বিষাদে বিদায় ২০২০

করোনাভাইরাস
প্রতীকী ছবি

২০২০ শেষ হয়েছে। আমি আসলে কাউকে উইশ করি না। চাই না কেউ আমাকে উইশ করুক। ঠিক জানি না, কীভাবে গেল বছরের বিষোদগার করব। আমাদের পরিবার কোভিড সারভাইভ করেছে। ক্যানসার সারভাইভ করেছে। অসুস্থতা পুরো পরিবারকে যেন ভালোবাসায় আগলে রেখেছিল। আমি খুশি যে ২০২০ শেষ হয়েছে।

আমি অবশ্যই খুশি পরিবারের সুস্বাস্থ্যের জন্য। ৩০ ডিসেম্বর কোভিডের প্রথম টিকা পেয়েছি, যদিও প্রথমে দ্বিধাদ্বন্দ্বে ছিলাম। পরে বন্ধু–বান্ধবের টিকা নেওয়া দেখে উৎসাহিত হয়েছি। প্রতিদিন সকাল–সন্ধ্যা কোভিড পজিটিভ রোগী দেখে বেড়াই।

আবারও পজিটিভ হয়ে বাসার সবাইকে অসুস্থ করার মানে হয় না। কাজটাই এমন, না চাইলেও মানুষের ভালোর জন্য ওথ নেওয়া।

কোভিড যে মহামারি আকারে ছড়াচ্ছে, সেটা আক্রান্তের পরিমাণ দেখেই আঁচ করা যায়। এখানে মৃতের সংখ্যা তিন লাখ ছাড়িয়েছে। আমার শাশুড়ি এখন কোভিড থেকে সেরে উঠছেন।

সারা বিশ্বে আমাদের শত শত সহকর্মী মারা গেছেন। এসব মৃত্যুর কোনো দরকার ছিল না। সম্পূর্ণ অবহেলা! অনেকেই তাঁদের মা–বাবা, স্বামী–স্ত্রী, সন্তান হারিয়েছেন, তাঁদের ক্ষতি অপূরণীয়। পরিবারের একমাত্র কর্মক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়েছেন যাঁরা, তাঁদের কষ্ট বোঝার সামর্থ্য আমার নেই। সারা বিশ্বে লাখ লাখ মানুষ বেকার হয়ে গেছেন। নীরব দুর্ভিক্ষ চলছে এত শত হানাহানির মধ্যেই।

ছবি: প্রথম আলো

মাস্ক, মাস্ক আর মাস্ক কোভিড প্রতিরোধের একমাত্র হাতিয়ার। সঙ্গে সামাজিক দূরত্ব এবং জনসমাগম থেকে বিরত থাকার কোনো বিকল্প নেই।

আমি হাত–পা কামড়াচ্ছিলাম হ্যালোইন থেকেই। তারপর থ্যাংকসগিভিং আর বড়দিন। সবশেষে নিউইয়ার! মনে মনে খুশি হওয়ার বদলে এসব দিনের সমাগম দেখে সবচেয়ে খারাপটাই মনে হচ্ছিল। আর তা সত্যি হয়েই এসেছে, কোভিডের নতুন ঢেউ!!

দাবানলের মতো কোভিড ছড়িয়েছে, ছড়াচ্ছে এসব দিনের পারিবারিক জনসমাগম থেকেই! দায়িত্ববোধ নেই যেন কারও। দায়িত্বজ্ঞানহীন হয়ে কোভিড ছড়াচ্ছেন সবাই।

বেশির ভাগ মানুষ সুস্থ হয়ে গেলেও তাঁরা যাঁদের ভাইরাস দিচ্ছেন, তাঁরা মারা যাচ্ছে, যা এড়ানো বা প্রতিরোধ করা যেত! প্লিজ বি রেসপন্সিবল!

আমরা চিকিৎসকেরা ক্লান্ত, ধৈর্য্যের চরম সীমায় পৌঁছে গেছি! প্রত্যেক কোভিড রোগী আমাদের জন্য আতঙ্কজনক। শুধু আমরাই নই, আমাদের পরিবার–পরিজন সবার জীবন ঝুঁকিতে! কাউকে হারানোর মতো সামর্থ্য নেই! হারাতেও চাই না।

জানি আমরা সবাই টায়ার্ড, কোভিড ফ্যাটিগড! চাই মুক্ত বাতাসে ঘুরতে আর ঘুরতে গিয়েই মরণ ডেকে আনছি নিজেদের অজান্তেই।

কোভিড কবে যাবে জানি না। আদৌ যাবে কি না, তা–ও জানি না। এটাই আমাদের নতুন স্বাভাবিক কি না, জানি না। হয়তো কোভিডের সঙ্গেই বাস করতে হবে দশকের পর দশক! এমনটা না হোক, সেটাই সবার প্রত্যাশা! তবে চাই নতুন স্বাভাবিক। আমরা জেনেছি কীভাবে এইডসের সঙ্গে বসবাস করতে হয়! একদিন কোভিডের সঙ্গেও বসবাস করতে জানব। কে জানে তত দিনে এর চেয়েও খারাপ কিছুর সঙ্গে মোকাবিলা করতে হবে কি না!

নতুন বছরের জন্য ভালো কিছু ভাবতে ইচ্ছা হয়! বাস্তবতা ভিন্ন! তারপরও সবার সুস্বাস্থ্য কামনায় বলতে ইচ্ছা হয় নতুন বছরের শুভেচ্ছা।