরুণ কুমার চক্রবর্তী সঙ্গে। ‘কবিতা যখন গান হয়ে ওঠে অথবা আবৃত্তি করা হয়’, সে বিষয়ে সংলাপে অংশগ্রহণ করেন কানাডা থেকে কবি ও গীতিকার ফেরদৌস নাহার ও কলকাতার রাজা দাস।
‘বাংলা সাহিত্যে ডায়াসপোরার প্রভাব’ বিষয়ে আলোচনায় লন্ডন থেকে ছিলেন দ্বিভাষিক কবি লেখক শামীম আজাদ ও ঢাকা থেকে বাংলাদেশ মিউজিয়ামের ডিরেক্টর ও কবি শিহাব শাহরিয়ার। ‘ইন্টারনেট যুগে বাংলা সাহিত্যের ভবিষ্যৎ ও ভাষার বিবর্তন’ বিষয়ে আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভাইস চ্যান্সেলর ডক্টর পবিত্র সরকার, ইংল্যান্ড থেকে শামীম আজাদ, কানাডা থেকে কবি সাইফুল্লাহ মাহমুদ দুলাল, আমেরিকা থেকে কবি শামস মোমিন ও নাইজেরিয়া থেকে লেখক পল্লব হালদার। বৈঠকটি পাকিস্তান থেকে সঞ্চালনা করেন লেখক ও সাংবাদিক মাসকাওয়াথ আহসান। শেষ বৈঠকে বিখ্যাত লেখক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়, সেলিনা হোসেন, কবি শ্রীজাত ও প্রকাশক সম্পাদক পত্রভারতী ত্রিদিব চট্টোপাধ্যায় ‘সংলাপের পথ আমাদের ভবিষ্যৎ’ শীর্ষক বৈঠকে গুরুত্বপূর্ণ মতামত ব্যক্ত করেন।

পুরস্কার পেল ৭টি লেখা
গ্লোবাল বেঙ্গলি লিট ফেস্টের অন্তরালে ডায়ালগ ইন একটি অনলাইন সাহিত্য প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছিল। যাতে কবিতা, ছোটগল্প, প্রবন্ধ—এই তিন বিভাগে প্রায় ৬০০ লেখা জমা পড়েছিল, তার মধ্যে ৩০টি নির্বাচিত লেখা পরবর্তী সময়ে বই আকারে ছাপা হবে। সেরা সাতটি লেখা আর্থিক পুরস্কার পেয়েছে; ছোট গল্প বিভাগে প্রথম পুরস্কার শুভম দাস, দ্বিতীয় অঞ্জন পাল, তৃতীয় রুকাইয়া বুলবুল। কবিতা বিভাগে বিজয়ীরা হলেন প্রথম চিরঞ্জিত সাহা, দ্বিতীয় হাসান হামিদ, তৃতীয় অনুক্তা ঘোষাল। প্রবন্ধ বিভাগে বিজয়ী হন মাল্যবান আশ।

সোশ্যাল মিডিয়ার সাহায্যে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা প্রায় ৫ লাখ বাঙালি এ ক্যাম্পেইন দেখেছেন। ২৫ হাজারের বেশি মানুষের কাছ থেকে প্রত্যক্ষ সাড়া পেয়েছে। সারা বিশ্বে ছড়িয়ে থাকা সৃষ্টিশীল বাঙালিকে এক জায়গায় নিয়ে আসার জন্য ডায়ালগ ইনের এ প্রচেষ্টা বাঙালি বুদ্ধিজীবীদের দ্বারা সমাদৃত হয়েছে। ডায়ালগ ইন প্লাটফর্ম থেকে ভবিষ্যতে আরও কী পাওয়া যায়, সে জন্য আমরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করব। বিজ্ঞপ্তি