লন্ডনের মামাকাহিনি

লন্ডনে ঝলমলে রাতছবি: লেখক

রতন মামা আমার চেয়ে দুই বছরের বড় হলেও আমি কখনোই বড় বলে পাত্তা দিতাম না। সে গ্রামের স্কুল থেকে এসএসসি পাস করে ইন্টারমিডিয়েট পড়তে সিলেটের এমসি কলেজে ভর্তি হয়। হোস্টেলে সিট পাওয়া পর্যন্ত আমাদের বাসায় থাকে আর আমি তখন তার গ্রাম থেকে শহুরে হয়ে উঠার গাইড।

আমি তখন ক্লাস নাইনে পড়ি, বেশ বড় হয়ে গিয়েছি এ রকম ভাব নিয়ে চলি। আব্বার সঙ্গে গিয়ে শপিংয়ের বদলে নিজের কাপড় জুতা এখন বন্ধুদের সঙ্গে গিয়ে শপিং করি। রতন মামা এক দুপুরে বলল, ‘তোর প্যান্ট কোন দরজির কাছ থেকে বানাস, আমায় নিয়ে চল।’

মামাকে নিয়ে জিন্দাবাজার গেলাম, প্যান্টের কাপড় কেনার দোকানে, মামার কোনো প্যান্ট পিসই পছন্দ হয় না। অনেক দেখার পর আমায় কানে কানে বলল, ‘তোর প্যান্টের মতো কোনো কাপড়ই নাই এই দোকানে।’ আমার জিনসের প্যান্ট পরা! দোকানিকে পছন্দ হয়নি বলে চলে এলাম। মামাকে বললাম, ‘জিনসের প্যান্ট তো কাপড় কিনে বানাতে হয় না, চলো তোমাকে আহমদ ম্যানসনের জিনসের দোকানে নিয়ে যাই। আগে বলবে তো!’ রতন মামা বলল, ‘মাপ নিয়ে না বানালে এত টাইট ফিটিংস হয় কীভাবে। আমি কখনো জিনসের প্যান্ট পরেছি নাকি।’

রতন মামার বাবা আমার মায়ের চাচা, নানার গ্রামে বেশ প্রভাব–প্রতিপত্তি। রতন মামা বড় ছেলে, শহরে পড়তে পাঠিয়েছেন ও মামাকে ভালোই হাতখরচের টাকা দেন বলে মনে হয়। দুটি জিনস ট্রায়াল দিয়ে কিনে আমাকেও একটা কেনার জন্য বলল, ভদ্রতা করে ওই দিন না কিনলেও অনেক বছর পর মামাকে নিয়ে অক্সফোর্ড স্ট্রিটে শপিং করার পর এই অফারে না করিনি। সে গল্পে পরে আসছি।

দ্বিতীয় জিনস ট্রায়াল দিয়ে মামা দাম দিয়ে কিনে বের হলো। নতুন টাইট ফিটিংসের জিনস পরে হাঁটতে মনে হয় কষ্ট হচ্ছিল, অদ্ভুতভাবে হাঁটছে দেখলাম। বলল, ‘নতুন সে জন্য এমন হচ্ছে, একবার ধুলে সব ঠিক হয়ে যাবে।’

আমাকে নিয়ে পঞ্চখানা হোটেলে ঢুকল তার খিদে পেয়েছে বলে। সেই আমার প্রথম সিলেটের কোনো হোটেলে খাওয়া। বাসার বাইরে নাশতা করার কথা তখন চিন্তাও করতে পারতাম না আর রিকশাভাড়া ছাড়া পকেটেও কোনো টাকা থাকত না। বন্ধুরা মিলে হোটেলে শিক কাবাব খেতে যাওয়ার শুরু ইন্টারে পড়ার সময়। মামাকে দেখলাম বাইরে খাওয়ার ব্যাপারে ওস্তাদ।

ক্লাস শুরুর পর মামা হোস্টেলে চলে গেলেও মাঝেমধ্যে বাসায় আসত, আমি যখন ইন্টারে এমসি কলেজে, মামা তখন শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতিতে। তত দিনে তার বেশ কয়েকজন বন্ধু হয়েছে, ব্যস্ত থাকে। মাঝেমধ্যে এমসি কলেজে দেখি, তার ইন্টারের বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দেয়, যারা তখন এমসিতে অনার্স পড়ছে। মামা আর আগের মামা নেই, বেশ স্মার্ট। বোঝা যায়, বন্ধুদের আড্ডায় সে–ই মধ্যমণি। আমাকে দেখলেই তার খিদে পায় আর আমার ক্লাস না থাকলে গন্তব্য হয় কলেজের ক্যানটিন।
একদিন কলেজ থেকে এসে দুপুরে দেখি বাসায় নানা এসেছেন, খবর দিয়ে মামাকে এনেছেন। আব্বার সঙ্গে নানা আলোচনা করছেন। গুরুগম্ভীর আলোচনা, বোঝা যায় ছোটদের থাকতে নেই।

আমার ঘরে এসে দেখি মামা চুপটি করে বসে আছে। নির্ঘাত নারীঘটিত কোনো ব্যাপার। তার এমসি কলেজের আড্ডায় বন্ধুদের মধ্যে কয়েকজন সুন্দরীকেও যে দেখেছি!
যা জানলাম, শুনে তো আমি অবাক। মামা পুলিশের এসআই পদের জন্য আবেদন করেছিল তার বিশ্ববিদ্যালয়ের রুমমেটের সঙ্গে। রুমমেট লিখিত পরীক্ষায় না টিকলেও মামা পাস করেছে আর পরবর্তী পরীক্ষার জন্য সিলেট পুলিশ লাইনসে তাকে ডেকেছে। আমি বললাম, সেটা তো ভালো। কিন্তু নানাকে দেখলাম বেশ রেগে আছেন। বললেন, মামা নানাকে আগে কিছু বলেনি, কিন্তু পরীক্ষার চিঠি তার বাড়িতে যাওয়ায় নানা চিঠি পড়ে জেনে ফেলেছেন।

সিলেটে মামার সঙ্গে অনেক সময়ই কাটিয়েছেন লেখক
ছবি: লেখক

খাবার টেবিলেও দেখলাম নানা বেশ রেগে আছেন। বারবার বলছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের লেখাপড়া শেষ না করে পুলিশে ঢোকার বুদ্ধি মামাকে কে দিল, তা–ও আর্মিতে গেলে একটা কথা, গ্রামে উনার সম্মান বাড়ত। মামা মিনমিন করে কিছু বলতে গেলেই নানার ধমক খায়। শেষে আব্বা নানাকে বুঝিয়ে শান্ত করলেন যে এখনো সিলেক্ট হয়নি, আর এসআই পদ তো পুলিশের অফিসার পদ। নানা যাওয়ার আগে বলে গেলেন, মামার লেখাপড়ার খরচ উনি আর দেবেন না। মামাকে দেখলাম তেমন চিন্তিত না। যদিও আমার হোটেলে শিক কাবাব খাওয়া বন্ধ হয়ে যাবে ভেবে হতাশ হলাম।

দুই সপ্তাহ পর মামার সঙ্গে দেখা। জিজ্ঞাস করলাম পুলিশের পরীক্ষা কেমন হলো। বলল, ‘আর বলিস না। ডিসেম্বরের শীতে গিয়েছি পরীক্ষা দিতে, যেতেই হাফ প্যান্ট আর স্যান্ডো গেঞ্জি পরে সবাইকে লাইনে দাঁড়াতে বলল। আমি তো শীতে কাঁপছি। তারপর মাঠে সাতবার দৌড়াতে বলেছে। সেখানেই শেষ না, একটু পরে বলে পুকুরে সাঁতার কাটতে। আমি তা দেখে বাথরুমের কথা বলে পালিয়ে এসেছি। আব্বা ঠিক বলেছেন, আমি অর্থনীতির অধ্যাপক হব। পুলিশের চাকরিতে আমার পোষাবে না।’ বুঝলাম, নানার পাঠানো টাকায় মামার আয়েশি জীবনের মায়া ত্যাগ সহজ নয়।

কলেজের ক্যানটিনে টিটি টেবিল ছিল। আমার তখন টিটি খেলার নেশা, ক্লাসের ফাঁকে বা ক্লাস ফাঁকি দিয়ে। মাঝেমধ্যে খেলার মাঝখানে ক্যানটিনের ছেলে এসে কয়েকটি শিঙাড়া রেখে যেত অর্ডার না করলেও। জিজ্ঞাস করলে দূরে রতন মামার বন্ধুদের টেবিল দেখাত। তার মধ্যে এক সুন্দরী আমার দিকে তাকিয়ে হাসছে। আমরা বন্ধুরা অনেক দিনই আগে অর্ডার না দিয়ে অপেক্ষা করতাম ফ্রি শিঙাড়ার জন্য।

সময়টা নব্বই দশকের মাঝামাঝি। এমসি কলেজ রাজনীতিতে সব সময় সরব। মিছিল–মিটিং লেগেই থাকে। একদিন দুপুরে ক্যানটিনে ছিলাম, তখন গোলাগুলি শুরু হয়, ক্যানটিনের পাশেই ছাত্র সংসদ থেকে ঘটনার শুরু, দরজার ফাঁক থেকে মোটরসাইকেলে আগুন লাগিয়ে পুকুরে ফেলে দিতে দেখলাম। বুঝলাম, ক্যানটিনে থাকা আর নিরাপদ না। এমসি কলেজের ক্যানটিন পুকুরের এক পাশে বাংলো টাইপ একটি টিনের ঘর, অন্য কোনো বিল্ডিংয়ের সঙ্গে যুক্ত না। ক্যানটিন থেকে পাশের কেমেস্ট্রি বিল্ডিং অনেক দূর, গোলাগুলির মধ্যে ওদিকে যাব কি না ভাবছি। হঠাৎ হাত ধরে টান দিয়ে একজন বললেন, ‘ভাগনে দৌড়াও।’

একবার শুধু দেখলাম রতন মামার বন্ধু, আর দেরি না করে পেছনের দরজা দিয়ে টিলার ওপরের দিকে তাঁর সঙ্গে দৌড় দিলাম। অনেকক্ষণ দৌড়ানোর পর কলেজ ক্যাম্পাসের বাইরে নিরাপদ জায়গায় নিজেকে আবিষ্কার করলাম। সময় হিসাবে হয়তো তিন–চার মিনিট ছিল, কিন্তু জীবনে এত মৃত্যুভয় আর কখনো পাইনি। তখন মোবাইল ফোন ছিল না, পরের দিন কলেজে গিয়ে জেনেছিলাম, আমরা পালানোর পরপরই ছাত্র সংসদের কেউ কেউ ক্যানটিনে পালিয়ে আসায় ক্যানটিনে মারামারি শুরু হয়। যাকে পেয়েছে তাকেই হকিস্টিক দিয়ে পিটিয়েছে। আমার বন্ধুরা যারা তখন দৌড়ে আমাদের সঙ্গে পালায়নি, তাদেরও পিটিয়েছে। রাজনীতি দূরের কথা, তারা জীবনে কখনো একটা মিছিলেও যায়নি। যুক্তিহীন আর নীতিহীন কাজের নামই হয়তো রাজনীতি।

ইন্টার শেষে আমি রংপুর মেডিকেলে পড়তে গেলে মামার সঙ্গে খুব বেশি দেখা হয়নি। পরে মোবাইলে কয়েকবার কথা হয়েছে। ইন্টার্নশিপের সময় একদিন ফোন দিয়ে বলল, মাস্টার্স করতে ইংল্যান্ড চলে যাবে। জিজ্ঞাস করলাম, ‘নানাকে বলেছ তো।’ হেসে বলল, ‘উনিই টাকা দিচ্ছেন।’

পরের বছর আমি ইংল্যান্ডে এলেও তার সঙ্গে দেখা হয় দুই বছর পর, মামা তখন সাউদাম্পটনে চাকরি করে। মাস্টার্স শেষে রিনিউয়েবল এনার্জি নিয়ে কাজ করে। আমাকে বলল শনিবারে লন্ডন আসবে, রাতে তার সঙ্গে যেতে হবে এক জায়গায়।
শনিবারে লন্ডনে আসার পর ঘটনা পরিষ্কার হলো। রাতে কনে দেখতে যেতে হবে। অবশ্য সেটা কনে দেখা না বলে কনের পরিবারের বরকে দেখা বলা ভালো। মাস্টার্স শেষে মামার দুই বছরের ভিসা শেষ হয়ে যাবে কয়েক মাসের মধ্যে, তাই একটা বিয়ে করলে সব সমস্যার সমাধান।

সকালে এসেই বলল, ‘চল অক্সফোর্ড স্ট্রিট যাব।’ বললাম, ‘জিনস সেলাই করতে দেবে নাকি!’ বলল, ‘বুঝলি না লন্ডনি মেয়েদের দেখতে ফর্মাল শার্ট পরে গেলে হবে না, ব্র্যান্ডের টি–শার্ট কিনতে হবে আর একজোড়া নতুন জুতা। মেয়েরা সবচেয়ে গুরুত্ব দেয় ছেলের জুতার দিকে। প্রয়াত ইরফান খানের “নেমসেক” মুভি দেখিসনি?’ বলতে ভুলে গেছি, মামা খুব সিনেমা দেখত। সিলেটে প্রথম আসার পর থেকেই প্রতি মাসে হলে গিয়ে বাংলা সিনেমা দেখে আসত। এখন দেখছি শুধু বাংলা না, বৈশ্বিক সিনেমা থেকেও সে জাগতিক জ্ঞান আহরণ করে।

অক্সফোর্ড স্ট্রিটের বিভিন্ন দোকান ঘুরে কেনাকাটা চলল। টি–শার্ট পরলে কনে হাতের ঘড়ি দেখবে, যদিও তার হাতে ভালো ঘড়ি আছে, তারপরও একটা নতুন আরমানি ঘড়ি কিনল। প্রতিটি জিনিসই কেনার সময় আমার জন্য আরেকটা কেনার তাগাদা দেয়। আমি বললাম, ‘আমি তো কনে দেখতে যাচ্ছি না’, তারপরও আমার জন্য একটা পোলো টি-শার্ট কিনিয়ে ছাড়ল। শপিং শেষে যথারীতি মামার খিদে লাগল। বললাম, ‘চলো ম্যাকডোনাল্ডসে যাই, এখানে তো কোনো হালাল অপশন পাবে না।’ ঘাসভুস সে খাবে না। বলল, ‘চল ব্রিকলেনে গিয়ে বাংলাদেশি খাবার খাব।’ বললাম, ‘রাতে তো দেশি খাবার খাবই। কনে দেখতে যাচ্ছি, নিশ্চয়ই খাবারের আয়োজন থাকবে।’ বলল, ‘সেটা তো তুই খেতে পারবি, আমাকে তো খুব হিসাব করে খেতে হবে, নইলে খাদক ছেলের কাছে কি মেয়ে দেবে ওরা।’

লন্ডনে সামারের দীর্ঘদিনের সময় তখন। সন্ধ্যা সাতটায় আমাদের যাওয়ার কথা। মামা অনেক আগেই রেডি। চুলে জেল দিয়ে পেছনে ব্রাশ করেছে। বিলেতের মেয়েরা নাকি চুলে জেল দেওয়া ছেলে পছন্দ করে।

ঠিকানা বেশ দূরে না। মিনিট দশেকের হাঁটাপথ। কিন্তু তবু গাড়ি নিয়ে বের হলো। বললাম, ‘পার্কিং খুঁজতেই তো ১০ মিনিট লাগবে, হেঁটে গেলেই হতো।’ বলল, ‘কী যে বলিস, নতুন জামাই কি হেঁটে যাবে নাকি। তাহলে কি মেয়ে দেবে?’ পথে মিষ্টি কিনে আমরা ঠিক সময়েই হাজির হলাম। এত ঠিক সময় যে নানার পরিচিত যে লোক আলাপ এনেছেন, তিনিই তখনো হাজির হননি।

লন্ডনে মামা–ভাগনে পাত্রী দেখতেও গিয়েছিলেন
ছবি: লেখক

কনের বাবা লিভিংরুমে আমাদের সঙ্গে আলাপ করছেন। বিভিন্ন আলাপের পর জানতে চাইলেন মামা কী করেন সাউদাম্পটনে। মামা রিনিউয়েবল এনার্জির ওপর তার কাজের ধরন বোঝানোর চেষ্টা করল কিছুক্ষণ। ভদ্রলোক কিছু বুঝছেন বলে মনে হলো না। একটু আগে যখন মেয়ের ইউনিভার্সিটি গ্র্যাজুয়েশনের পর বড় চাকরির কথা বলেছিলেন, আমি কৌতূহলবশত জিজ্ঞাস করেছিলাম কোন বিষয়ের গ্র্যাজুয়েট। উত্তর তো পেলামই না, ভদ্রলোক এমন দৃষ্টি দিলেন যে বড় চাকরির পর আর কী প্রশ্ন থাকতে পারে। আমি তাই মামাকে উদ্ধার করতে বললাম, মামা পোস্ট গ্র্যাজুয়েশন করে সাউদাম্পটনে বড় অফিসে চাকরি করে। ভদ্রলোক বললেন, ‘খুব ভালো, অফিসের চাকরিতেই আরাম।’ এর মধ্যে ঘটক সাহেব চলে আসায় রক্ষা। খাবারের বিরাট আয়োজন। মামাও দেখলাম মজা করে খাচ্ছে। এত মজার মজার খাবার দেখে হয়তো ভুলে গেছে কনে দেখতে এসেছে। কনের সঙ্গেও মামার একান্ত আলাপ হয়েছে। তখনো জানতে পারিনি কী আলাপ হলো।

পরের দিন জানলাম, মামাকে তাঁদের পছন্দ হয়েছে। তবে কনের বাবার মনে হয়েছে মামা খুবই বুদ্ধিমান। এত বুদ্ধিমান ছেলের কাছে মেয়ে দিতে ভয় পাচ্ছেন, পরে সিটিজেনশিপ হয়ে গেলে বিয়ে না–ও টিকতে পারে। তাই মেয়ের নামে ১০ হাজার পাউন্ড ব্যাংকে রাখতে হবে। মামাকে দেখলাম তেমন চিন্তিত না। ঘটককে বলল, দেশে নানাকে ব্যাপারটা জানাতে। জিজ্ঞাস করলাম, ‘তোমার কী পছন্দ হয়েছে কনে।’ বলল, ‘আরে ধুর। টাকা দিয়ে বিয়ে করব নাকি। আব্বাকে ঠান্ডা করার জন্য গিয়েছিলাম। আমি দেশে চলে যাচ্ছি সামনের মাসে।’ অনলাইনে করা টিকিট দেখাল আমাকে। বলল, নানাকে রাগাতে চায়নি, তাই এই কনে দেখার ব্যাপারে না করেনি। টাকা চেয়ে ভদ্রলোক মামার উপকারই করেছেন।

মামা দেশে গিয়ে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে জয়েন করে। আমি ইংল্যান্ডে থাকায় বিয়ের দাওয়াত আর কার্ড পাই ভাইবারে। ফেসবুকে তার সুখী জীবনের ছবিতে মাঝেমধ্যে কমেন্ট করি। মামির ছবি খুব চেনা চেনা লাগে। কিন্তু কোথায় দেখেছি মনে করতে পারি না। সব পরিষ্কার হয় যখন দেশে গিয়ে তার বাসায় গেলাম তখন। মামি আমাদের কলেজের ক্যানটিনের সেই মেঘ না চাইতে বৃষ্টির মতো শিঙাড়া পাঠানো সুন্দরী, যার টানে মামা শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমসি কলেজে প্রায়ই আসত। আমি মামিকে বলি, মামার কনে দেখার কাহিনি। নতুন জামা, জুতা, ঘড়ি পরে, চুলে জেল লাগিয়ে বাবু সেজে মামা গিয়েছিল। মামি বলেন, মামা এসব পরেই নানাকে নিয়ে তাঁদের বাড়িতে গিয়েছিল। বললাম, ‘কাজ হয় তাহলে, দুই কনেই মামাকে পছন্দ করেছিল।’ মামা শুধু মুচকি হাসে, বুদ্ধিমানেরা কথা হয়তো কম বলে।
*কেন্ট, ইউ কে