রাগে–অনুরাগে

প্রতীকী ছবি

ফাল্গুনী কি আমাকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাবে? ও তো আমাকে সবকিছুতেই ব্লক করে রেখেছে। আর এক দিন পর আমার জন্মদিন। ফাল্গুনী কি আমার জন্মদিন মনে রেখেছে? বিশেষ দিনগুলোর কথা ওর সব সময় মনে থাকে। আমাদের প্রথম কথা বলার দিন, প্রথম মুখোমুখি দেখা করে দিন—সব ওর মনে থাকত। আমার জন্মদিন হয়তো ওর মনে থাকত, যদি ও আমার সঙ্গে থাকত।

ফাল্গুনী ও আমি থাকি আমেরিকার পাশাপাশি দুটি রাজ্যে। দূরত্ব মাত্র সাড়ে চার ঘণ্টা। কিন্তু বর্তমানে আমাদের দূরত্ব অসীম। আচ্ছা, আমরা কি কখনো মুদ্রার অন্য পিঠ দেখি? ফাল্গুনী কি জানে, আমি খুব কষ্ট পাচ্ছি ওকে এবং অনিরুদ্ধকে (ছদ্মনাম) ছাড়া? ও কি অনুভব করে, আমি ওদের জন্য কী পরিমাণ অস্থির হয়ে থাকি? একবার রাগ করে ও এক সপ্তাহ আমার সঙ্গে কথা বলেনি। এক সপ্তাহ পর ফাল্গুনী যখন ওর বুকের কাছে টেনে নিয়ে জিজ্ঞাসা করেছিল, আমি কষ্ট পেয়েছি কি না, তখন অনুভব করতে পেরেছিলাম, ভালোবাসা আসলে কী।

ফাল্গুনী আমাকে বলত, ও আমাকে আমার মা–বাবার পর সব থেকে ভালো বুঝতে পারে। ফাল্গুনী কি আজ অনুভব করতে পারে, আমি ভীষণ ভেঙে পড়েছি ওকে এবং অনিরুদ্ধকে ছাড়া। ফাল্গুনী কেন আমার কষ্ট অনুভব করবে? যখন ওর পাশে থাকার দরকার ছিল, তখন আমি নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম। যখন ওকে বেশি বেশি সময় দেওয়া প্রয়োজন ছিল, সে তখন আমাকে মোটেও কাছে পায়নি। অনিরুদ্ধকে যখন পিতৃস্নেহে বুকে আগলে রাখার প্রয়োজন ছিল, আমি ছিলাম তখন দূরে। ওর আমাকে ছেড়ে যাওয়াটা ছিল যুক্তিপূর্ণ। আমি আমার কথায়, কাজে ফাল্গুনীকে কষ্ট দিয়েছি, অনিরুদ্ধকে কষ্ট দিয়েছি।

মানুষ কত দিন বাঁচে এ পৃথিবীতে? এই স্বল্প সময়ে আমরা কেন ভালোবাসার মানুষকে এত কষ্ট দিই? আমরা কেন ভালোবাসার মানুষটার আরও বেশি যত্ন নিই না? কেন আমরা ভালোবাসার মানুষটাকে সব সময়ই বলি না, ‘আমি তোমাকে অনেক বেশি ভালোবাসি, তোমাকে দেখতে না পারলে আমি খুব বেশি অস্থির হয়ে যাই’। শুধু মনে মনে ভালোবাসলে হয় না, ভালোবাসাটা মনের মানুষের কাছে প্রকাশও করতে হয়। প্রতিটি সম্পর্ক হচ্ছে একটা চারা গাছের মতো। প্রতিদিন, প্রতি মুহূর্ত এর যত্ন নিতে হয়।

তা না হলে সম্পর্ক নষ্ট হয়ে যায়। আমি অনুভব করি, আমার ওপর ফাল্গুনীর প্রচণ্ড অভিমান, রাগ। আবার এটাও অনুভব করি, ফাল্গুনী এখনো আমাকে ভালোবাসে।
ফাল্গুনীকে আমি মাঝেমধ্যে পরি বলে ডাকতাম। ও হচ্ছে পরির মতো সুন্দর! মাঝেমধ্যে রাতে ঘুম ভেঙে গেলে আমি তাকিয়ে দেখতাম, আমার সুন্দর লক্ষ্মী পরিটাকে। ও কি ব্যাপারটা কোনো দিন জানবে? ফাল্গুনী যখন আমাকে বকা দিত, তখন একটা ভালোবাসা জড়িয়ে থাকত সেই বকায়। ও সব সময় চিন্তা করত আমাকে নিয়ে। আমি কি পোশাক পরলে আমাকে ভালো লাগবে, আমি ঠিকমতো খেয়েছি কি না, আমি ঠিকমতো পড়ছি কি না—সবকিছুতেই ওর দৃষ্টি। ফাল্গুনী কখনো আমার কাছে কোনো দিন অর্থ-সম্পদ চায়নি। চেয়েছিল ওকে আর অনিরুদ্ধকে ভালোবাসা দিয়ে জড়িয়ে রাখি। এ কাজটাই আমি করিনি।

আমরা কত ভালোবাসার মানুষকে ফিরে পাওয়ার গল্প শুনি, নাটক দেখি! বাস্তবে কি আসলেই ভালোবাসার মানুষ ফিরে আসে? ভুল ক্ষমা করে দিয়ে কাছে টেনে নেয়? যাঁদের ভালোবাসার মানুষ ফিরে আসে, তাঁরা খুবই ভাগ্যবান। ফাল্গুনী ও অনিরুদ্ধ কি আমাকে ক্ষমা করে আবার মন থেকে কাছে টেনে নেবে? এ প্রশ্নের উত্তর আমার জানা নেই। যদি কাছে টেনে নেয়, তাহলে দুজনকে জড়িয়ে ধরে বলব, আমার সব ভুলের জন্য আমি ক্ষমা চাই। আমার সব ভালোবাসা তোমাদের দুজনের জন্য। পৃথিবীর সবকিছুর বিনিময়ে আমি তোমাদের চাই। তোমাদের ছেড়ে আমি আর একটা মুহূর্তও থাকব না। ফাল্গুনী ও অনিরুদ্ধ কি আমাকে ফিরিয়ে নেবে ওদের জীবনে?
*লেখক: সঞ্জয় মজুমদার, আমেরিকা, গ্র্যাজুয়েট শিক্ষার্থী, শব্দবিজ্ঞান, পেনসিলভানিয়া স্টেট ইউনিভার্সিটি