মায়া

প্রতীকী ছবি

আজকের রাতটা অন্য রাতের মতো না। অনেকটা অন্য রকম। বহুদিন পর একা একা রাস্তায় হাঁটছি এই মধ্যরাতে, আকাশে বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে, মনে হচ্ছে অল্প সময় পরে বৃষ্টি হবে।

অনেক দিন পর আজ ভীষণ মন খারাপ। আজকের রাতটাই মন খারাপের নির্ঘুম রাত। মন খারাপের কারণ জানা নেই, শুনেছি সব মন খারাপের কারণ থাকে না। অনেকেই বলেন, মানুষের মন বড়ই বিচিত্র। টানাপোড়েন মনের ওপর কখনো কখনো প্রচণ্ড চাপের সৃষ্টি করে। সেই চাপের মোকাবিলা করতে না পারলে মন খারাপ হয়।

তবে আজ আমারও কি তাই ! তারও কারণ আমার জানা নেই। এই পৃথিবীতে অনেক কিছু জানতে নেই। অনেক কেন, কী...এর উত্তর নেই অনেকের কাছে।

কাছের মানুষের মায়া নিয়ে ভাবছিলাম, এই মায়া জিনিসটা বড্ড খারাপ, একবার কেউ মায়ায় পড়লে তা কাটিয়ে ওঠা খুব কষ্টের। আব্বু তখন মারা গেছেন বহুদিন হলো।

একবার ছোট ভাই খেলার সামগ্রী ভেবে আব্বুর ডাক্তারি সব জিনিস হাতের কাছে পেয়ে খেলতে শুরু করেছিল, আম্মু দেখে তো ভীষণ খেপেছিলেন। যত্ন সহকারে সেগুলো তুলে রাখতে গিয়ে আম্মু বারবার স্পর্শ করছিলেন আর কাঁদছিলেন। আম্মু প্রায় আব্বুর সেই ব্যবহার করা জিনিস স্পর্শ করে কাঁদতেন। এই স্পর্শ আর কান্না কি তবে মায়ায় পড়ে করতেন আম্মু।

বড় আপুর এক জোড়া কবুতর হঠাৎ মারা যাওয়ার পর আপু সারা দিন কিছু খাননি, কেঁদেকেটে বাড়ি একাকার করেছিলেন। আপুর কবুতরের জন্য এক প্রকার মায়া হয়ে গিয়েছিল।

পরিচিত অনেক রাস্তায় যেতে যেতে মায়া জন্মায়। ফেসবুকে হঠাৎ পাওয়া অল্প পরিচয়ে কারও প্রতি ভীষণ মায়া জন্মে। সে মায়া বড্ড ভয়াবহ, হুট করে কাটিয়ে ওঠা যায় না।

আর যদি কখনো সেই মায়াভরা মানুষটি ‘ভালো থেকো’ বলে হুট করে হারিয়ে যায়, তখন মানুষের তীব্র কষ্ট হয়, বুক শূন্য শূন্য লাগে, মনে হয় কোথাও আজ কেউ নেই। একাকিত্ব চেপে ধরে বুকের ভেতর তখন খুব কষ্ট লাগে। এ ‘ভালো থেকো’ বলার মাঝে তীব্র অভিমান কাজ করে।

আমি অসুস্থ ছিলাম, তখন বুঝেছি কত মানুষ নিঃস্বার্থভাবে মায়ায় জড়িয়ে ছিল।

অনেকেই বারবার খবর নিয়েছেন, তাঁদের প্রত্যেকের কাছে কৃতজ্ঞতা। এ মায়ার ঋণ শোধ হওয়ার নয়। এই ঋণে থাকতে চাই আজীবন।

বাড়িতে আসা মেহমান হুট করে চলে গেলেও কষ্ট লাগে, বাড়িটা তখন শূন্য লাগে। তাঁদের প্রতি অল্প সময়ে মায়া জন্মে যায়। এভাবে সবাই আচমকা এক মায়ায় জড়িয়ে বিদায় নেয়। মায়াগুলো বড্ড খারাপ। হারিয়ে গেলে কেবল নিরন্তর কষ্ট দিয়ে যায়।

এসব মায়া কখনো ভালোবাসায় রাখে আবার কখনো খুব পোড়ায়। এই জীবনে কাছের অনেক মানুষ আমাকে ভুল বুঝে চলে গেছে আবার অনেককে আমি হয়তো ছেড়েছি।

এদের আপন ভেবেছি, ভালোবেসেছি, সুখ-দুঃখ শেয়ার করেছি ...সময়ের বিবর্তনে আজ কেউ কারও নই কিন্তু তার জন্য জন্ম নেওয়া মায়া কমে না। এই মানুষগুলো বুকের একটা জায়গাজুড়ে থাকে বহুকাল।

শুনেছি সব ভালোবাসায় মায়া থাকে না, কিন্তু সব মায়ায় ভালোবাসা থাকে, ভীষণভাবে থাকে।

এই মুহূর্তে রিমঝিম বৃষ্টি শুরু হয়েছে, আমি অনেক দিন পর আজ ভিজছি। দুঃখগুলো একটু ধুয়েমুছে ফেলে দিতে চাই। আকাশে বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে, কিন্তু আজ ঘরে ফেরার মন নেই। পাশের বাসায় কে যেন গান শুনছে...ভেসে আসছে আমার মন উদাস করা উথালপাতাল সুর...
কেউ যখন আর নেই পাশে
তন্দ্রা মগন কোনো আকাশে
দূর সময়ের নিশ্বাসে গোধূলির খেলা
দিন শেষে নিয়ে আসে মায়া…
তোর পানে মায়া…তোর গানে মায়া…
তোর কাছে যাই চলে।

*লেখক: কাওছার আহমেদ নিলয়, কুয়েতপ্রবাসী