যুদ্ধদিনে ব্রিটেন

বঙ্গবন্ধু ও ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী এডওয়ার্ড হিথের বৈঠক হয় ১৯৭২ সালের ৯ জানুয়ারি
ফাইল ছবি

আমার বাবা স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় ব্রিটেনের শেফিল্ড শহরে থাকতেন। এখনো আবেগের সঙ্গে সেসব দিনের কথা স্মরণ করেন। তখন শেফিল্ডে বাঙালিদের আলাদা কোনো মসজিদ ছিল না, নামাজ শেষে ইমামরা পাকিস্তানের জন্য দোয়া চাইলে প্রায়ই কথা–কাটাকাটি, মারামারি লেগে যেত। কাজের জায়গায়ও পাঞ্জাবিদের/পাকিস্তানিদের সঙ্গে মারপিট হতো। ওনারা তখন দল বেঁধে থাকতেন।

বিলেতে বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য অ্যাকশন কমিটি গঠনের পর সবাই তাঁদের এক সপ্তাহের বেতন কমিটির ফান্ডে দেন এবং তারপর থেকে প্রতি সপ্তাহে সবাই পাঁচ পাউন্ড করে দেওয়া শুরু করেন। বড় কোনো মিটিং হলে বাসে করে সবাই লন্ডনে আসতেন যোগ দিতে। দেশ থেকে কয়েক বছর আগে যখন যুক্তরাজ্যে এসেছেন, তখন লন্ডনে দু–এক দিন থেকেই ব্রেডফোর্ডে চলে যান। উনার তাই সমাবেশের সময় লন্ডনে আসার সূত্রেই লন্ডনকে প্রথম চেনা। ১ আগস্টের ট্রাফালগার স্কয়ারের প্রতিবাদ রেলির কথা তিনি এখনো বলেন। লন্ডন এত বিশাল সমাবেশ খুবই কম দেখেছে।

তখনো প্রায় সবার পরিবার বাংলাদেশে, কার কী খবর জানার কোনো উপায় ছিল না। মাঝেমধ্যে খবর আসত বিভিন্ন গ্রামে পাঞ্জাবিরা চলে এসেছে। অজানা আতঙ্কে দিন কাটত সবার। আমার দাদাকেও একবার পাকিস্তানি ক্যাম্পে ধরে নিয়ে যায়, এক সপ্তাহ বেঁধে রেখে অত্যাচার করে। কেউ নাকি বলেছিল, ওনার ছেলেরা মুক্তিবাহিনীতে আছেন। বাবা ও বড় চাচা তখন শেফিল্ডে থাকেন আর ছোট দুই চাচা তখন স্কুলে পড়েন। অনেকটা না খাইয়ে এক সপ্তাহ ধরে অত্যাচার করে দাদাকে ছেড়ে দেয়, হয়তো আরও খবর নিয়েছিল সত্যতা জানতে।

এভাবেই যুদ্ধের দিনগুলো অজানা আতঙ্কে কাটে বিলেতে সবার। নিজের জীবনের নিরাপত্তা থাকলেও দেশে আপনজনের কী অবস্থা, তা জানার কোনো উপায় ছিল না। দেশে টাকা পাঠাতেও হাজার বাধা। ভারতে টাকা পাঠাতে হতো, সেখান থেকে অনেক হাত ঘুরে বাড়িতে টাকা দিয়ে যেত। মাঝেমধ্যে সেই টাকা কখনো পৌঁছাত না।

অক্টোবরে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী লন্ডনে আসেন। বাঙালিদের এক সমাবেশে বক্তব্য দেন তিনি। ভারত তখন মুক্তিযোদ্ধাদের ট্রেনিং, শরণার্থীদের জায়গা, বাংলাদেশের প্রবাসী সরকারকে সাহায্য করলেও অফিশিয়ালি যুদ্ধে সরাসরি জড়ায়নি। এই সমাবেশে তিনি সবাইকে আশ্বস্ত করেন যে তিনি এই অত্যাচার ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবেন। যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্স সরকারকে নিজের দিকে আনতে সমর্থ হন। ভারত সোভিয়েত ইউনিয়নের সঙ্গে ২০ বছরের বন্ধুত্ব ও সহযোগিতার চুক্তি করে, যাতে যুক্তরাষ্ট্র বা চীন ভারত আক্রমণ করলে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভারতের পক্ষে যে যুদ্ধে জড়াবে তাতে আর সন্দেহ থাকে না। প্রেসিডেন্ট নিক্সন ভারতকে আগ্রাসনকারী দেশ বলে ভিয়েতনামে থাকা মার্কিন সৈন্যদের পাকিস্তানের পক্ষে যুদ্ধে পাঠাতে যে পরিকল্পনা করেছিলেন, তা থেকে সরে আসেন।

বাংলাদেশের বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে ডিসেম্বরে ভারত যখন সরাসরি যুদ্ধে যুক্ত হয়, তখন স্বাধীনতার স্বপ্ন যে আর বেশি দূরে নয় তা আঁচ করা যাচ্ছিল। ১৬ ডিসেম্বর আসে সেই ঐতিহাসিক ক্ষণ।

পাকিস্তান কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে বঙ্গবন্ধু লন্ডনে আসেন ১৯৭২ সালের ৯ জানুয়ারি। বাবা তা জেনেছেন টিভি থেকে।

দেশে যখন মুক্তিযুদ্ধ চলছে, তখন পাকিস্তানের কনডেম সেলে মৃত্যুর প্রহর গুনছেন বঙ্গবন্ধু। পাকিস্তানের সাজানো আদালতে তাঁর ফাঁসির আদেশ হয়েছিল। বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরী ছিলেন মুজিবনগর সরকারের ব্রিটেন ও ইউরোপের রাষ্ট্রদূত। মামলায় বঙ্গবন্ধুর পক্ষে লড়ার জন্য বিচারপতি চৌধুরী আইরিশ ব্যারিস্টার শন ম্যাকব্রাইটকে লন্ডন থেকে পাঠিয়েছিলেন। কিন্তু তাঁকে কোর্টে ওঠার অনুমতি দেয়নি পাকিস্তানি আদালত। আর সাজানো মামলায় সবকিছুই তো পূর্বনির্ধারিত ছিল।

১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তান যেদিন ৯৩ হাজার সৈন্যসহ আত্মসমর্পণ করে, তার ৩ দিন পর ইয়াহিয়া খান সামরিক ক্যুর ফলে পাকিস্তানের ক্ষমতা হস্তান্তর করে ভুট্টোর কাছে। ইয়াহিয়া খান তখন এক মুখবন্ধ খাম দেয় ভুট্টোকে, যাতে লেখা বঙ্গবন্ধুর ফাঁসির আদেশ। ইয়াহিয়া খান ভুট্টোকে বলেছিল তা না করা ছিল তাঁর সবচেয়ে বড় ভুল। কিন্তু বাংলাদেশের জন্ম তত দিনে হয়ে গিয়েছে, বিশ্বনেতারা পাকিস্তানকে চাপ দিচ্ছেন বঙ্গবন্ধুর মুক্তির ব্যাপারে। ২৬ ডিসেম্বর কনডেম সেল থেকে বঙ্গবন্ধুকে নেওয়া হয় জেলারের বাংলোতে। তারপর ১ জানুয়ারিতে তাঁকে নেওয়া হয় রাওয়ালপিন্ডি শহর থেকে কিছু দূরে মিলিটারি সদর দপ্তরের কাছে আরেক বাংলোতে, সেই সন্ধ্যায় ভুট্টোর সঙ্গে সাক্ষাৎ হয় বঙ্গবন্ধুর।

ভুট্টোর কাছ থেকে সেই সন্ধ্যায় বাংলাদেশের স্বাধীনতার খবর পান বঙ্গবন্ধু। বাংলাদেশ কয়েক সপ্তাহ আগে স্বাধীনতা পেয়ে গেলেও সেই স্বাধীনতার স্বপ্নদ্রষ্টা, স্বাধীনতার কান্ডারিই এর খবর পান সবচেয়ে শেষে।

পাকিস্তানিরা বঙ্গবন্ধুকে সরাসরি ঢাকায় বা ভারতে পাঠানোকে নিজেদের আরেকটি অপমান বলে মনে করেছিল। তাই প্রস্তাব দেয় ইরান অথবা তুরস্কে পৌঁছে দেওয়ার। তখন বঙ্গবন্ধু প্রস্তাব দেন তাকে লন্ডনে পৌঁছে দেওয়ার, কারণ ওখানে তার নিজের অনেক মানুষ আছে।

বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে ১৯৭২ সালের ৯ জানুয়ারি পিআইএর উড়োজাহাজ খুব ভোরে লন্ডনে ল্যান্ড করার মাত্র কয়েক ঘণ্টা আগে ব্রিটেনের ফরেন ও কমনওয়েলথ অফিস এর খবর পায়। তড়িঘড়ি করে বিদেশ কর্মকর্তারা ছোটেন এয়ারপোর্টে। বঙ্গবন্ধু কয়েক ঘণ্টার জন্য ওঠেন লন্ডনের মে ফ্লাওয়ারের ক্লেরিজ হোটেলে। হোটেলে পৌঁছেই কথা হয় প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদের সঙ্গে। দীর্ঘ সংগ্রামের দুই সাথি, দুজনেই আবেগপ্রবণ হয়ে ওঠেন। বঙ্গবন্ধু বলেন যে তুমি এক দারুণ কাজ করেছ। কাছে থাকা কেউও বুঝতে পারছিলেন না তাঁদের কথোপকথন। তাজউদ্দীন আহমদ অনেক ষড়যন্ত্র রুখে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও বঙ্গবন্ধু দুইই ছিনিয়ে এনেছেন। সেদিনই তিনি তাঁর ওপর অর্পিত দায়িত্বের সফল সমাপ্তি দেখেছিলেন।

তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী স্যার এডওয়ার্ড হিথ ছিলেন বিদেশ সফরে, তিনি সেদিনই ফিরে আসেন সফরের মাঝখানে অথচ ব্রিটেন তখনো বাংলাদেশকে স্বীকৃতিই দেয়নি। সেই বিকেলে এক ঘণ্টার বেশি সময় ধরে চলে দুজনের সাক্ষাৎ। বঙ্গবন্ধু যে দেশের প্রধান, সেই সোনার বাংলায় তখনো ফেরেননি, কিন্তু সামনে যে তাঁর বিরাট দায়িত্ব, সে সম্বন্ধে ছিলেন ওয়াকিবহাল। ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে তাই আদায় করে নেন যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের জন্য জরুরি অর্থনৈতিক সাহায্য। আর স্বীকৃতির ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী হিথ প্রতিশ্রুতি দেন যে ভারতীয় সৈন্য বাংলাদেশ থেকে ফিরে গেলেই ব্রিটেন বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেবে।

সেই রাতেই ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রীর ব্যবস্থা করা রয়্যাল এয়ারফোর্সের ভিআইপি সিলভার কমেট জেটে করে দিল্লি হয়ে বাংলাদেশে রওনা দেন। প্রথমে প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী ইন্ডিয়ান এয়ারলাইনসের বিশেষ ফ্লাইটে বঙ্গবন্ধুকে আনার ব্যবস্থা করলেও গুরুত্বপূর্ণ গোয়েন্দা খবরে সেই পরিকল্পনা থেকে সরে এসে প্রধানমন্ত্রী হিথকে রয়্যাল এয়ারফোর্সের বিশেষ জেটে বঙ্গবন্ধুকে পাঠানোর অনুরোধ করেন, যাতে নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়। আর দিল্লি থেকে ভারতের প্রেসিডেন্টের রাজহংস বিমান বঙ্গবন্ধুকে কলকাতা হয়ে সেদিন বিকেলেই ঢাকায় পৌঁছে দেবে। কলকাতায় বঙ্গবন্ধুর বিশাল জনসভায় ভাষণ দেওয়ার কথা ছিল।

রয়্যাল এয়ারফোর্সের সেই ফ্লাইটে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে ছিলেন সস্ত্রীক বিশিষ্ট আইনজীবী বর্তমানের গণফোরামের সভাপতি কামাল হোসেইন, লন্ডনে তৎকালীন ভারতীয় হাইকমিশনের ফার্স্ট সেক্রেটারি ভেদ মারওয়াহ আর প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর বিশেষ দূত হিসেবে সেকেন্ড সেক্রেটারি শশাঙ্ক ব্যানার্জি।

ভিআইপি ফ্লাইটটি সাইপ্রাস ও ওমানের ব্রিটিশ বেইসে জ্বালানি বিরতি নিয়ে ১৩ ঘণ্টায় দিল্লি পৌঁছায় ১০ জানুয়ারি সকালবেলায়। ডিপ্লোম্যাট ব্যানার্জি সেই ১৩ ঘণ্টাকে তাঁর দীর্ঘ ডিপ্লমেটিক ক্যরিয়ারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক মিশন হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তিনি বসেছিলেন বঙ্গবন্ধুর পাশের সিটে। বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে তাঁর আলোচনার সব না বললেও অনেক স্মৃতিচারণ তিনি করেছেন প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমানের সঙ্গে তার সাক্ষাৎকারে ২০১৩ সালে। আর তাই প্রকাশিত বইয়ে ‘India, Mujibur Rahman, Bangladesh Liberation & Pakistan-a political treatise’।
ওমানে বিরতি দিয়ে বিমান যখন আবার আকাশে, জানালা দিয়ে মেঘ উড়ে যাচ্ছে, তখন বঙ্গবন্ধুকে বিমানে হঠাৎ দাঁড়িয়ে ‘আমার সোনার বাংলা’ গাইতে দেখে তিনিও দাঁড়িয়ে পড়েন, বঙ্গবন্ধু তখন তাঁকেও গাইতে বলেন। গভীর আবেগে দুই বাংলার দুই বাঙালি ‘আমার সোনার বাংলা’ গান। শেষে বঙ্গবন্ধু শশাঙ্ক ব্যানার্জিকে কেমন হবে জিজ্ঞেস করলে তিনি বুঝে নেন যে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হতে যাচ্ছেন দুটি স্বাধীন দেশের জাতীয় সংগীতের রচয়িতা। বঙ্গবন্ধু তাঁর অসাধারণ ব্যক্তিত্বে মোহিত করে ভারতের এই কূটনীতিককে তাঁর জন্য একটা কাজ করার অনুরোধ করে বলেন যে, তাঁর চাওয়া যেন ভারতীয় সেনাবাহিনী মার্চেই বাংলাদেশ থেকে ফিরে যায়, এই বার্তা যেন ব্যানার্জি ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীকে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে মিটিংয়ে বসার আগেই জানিয়ে রাখেন। ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী হিথ প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, ভারতীয় সৈন্য ফিরে গেলেই বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেবেন। তখন ভারতীয় সেনাবাহিনী ফেরত যাওয়ার দিন ঠিক হয়েছিল জুনে, ৬ মাস পর।

দিল্লির পালাম বিমানবন্দরে (বর্তমানে ইন্দিরা গান্ধী ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট) ১০ জানুয়ারি সকালে বঙ্গবন্ধুকে স্বাগত জানাতে উপস্থিত ছিলেন ভারতের রাষ্ট্রপতি ভি ভি গিরি, প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী, বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুস সামাদ আজাদ। সেখানে এক সংক্ষিপ্ত ভাষণে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধে ভারতের সহযোগিতার জন্য তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন আর স্মরণ করেন তাঁর নিজের মানুষকে। ‘My people have traversed centuries. When I was taken away from my people, they wept, when I was held in captivity, they fought, and now when I go back to them, they are victorious.’ ইংরেজিতে সেই ভাষণ লিখেছিলেন বাংলাদেশের কূটনৈতিক ফারুক চৌধুরী। প্রধান প্রটোকল অফিসার হিসেবে তিনি আব্দুস সামাদ আজাদের সঙ্গে দিল্লিতে ছিলেন।

পালাম বিমানবন্দরে সংবর্ধনার পর বঙ্গবন্ধুর বৈঠক হয় ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে। রাজহংস বিমানে বঙ্গবন্ধুসহ সহযাত্রীদের মালামাল তুলে রাখা হয়। দুপুরে কলকাতা হয়ে বঙ্গবন্ধুর ঢাকা পৌঁছানোর সবকিছু প্রস্তুত। বৈঠক চলার সময় বাইরে ফারুক চৌধুরী কথা বলছেন ভারতের প্রধান প্রটোকল অফিসার মাহবুব খানের সঙ্গে। এমন সময় বৈঠকে মাহবুব খানের ডাক পড়। বের হয়ে মাহবুব খান বলেন যে সফরসূচি পুরোটাই বদল হয়েছে। বঙ্গবন্ধু যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বাংলাদেশে ফিরতে চান, কলকাতাবাসীর প্রতি তাঁর কৃতজ্ঞতার শেষ নেই এবং তিনি শিগগিরই কলকাতায় আনুষ্ঠানিকভাবে এসে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়ে যাবেন। আর ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী সম্মান করে তাঁর ফেরার জন্য যে বিমান দিয়েছেন, তা মাঝপথে ফিরিয়ে দিতে চান না, ব্রিটিশ বিমানেই তিনি ঢাকা পৌঁছাতে চান। মাহবুব খান ফারুক চৌধুরীকে বলেন যে, তিনি পালাম বিমানবন্দরকে জানাচ্ছেন সব ব্যবস্থা নিতে। আর ফারুক চৌধুরী যেন ব্রিটিশ কমেট জেটের ঢাকা বিমানবন্দরে অবতরণে কোনো সমস্যা হবে কি না, তা দেখেন। কারণ যুদ্ধে ঢাকা বিমানবন্দরের রানওয়ে বোমায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। ফারুক চৌধুরী তখন দিল্লির ব্রিটিশ হাইকমিশনারকে ফোন করে বিস্তারিত বলেন এবং হাইকমিশনার দ্রুত খোঁজ নিয়ে জানান যে ঢাকা বিমানবন্দরের রানওয়েতে ব্রিটিশ কমেট অবতরণে কোনো সমস্যা হবে না।

সেদিন দুপুরেই ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি ব্রিটিশ সিলভার কমেট বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে অবতরণ করে ঢাকা বিমানবন্দরে। লাখ লাখ জনতা জয়বাংলা স্লোগানে তাঁদের প্রিয় নেতাকে বরণ করে নেন।

যুদ্ধের পর বাংলাদেশের পাসপোর্ট পেতে অনেক সময় লেগেছিল ব্রিটেনে থাকা প্রবাসীদের। নতুন স্বাধীন হওয়া যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশে পাসপোর্ট দেওয়া নিশ্চয়ই প্রায়োরিটি ছিল না। যাদের তখন ব্রিটিশ পাসপোর্ট ছিল, তাদের যাওয়ার সুযোগ হয় ১৯৭২ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি থেকে যেদিন ব্রিটেন বাংলাদেশকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেয়। যদিও ভারতীয় সৈন্য প্রত্যাহার শেষ হয় ১৯৭২ সালের ১২ মার্চ। বাবার তখন পাকিস্তানের পাসপোর্ট ছিল। বাংলাদেশ হাইকমিশনের কাজ তখন শুরু হয়েছে অ্যাকশন কমিটির লন্ডনের ভবন থেকে যেটা পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশ সেন্টার হয়। সেখান থেকে ওনার পাকিস্তানি পাসপোর্টেই বাংলাদেশ সরকারের ইস্যুকৃত ধরে নেওয়ার এবং তিনি বাংলাদেশের নাগরিক বলে একটা স্ট্যাম্প দেওয়া হয়।

১৯৭২ সালের মার্চে কোনো কমার্শিয়াল ফ্লাইট বাংলাদেশে যায়নি। চার্টার্ড ফ্লাইটে করে মানুষ নিজের দেশে যাত্রা করেন ১৯৭২ সালের ২৭ মার্চ থেকে। সেই আনন্দের যাত্রার কথা বলার সময় তিনি (লেখকের বাবা) এখনো আবেগে আপ্লুত হন। আগে পিআইএ করে লন্ডন আসা–যাওয়া করতে হতো। করাচিতে নিয়ে সস্তা হোটেলে ফেলে রাখত, ঢাকার ফ্লাইট দিতে দিতে এক সপ্তাহও লাগত অনেক সময়। এবার আমস্টারডাম, দিল্লি হয়ে সরাসরি ঢাকা। যুদ্ধের পর নতুন দেশ দেখার আনন্দ।

দেশের নানা অনিয়মের কথা বললে তিনি বলেন, ‘স্বাধীনতার বড় বড় অর্জনের সঙ্গে অন্য কিছুর তুলনা করতে নেই, ৭ বিলিয়ন মানুষের এই পৃথিবীতে মাত্র ১৯০টি দেশের নিজের মানচিত্র আর পতাকা আছে। আমাদের গর্বের বাংলাদেশ তাদের মধ্যে একটি।’

সূত্র: https://www.nytimes.com/1972/01/09/archives/sheik-mujib-free-arrives-in-britain-yahya-is-arrested-bengali-chief.html
https://www.google.co.uk/amp/s/www.thefinancialexpress.com.bd/special-issues/bangabandhus-homecoming-day/the-day-sheikh-mujib-returns-1578582780%3famp=true
https://www.google.co.uk/amp/s/www.thedailystar.net/supplements/bangabandhus-homecoming-day/news/bangabandhu-arrives-delhi-1852045%3famp
Shashank Banerjee : Indian diplomat
India, Mujibur Rahman, Bangladesh Liberation & Pakistan a political treatise by Shashank Banerjee
https://www.thequint.com/voices/opinion/india-bangladesh-liberation-war-struggle-pakistan-mujibur-rahman-indira-gandhi-govt
https://www.google.co.uk/amp/s/en.prothomalo.com/amp/story/bangladesh/13-historic-hours-in-air
https://www.asianaffairs.in/mujib-and-britain-a-special-relationship/