লকডাউনে আমাদের ভারতীয় ঈদ

ফিলিস্তিন, ইয়েমেন, তাজিকিস্তান, তুর্কমিনিস্তান, আফগানিস্তানের বন্ধুদের সঙ্গে সেলফি

ভারত বললেই খুব কাছের প্রতিবেশী দেশ মনে হলেও আমরা থাকি গতানুগতিক সে দেশের ভাষা, সংস্কৃতিসহ সবকিছু থেকে অনেক দূরে—দক্ষিণ ভারতের তেলেঙ্গানা রাজ্যের রাজধানী হায়দরাবাদে। হায়দরাবাদ ভারতের অন্যতম প্রাচীন একটি শহর।

এখানেই রয়েছে ভারতের সপ্তম পুরোনো ঐতিহাসিক ওসমানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, যে বিশ্ববিদ্যালয়ে আমিসহ ছয়জন বাংলাদেশি পড়াশোনা করছি ছয়টি ভিন্ন বিভাগে। আমরাসহ আমাদের আন্তর্জাতিক হোস্টেলে রয়েছেন আরও ১৯টি ভিন্ন দেশের শিক্ষার্থী।

গত বৃহস্পতিবার রাতে সব বাংলাদেশিকে নিয়ে আমার রুমে বসেছিল মিটিং। কীভাবে ঈদকে করে তোলা যায় রঙিন, আনন্দময়। মিটিংয়ের আলোচনার মূল বিষয় ছিল ঈদের (শুক্রবার) দিন কী কী করা যায়। যেহেতু করোনার কারণে হায়দরাবাদে লকডাউন চলছে, তাই বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই। সবকিছু করতে হবে হোস্টেলেই।

হোস্টেলের ছাদে শিক্ষার্থীদের ঈদের নামাজ

সব শেষে সিদ্ধান্ত হলো মজাদার রান্নাবান্নার আয়োজন করে সবাই একসঙ্গে উদ্‌যাপন করব পবিত্র ঈদুল ফিতর। যেহেতু আমাদের দলে অন্য ধর্মের দুই শিক্ষার্থী আছেন, তাই মুরগির বিভিন্ন পদই আমাদের একমাত্র ভরসা। এবার খরচের পালা। একেকজন একেকটা ভাগ করে নিলাম। হাফিজ বলল, সে মুরগি কিনে দেবে, আমি আর সাইদ দিলাম খিচুড়ির জন্য বাসমতী চাল, মারুফ দিল পেঁয়াজ–মসলা, রান্না হবে মলয় দাসের রুমে। কোল্ড ড্রিংকস আর সালাদের ব্যবস্থা করাসহ রান্না করার ভার পড়ল এন্থনি নিকোলাসের ওপর।

ফিলিস্তিনে ইসরায়েলের বোমা হামলা চলছে। দীর্ঘ হচ্ছে লাশের সারি। অনেকেই হারাচ্ছেন স্বজন। এরপরও ফিলিস্তিনের বন্ধুদের দেখে বোঝার উপায় নেই যে দেশটিতে কী চলছে

ঘুমাতে ঘুমাতে অনেক রাত হলেও উঠতে হলো একদম কাকডাকা ভোরে। কারণ হোস্টেলের ছাদে আমাদের ঈদের জামাত সকাল সাড়ে ছয়টায়। আমি কোনো রকমে ঘুম থেকে উঠে গোসল করে ঈদের নামাজ ধরলাম। সামাজিক দূরত্ব মেনে জামাতের সঙ্গে নামাজ পড়লেও শেষে কোলাকুলি আর ফটোসেশনে সেই দূরত্ব আর রইল না। সে ক্ষেত্রে সমস্যা খুব একটা হওয়ার কথা না, কারণ আমরা সবাই এক হলেরই বাসিন্দা।

ফিলিস্তিনি বন্ধুদের সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা জানানোর সময় জানতে চাইলাম তাদের পরিবারের খবর সবাই হাসিমুখে আলহামদুলিল্লাহ বললেও তাদের কণ্ঠে দেশ নিয়ে উদ্বিগ্নতা প্রকাশ পেয়েই গেল। সিরিয়ার বন্ধু হাল্লাক অনেকটা জোর জবরদস্তি করেই তার রুমে নিয়ে ফিরনি আর তরমুজ খাওয়াল। এদিকে মলয়ের রুমে চলছে আমাদের রান্নাবান্নার আয়োজন। তবে খুব বেশি কিছু নয়। রান্নার আইটেমে ছিল মুরগির মাংস, বেগুন ভাজা, মুগ ডাল ও বাসমতী চাল দিয়ে ভুনা খিচুড়ি আর সঙ্গে সালাদ এবং কোমল পানীয়। যদিও সবাই মনে মনে সেমাই মিস করেছি। সেই সঙ্গে মিস করেছি দেশের বন্ধু, একসঙ্গে ঘুরতে যাওয়া এবং পরিবার-পরিজনদের।

রান্নাবান্না শেষ হতে হতে তখন প্রায় দুপুর ১২টা বেজে গেছে। রান্না শেষ হতেই প্লেট নিয়ে বসে গেলাম। হাসিঠাট্টার ছলে পরিমাণের থেকে বেশি খেয়ে ফেলেছি, তবে এর জন্য দায়ী অবশ্যই এন্থনি, কারণ সে একটু বেশিই ভালো রান্না করে।

নামাজ শেষে চলছে খাওয়াদাওয়া

সবাইকে ধন্যবাদ দিয়ে রুমে এসে দেশের বন্ধুদের সঙ্গে ভিডিওতে কথা বলা শুরু করলাম। আর যা–ই হোক, দেশের বন্ধু, আপনজনদের মুখটা না দেখলে তো আর ঈদের আনন্দ অপূর্ণ থেকে যায়।

*লেখক: মো. সাব্বির, ছাত্র, ওসমানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, হায়দরাবাদ, ভারত