ফিয়েস্তা আর সিয়েস্তার দেশ স্পেনে নেই আনন্দ

ফিয়েস্তা আর সিয়েস্তার (স্পেনিশ প্রচলিত ভাষায় ফিয়েস্তা হলো উৎসব, আর সিয়েস্তা হলো দুপুরের ঘুম) দেশ স্পেন। সারা বছরে আনন্দ–উৎসবে মুখরিত থাকে ফুটবলে ভালোবাসার এই দেশ। খ্রিষ্টধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় উৎসব ক্রিসমাসকে ঘিরে বর্ণিল সাজে সজ্জিত স্পেন। করোনা মহামারির কারণে আনন্দের সেই জৌলুশ নেই। ২১ ডিসেম্বর থেকে স্পেনে শুরু হয়েছে শীতকাল। শীতকালে স্থায়িত্ব হবে ২০ মার্চ পর্যন্ত।

পার্শ্ববর্তী দেশ জার্মানি ও ইংল্যান্ডের করোনার তাণ্ডবের ঢেউ লেগেছে স্পেনে। সবার মধ্যে অজানা এক আতঙ্ক, কখন আবারও কোভিড–১৯ তীব্রভাবে সংক্রমিত হয় স্পেন। তবে জানুয়ারি থেকে করোনায় আক্রান্ত মানুণের সংখ্যা বাড়তে পারে বলেও ইঙ্গিত দিয়েছেন স্পেনিশ বিশেষজ্ঞরা।

এদিকে সরকারি প্রণোদনার মেয়াদ শেষ হবে আগামী ৩১ জানুয়ারি। অনেক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও কর্মক্ষেত্র বন্ধ রয়েছে, জানুয়ারি পরে খুললে চাকরি হারাতে পারেন অনেকে। এতে নতুন অর্থনৈতিক সংকট দেখা দিতে পারে। প্রতিবছরের মতো এবারও ক্রিসমাসের কেনাকাটা সীমিত হয়েছে। সংকুচিত করছেন উৎসব–আনন্দের অনুষ্ঠান পর্ব। ইউরোপের রৌদ্রোজ্জ্বল, সুন্দর, স্বাস্থ্যসম্মত আবহাওয়া এবং সর্বোপরি জীবনব্যবস্থা সুলভ মূল্যের কারণে প্রতিবছর রেকর্ডসংখ্যক পর্যটক এখানে আসেন। এ বছর করোনাভাইরাসের কারণে তা শূন্যর কোঠায়।

প্রায় ৯ লাখ ৫০ হাজার মানুষের আয়ের উৎস থেমে গেছে। ৩০ লাখ কর্মজীবী মানুষ রাষ্ট্রের অনুদান ইআরটির ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছেন। মহামারি কাটলেও প্রতিষ্ঠান বন্ধ হওয়ার কারণে তাঁদের অনেকে চাকরি হারিয়েছেন। আশঙ্কা করা হচ্ছে, অনেক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাবে।

গত দুই মাসে স্পেনের জিডিপি কমেছে ৫ দশমিক ২ শতাংশ। স্পেনের ইতিহাসে গত এক শতাব্দীতে এ হারে জিডিপির পতন ঘটেনি। স্পেনের কেন্দ্রীয় ব্যাংক এই পতনের হার ভয়াবহ হয়ে ১৩ দশমিক ৬ শতাংশ পর্যন্ত নেমে যাওয়ার আশঙ্কা করছে।

স্পেনজুড়ে রাত ১১টা থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত কারফিউ আগামী বছর মে পর্যন্ত বলবৎ থাকবে। তার মানে রাত ১১টা থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত কোনো সুনির্দিষ্ট কারণ ও তার প্রমাণ ছাড়া বাইরে থাকলে পুলিশ তার ওপর জরুরি আইন প্রয়োগ করবে। এ ক্ষেত্রে জরিমানা ৩০০ থেকে ৬ হাজার ইউরো পর্যন্ত হতে পারে।

উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় থাকায় স্প্যানিশরা ব্যয় কমিয়ে সঞ্চয়ী হয়েছেন। এবারের বড়দিন, নতুন বছর উদ্‌যাপনে দিনগুলো মলিন হলেও সান্ত্বনা এ বছর শুধু বেঁচে থাকা, টিকে থাকার।
* বকুল খান, স্পেন