বাইডেন কি পারবেন আমেরিকার নেতৃত্ব পুনরুজ্জীবিত করতে

জো বাইডেন
ছবি: এএফপি

বাইডেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিতে যাচ্ছেন। আমেরিকা ইতিহাসের এক ক্রান্তিকাল পার করছে এখন। ডোনাল্ড ট্রাম্প আমেরিকার ইতিহাসে প্রথম ইনকামব্যান্ট প্রেসিডেন্ট, যিনি কিনা শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করছেন না।

ইউএস ক্যাপিটল হিলে ৬ জানুয়ারির রায়টের পেছনে ইন্ধন জোগানোর জন্য আমেরিকার ইতিহাসে প্রথম প্রেসিডেন্ট হিসেবে একই মেয়াদে দুবার অনাস্থা ভোটে কোণঠাসা। টুইটার, ফেসবুকসহ সব সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ইতিমধ্যে কেউ সাময়িকভাবে, কেউ স্থায়ীভাবে ট্রাম্পের অ্যাকাউন্ট ব্লক করেছে। ওয়াশিংটন পোস্টের ভাষ্য অনুযায়ী, ট্রাম্প ও তাঁর গুরুত্বপূর্ণ সমর্থকদের বিরুদ্ধে এ ধরনের ব্যবস্থা নেওয়ার কারণে অনলাইনে ইউএস প্রেসিডেনশিয়াল ইলেকশন–সংক্রান্ত ভুয়া খবরের পরিমাণ ৭৩ শতাংশ কমে গেছে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, এই সেন্সরশিপের মাধ্যমে কি আদৌ ট্রাম্পের ট্রাম্পিজম বন্ধ করা যাবে? আমেরিকা পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী গণতন্ত্র, মতের পার্থক্য থাকাটা স্বাভাবিক, কিন্তু তাই বলে দলবল নিয়ে গণতন্ত্রের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কংগ্রেসে আক্রমণ করা শুধু আমেরিকা নয়; বরং পশ্চিমা গণতন্ত্রের জন্য অপমান ও বেআইনি।

বাইডেন এই ইলেকশনে প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে আমেরিকার ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি ভোট পেয়েছেন। ৮১ মিলিয়নের বেশি ভোট, ভোটার শতকরা ৫১ দশমিক ৪ এবং ইলেকটোরাল কলেজে ৫৩৮–এর মধ্যে ৩০৬ ভোট পেয়ে ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট বাইডেন প্রেসিডেন্ট হিসেবে জয় পেয়েছেন। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এই ইলেকশনে অনেক কারচুপি হয়েছে বলে বারবার অভিযোগ করলেও যথেষ্ট প্রমাণ না থাকার কারণে কোনো অভিযোগই থাকেনি।

গত চার বছর ট্রাম্পের প্রেসিডেন্সিতে আমেরিকা ও বহির্বিশ্ব অনেক কিছু নতুন করে দেখেছে। মুসলমান অভিবাসীদের প্রতি বৈরীপনা, বন্ধু রাষ্ট্র ও রাষ্ট্রপ্রধানদের খোলাখুলি অপমান করা, জলবায়ু পরিবর্তন নীতিতে পিছপা হয়ে যাওয়া, মধ্যপ্রাচ্য নীতিতে সম্পূর্ণ বিতর্কিত অবস্থান থেকে ইউএস এম্বেসি তেল আবিব থেকে জেরুজালেমে স্থানান্তর করাসহ আরও অনেক কিছু ট্রাম্পের নেতৃত্বে সাধারণ ব্যাপারে পরিণত হয়েছিল।

করোনা মহামারির সময় আমেরিকা, যুক্তরাজ্য ও পশ্চিমা বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর নেতৃত্ব অনেক গুরুত্ব বহন করছে এবং করবে। এই ক্রান্তিকালে যেখানে ট্রাম্পের নেতৃত্ব আমেরিকার জন্যই যথেষ্ট নয়, সেখানে ঘরমুখী ট্রাম্পের নেতৃত্ব বহির্বিশ্বের জন্য তেমন কিছু প্রদান করে না। আমেরিকাতে ট্রাম্পের প্রেসিডেন্সিতে ডানপন্থী উগ্রপন্থীদের কার্যক্রম অনেক বেড়েছে। রাজনৈতিক বিভাজনে বিভক্ত আমেরিকা, করোনার কারণে নাভিশ্বাস অর্থনৈতিক অবস্থা। ব্রেক্সিটের কারণে এবং আরও অনেক কারণে বাজে সময় যাচ্ছে যুক্তরাজ্য ও ইউরোপের অন্যান্য দেশের। চীনের সঙ্গে বৈশ্বিক রাজনীতি, অর্থনীতি ও পররাষ্ট্রনীতিতে আমেরিকা কি এগিয়ে থাকতে পারবে?

এ অবস্থায় জো বাইডেনের ওপর দায়িত্ব অনেক বেশি। বিশ্বায়নের এই যুগে আমেরিকার নেতাদের শুধু আমেরিকার দিকে নজর দিলেই হবে না, চিন্তা করতে হবে পুরো বিশ্ব নিয়ে। তা ছাড়া বিশ্বমঞ্চে আমেরিকার নেতৃত্ব প্রশ্নবিদ্ধ হবে এবং তা দীর্ঘমেয়াদি টেকসই হবে না।

*লেখক: আদনান পাভেল, গবেষক ও শিক্ষক, সরকার ও আন্তর্জাতিক রাজনীতি বিভাগ, দ্য ইউনিভার্সিটি অব এসেক্স, যুক্তরাজ্য