বর্ণহীন ফ্যাকাসে ঈদ এবং জাপানের স্থবিরতা

ঈদ আমাদের জীবনে আনন্দ–উচ্ছ্বাস আর উৎসবের বার্তা নিয়ে হাজির হয়। ঈদ বড়দের কাছে দেওয়ার আনন্দ, ছোটদের কাছে পাওয়ার আনন্দ, শিশু-কিশোরদের কাছে প্রতিযোগিতা আর নতুনত্বের আনন্দ। ঈদে নতুন কাপড় কেনা, গরু-ছাগলের হাটে ঘুরে বেড়ানো, গরু-ছাগলের হাঁকডাক আর কোলাহলের মধ্যে ক্রেতা-বিক্রেতার ভিড় ঠেলে পছন্দের গরু-ছাগল কিনে বাড়ি ফেরা, ফিরতি পথে গরু-ছাগলের দাম বলার গর্বিত সুখানন্দ। ঈদের সকালে কোরবানির গরু-ছাগলকে গোসল করানো, নিজে গোসল শেষে নতুন জামা পড়ে খুশবু মাখিয়ে বাড়ির বড়দের সালাম করে সেমাই/পায়েস খেয়ে ঈদগাহে যাওয়া, নামাজ শেষে কোলাকুলি এবং ফিরতি পথে কবরস্থ স্বজনদের স্মৃতিময় আত্মার সঙ্গে কিছুটা সময় কাটিয়ে বাড়ি ফিরে হুজুর দিয়ে গরু জবাই করা, মাংস বিলাতে পাড়া মহল্লার এ-বাড়ি ও-বাড়ি ঘুরে বেড়ানো, দিনময় হইহুল্লোড় করে মাতিয়ে বেড়ানো, দিন শেষে সবাই বসে টিভিতে ঈদের আনন্দ অনুষ্ঠান উপভোগ, সবই ঈদ আনন্দ।

প্রবাস জীবনে ঈদ এতটা বর্ণিল ও আনন্দময় হয়ে ধরা দেয় না। জাপানে ঈদের দিন সরকারি ছুটি না থাকায় ইচ্ছা থাকলেও সবার পক্ষে ঈদের নামাজে শরিক হওয়া সম্ভব হয় না। তবে কাজ শেষে সবাই ঈদের বিশেষ খাবার তৈরি করে প্রতিবেশী বন্ধুবান্ধবসহ আড্ডায় মাতেন। তা ছাড়া ঈদের দিন নিকটাত্মীয় ও বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে ফোনালাপে খুঁজে নেন ঈদ আনন্দ। অতীতের স্মৃতিময় ঈদ আনন্দ সবাইকে তাড়িত করে দেশে ফিরে স্বপ্নিল ঈদ উদযাপনের। এ বছর করোনা আতঙ্ক দুটি ঈদকে করেছে নিরানন্দ। প্রতিবেশীর বাসায় যাতায়াত এবং আড্ডা বাদ দিয়ে প্রায় সবাই নিজস্ব ঘরে শুয়ে-বসে কাটিয়েছেন আর মসজিদে নামাজির সংখ্যাও ছিল কম।

শুধু ঈদ নয়, করোনা আতঙ্কের প্রভাব পড়েছে জাপানপ্রবাসীদের বহুল আকাঙ্ক্ষিত মিলনমেলাখ্যাত বৈশাখী মেলা এবং জাপানিজদের ইতিহাস ঐতিহ্যের স্মারক হানামির (সাকুরা উৎসব) ওপর, সবই বাতিল করতে হয়েছিল। তা ছাড়া সম্প্রতি আবার করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে থাকায় আগস্ট মাসে অনুষ্ঠিতব্য বিভিন্ন পাড়া-মহল্লার ঐতিহাসিক মাৎসুরি (উৎসব) এবং ব্যাপক পরিসরে আয়োজিত হানাবি (আকাশে অগ্নি রশ্মির বর্ণিল বিস্ফোরণ-আতশবাজি) সমূহ হচ্ছে না। মৌসুমি পিকনিক স্পটগুলো করোনা নিয়ন্ত্রণে পালিত নিয়মকানুনের ভেড়াজালে স্থবির প্রায়। বৈশ্বিক মহামারি করোনা আজ মানবসভ্যতাকে করেছে প্রাণহীন, স্থবির, নির্জীব, নিথর ও আতঙ্কিত। জানি না, আমরা কবে কীভাবে ফিরে পাব করোনামুক্ত আনন্দময় স্বাভাবিক বিশ্ব।