মনোনয়ন প্রত্যাশী বাংলাদেশি রাশেদা

রাশেদা নেওয়াজ
রাশেদা নেওয়াজ

উন্নত জীবনযাপনের জন্যই আমাদের পরবাসী হওয়া। বাঙালির এই বিদেশ যাত্রা গত শতকের মধ্যভাগে। প্রথম গন্তব্য ইউরোপ। তারপর মধ্যপ্রাচ্য, দূরপ্রাচ্য এবং সর্বশেষ সংযোজন উত্তর আমেরিকা ও অস্ট্রেলিয়া। উত্তর আমেরিকায় অভিবাসন নেওয়ার অল্প সময়ের মধ্যে অনেক ক্ষেত্রেই আমাদের সাফল্য সন্তোষজনক। কিন্তু একটি জায়গায় আমাদের অংশগ্রহণ নেই বললেই চলে। সেটি হলো রাজনীতি। রাজনীতিপ্রিয় বাঙালি হয়েও আমরা স্থানীয় রাজনীতিতে জড়িত হতে চাইনি অথবা অনীহা দেখাই। তবে ইদানীং স্থানীয় রাজনীতিতে অংশগ্রহণের আগ্রহ ও ইচ্ছা অনেকের মধ্যেই দেখা যাচ্ছে। কানাডার জাতীয় নির্বাচনের সময় খুব কাছেই। এ বছর অক্টোবরে জাতীয় সংসদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক দলগুলো তাদের যোগ্য প্রার্থীদের মনোনয়ন দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছে। আমরা এবার দেখতে পাচ্ছি যে, কানাডার বিভিন্ন নির্বাচনী এলাকা থেকে বাংলাদেশি কানাডিয়ানরা বিভিন্ন দল থেকে মনোনয়ন পাওয়ার জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। আমাদের শহর অটোয়াতেও একজন বাংলাদেশি কানাডিয়ান ফেডারেল লিবারেল পার্টি অব কানাডার দলীয় প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন পাওয়ার জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। এই সাহসী ও উদ্যমী প্রার্থীর নাম রাশেদা নেওয়াজ৷

রাশেদার জন্ম বাংলাদেশের চট্টগ্রামের পটিয়ার বরউঠান গ্রামে। তাঁর বাবা নূর-উল-আলম খান, মা আঞ্জুমান আরা। সাত ভাই-বোনের মধ্যে তিনি পঞ্চম। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় ১৯৭০ সালে স্থপতি

ফেডারেল লিবারেল পার্টির নেতা জাস্টিন ট্রুডোর সঙ্গে রাশেদা
ফেডারেল লিবারেল পার্টির নেতা জাস্টিন ট্রুডোর সঙ্গে রাশেদা

তানবির নেওয়াজের সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়। স্বামীর চাকরিসূত্রে ১৯৭৩ সালে তিনি কানাডায় আসেন। এখানে আসার পর তিনি টরন্টো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আরব্যান অ্যান্ড রিজিউন্যাল প্ল্যানিংয়ের ওপর স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নেন। টরন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় খণ্ডকালীন চাকরিও করেন। পড়াশোনা শেষ করে তিনি টরন্টো, রেজিনা ও অটোয়ায় বিভিন্ন সময় সরকারের তিনটি স্তরেই দক্ষতার সঙ্গে ৩৩ বছর কাজ করেন। এমনকি তিনি বাংলাদেশে অবস্থানকালেও ২০০১ থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত ইউএসএআইডিতে কাজ করেন। সে সময় তিনি বাংলাদেশে স্থানীয় সরকার শক্তিশালীকরণ প্রকল্পের সিনিয়র অ্যাডভাইজার হিসেবে কাজ করেন৷
অটোয়ার নির্বাচনী এলাকাগুলো সব দলের কাছেই গুরুত্বপূর্ণ। এখানে প্রতিটি দলই আশা করে তাদের প্রার্থীর বিজয়। অটোয়ার ছয়টি নির্বাচনী এলাকার একটি নিপিন থেকে ফেডারেল লিবারেল পার্টির মনোনয়ন প্রত্যাশী রাশেদা নেওয়াজ ৷ তাঁর সঙ্গে লিবারেল পার্টিতে যোগদান, দলের আদর্শ উদ্দেশ্য এবং দলীয় মনোনয়ন লাভে প্রার্থী নির্বাচনে অংশগ্রহণসহ বিভিন্ন বিষয়ে আমার কথা হয়৷
লিবারেল পার্টিতে যোগদান প্রসঙ্গে রাশেদা নেওয়াজ বলেন,১৯৮৩ সাল থেকেই আমি কানাডা লিবারেল পাটির্র একজন সক্রিয় কর্মী। কানাডার সফল ও জনপ্রিয় প্রধানমন্ত্রী পিয়ের এলিয়েট ট্রুডোর সামাজিক ন্যায়বিচারমুখী রাজনৈতিক আদর্শের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে আমি লিবারেল পার্টিতে যোগ দিই। আমি তখন রেজিনাতে। সেখানে তখন নিউ ডেমোক্রেটিক পার্টি খুবই জনপ্রিয় ও শক্তিশালী ছিল। সেই অবস্থাতেই রালফ গুডেইল রেজিনাতে লিবারেল পার্টিকে সংগঠিত করতে শুরু করে। তখন আমি দলের একজন কর্মী হিসেবে কাজ শুরু করি। সেই যে লিবারেল পার্টিতে কাজ শুরু হয়েছিল, এখনো চলছে। ৩০ বছরের বেশি হয়ে গেল, দলের জন্য কাজ করছি। এই সময়ে আমি দলীয় নীতিনির্ধারণী কমিটিগুলোতেও কাজ করেছি। আমাকে ১২ বছর আগেও একবার দলের পক্ষ থেকে নির্বাচন করার কথা বলা হয়েছিল ৷ কিন্তু ছেলেরা ছোট থাকায় আর নির্বাচন করা হয়নি। এবার দল যখন আমার কাছে নির্বাচন করতে আগ্রহী কি না জানতে চায়, তখন রাজি হয়ে গেলাম। মানুষের সঙ্গে এবং মানুষের জন্য কাজ করতে আমার ভালো লাগে। কানাডিয়ান রাজনীতি ছাড়াও আমি বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে সব সময় নিজেকে জড়িত রাখতে আগ্রহী। আমি বাংলাদেশ-কানাডা অ্যাসোসিয়েশন অব অটোয়া ভ্যালিতে (বাকাওভ) দুইবার সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছি।
লিবারেল পার্টি সম্পর্কে রাশেদা নেওয়াজ বলেন, ‘লিবারেল পার্টি জনগণের দল ৷ কেবল এলিট আর বিত্তশালীদের দল নয়, সমাজের সর্বস্তরের মানুষের দল। বর্তমান নেতৃত্ব রাষ্ট্রকাঠামোতে সাধারণ মানুষের আশা আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটাতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। বিশেষ করে “টিম ট্রুডো” নতুন নেতৃত্বের প্রতি আগ্রহী। বর্তমান কনজারভেটিভ সরকার সাধারণ মানুষের ন্যূনতম চাহিদা পূরণে ব্যর্থ হচ্ছে। সরকারের সব সেক্টরেই নাজুক পরিস্থিতি। স্বাস্থ্য, শিক্ষা, হাউজিংসহ সব খাতেই সরকারি কর্মসূচি সংকোচনের কারণে মধ্য ও নিম্ন আয়ের জনগণের জীবনযাত্রার মান নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত হয়েছে। সাধারণ

কানাডার সাবেক প্রধানমন্ত্রী জন ক্রেতিয়ের সঙ্গে রাশেদা
কানাডার সাবেক প্রধানমন্ত্রী জন ক্রেতিয়ের সঙ্গে রাশেদা

কানাডিয়ান পরিবার আগের চেয়ে অনেক বেশি ঋণগ্রস্ত হয়েছে। মানুষের জীবনযাপনে অনিশ্চয়তা বৃদ্ধি পেয়েছে। বয়স্ক মানুষের অনুপাত বেড়ে যাওয়ার জন্য আমাদের স্বাস্থ্যব্যবস্থা ইতিমধ্যে চাপের সম্মুখীন। তার ওপর আবার বর্তমান সরকার তহবিল স্থানান্তরের নতুন নিয়ম প্রবর্তন করে প্রভিন্সের স্বাস্থ্য তহবিল সংকুচিত করেছে। যুব সম্প্রদায়ের শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ সম্প্রসারণের কোনো পরিকল্পনা না থাকায় হাইস্কুল-উত্তর শিক্ষা সম্পন্ন করা কঠিন হয়ে পড়েছে। এসব থেকে মুক্তি পেতে হলে আগামী নির্বাচনে লিবারেল পার্টির বিকল্প নেই বলে আমি মনে করি। ’ তিনি আশা প্রকাশ করেন, আগামী নির্বাচনে জনগণ জাস্টিন ট্রুডোর নেতৃত্বাধীন লিবারেল পার্টিকে নির্বাচিত করবে।
রাশেদা আরও বলেন, ‘একজন বাংলাদেশি কানাডিয়ান হিসেবে আমি আশা করছি ফেডারেল রাইডিং অব নেপিয়ানে বসবাসরত বাংলাদেশিরা আমাকে লিবারেল পার্টির মনোনয়ন পেতে সব ধরনের সহযোগিতা করবেন৷ ’
এই প্রথম অটোয়ায় কোনো বাংলাদেশি কানাডিয়ান জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার জন্য দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী। বাংলাদেশি আমরা আশা করি তিনি দলীয় মনোনয়ন পাবেন এবং আগামী নির্বাচনে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে নির্বাচিত হয়ে আসবেন। তাঁর এই জয় কানাডিয়ান রাজনীতিতে আমাদের প্রবেশের দ্বার উন্মুক্ত করবে। জয়তু রাশেদা নেওয়াজ।