লিডসে হচ্ছে রাধারমণ উৎসব

ইংল্যান্ডের লিডস–ভিত্তিক রাধারমণ লোক উৎসবের ১০ বছরপূর্তিতে বর্ণাঢ্য আয়োজন এবার অনুষ্ঠিত হবে ভার্চ্যুয়াল প্ল্যাটফর্মে। ২৭, ২৮ ও ২৯ নভেম্বর রাধারমণ সোসাইটির ভার্চ্যুয়াল প্ল্যাটফর্ম থেকে ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম এবং ইউটিউব লাইভের মাধ্যমে সম্প্রচারিত হচ্ছে। তিন দিনব্যাপী এ উৎসবে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে অংশ নিচ্ছেন বিশ্ববরেণ্য শিল্পী, মন্ত্রী, সাংসদ, বুদ্ধিজীবীরা। ভারত থেকে ভজনসম্রাট অনুপ জালটা, বেনারস ঘরানার শীর্ষ তবলাবাদক পণ্ডিত কুমার বোস, প্রখ্যাত ভায়োলিনবাদক কালা রমনাথ, পার্বতী দাস বাউল প্রমুখ। প্রতিদিন ১২ ঘণ্টার বেশি সময় ধরে চলছে অনুষ্ঠানমালার লাইভ সম্প্রচার।

বর্ষিয়ান ব্রিটিশ সাংসদ শ্যাডো মিনিস্টার ফর পিস অ্যান্ড ডিজারমামেন্ট ফ্যাবিয়ান হ্যামিলটন এক শুভেচ্ছাবার্তায় বলেন, ‘এই উৎসব কোভিডের সময় সারা বিশ্বের সংস্কৃতিপ্রেমী দর্শকদের জন্য সর্বশ্রেষ্ঠ উপহার। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের শীর্ষস্থানীয় সব শিল্পীদের বিরল সব পরিবেশনা, কথা ও নৃত্য উপভোগ করার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি।’

গতকাল শুক্রবার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সম্মানিত প্যানেলিস্টদের মধ্যে ছিলেন লিডসের স্থানীয় তিনজন পার্লামেন্ট সদস্য ফ্যাবিয়ান হ্যামিলটন, রিচার্ড বারগন ও অ্যালেক্স শোবেল। এ ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন ক্যায়ম্যান আইল্যান্ডের সাবেক গভর্নর, বাংলাদেশে সাবেক ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূত আনোয়ার চৌধুরী। এতে আলোচক ছিলেন বাংলাদেশ সরকারের পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান, সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ, সাংসদ মুহিবুর রহমান, নেহরু সেন্টারের পরিচালক অমিশ ত্রিপাঠি, কাউন্সিলর আসগার খান, সাউথ এশিয়ান আর্টসের নির্বাহী প্রধান কিরঞ্জিত কর।

প্রথম দিনের অনুষ্ঠানে আরও থাকছে বিশ্বখ্যাত ভায়োলিনবাদক বিদুষী কালা রমনাথের ভায়োলিন সেশন, লোকনৃত্যশিল্পী সোনিয়া সুলতানা, সোহেল আহমেদ, নিলাঞ্জনা জুই ও ইন্দ্রানী ঘোষ সেনের পরিবেশনায় বিভিন্ন বর্গের লোকনৃত্য।

প্রথম দিনে শান্তিনিকেতনের রাজু দাস বাউলের সঙ্গে ছিল প্রখ্যাত স্কটিশ সংগীতশিল্পী সাইমন থাকার, শুবার্ট গায়ক এরিক শিলিন্ডারের কবিতা পাঠের সঙ্গে থাকছে মরোক্বান নাঈ এবং অউদবাদক হাসান রাজির বিশেষ পরিবেশনা। থাকছে কানাডিয়ান বংশোদ্ভূত গ্রিক-লেবানিজ সংগীতশিল্পী লারা ইদির একক আয়োজন এবং পরবর্তী সময়ে ব্রিটিশ সময় রাত দুইটা পর্যন্ত চলবে তরুণ শিল্পী লাবনি বড়ুয়া ও জেসি বড়ুয়া।
দ্বিতীয় দিনে অনুষ্ঠানে প্যানেল আলোচনায় রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য প্রখ্যাত লেখক পবিত্র সরকার, আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য সাহিত্যতাত্ত্বিক তপোধীর ভট্রাচার্য, গৌড়বনঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য গোপা দত্ত ভৌমিক, কালাসঙ্গমের প্রতিষ্ঠাতা গীতা উপাধ্যায় প্রমুখ ছিলেন।

রাধারমণ উৎসবে নৃত্য পরিবেশনা
ছবি: সংগৃহীত

ভজনসম্রাট অনুপ জালটা, বাংলাদেশের সাবেক সংস্কৃতিমন্ত্রী অভিনেতা আসাদুজ্জামান নূর, সংগীতশিল্পী বাপ্পা মজুমদার, অভিনেত্রী ও নৃত্যশিল্পী সাদিয়া ইসলাম মৌ, অপি করিম, তান্না খান, ফারহানা চৌধুরী, শ্রীতমা রায়ের বিভিন্ন পরিবেশনা ছিল দ্বিতীয় দিনে।

ইরানিয়ান তাম্বুরা ও সেতারের পরিবেশনা নিয়ে মেধাবী পার্শিয়ান সংগীতশিল্পী নিকনাজ মিরঘালামিনের সঙ্গে ছিল কবি সোমা ঘোষের আবৃত্তি। দ্বিতীয় দিনের শেষ পরিবেশনায় ছিলেন সব্যসাচী শিল্পী সঞ্জয় দে, উপশাস্ত্রীয় শিল্পী সুমনা বসু এবং সবশেষে সুফি আমির মোহাম্মদের আধ্যাত্মিক গান।

উৎসবের সমাপনী দিনের প্যানেল আলোচনায় আছেন বাংলাদেশ কর্ম কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যন মোহাম্মদ সাদিক, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সাদেকুল আরেফিন এবং বাংলা একাডেমির সাবেক মহাপরিচালক ও প্রখ্যাত লোকগবেষক শামসুজ্জামান খান। ভারতীয় মার্গসংগীত নিয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনায় অংশ নেবেন বিশ্ববরেণ্য তবলাবাদক কুমার বোস।

রোববারের অন্যান্য পরিবেশনায় থাকছেন পার্বতী দাস বাউল, ব্রিটিশ সব্যসাচী শিল্পী গৌরি চৌধুরী, চ্যানেল আই তারকা আশিক, পার্শিয়ান নৃত্যশিল্পী নিলুফার লিলি, মেধাবী সব্যসাচী শিল্পী অমিত দে, আবৃত্তিকার পপি শাহনাজ, অরুন্ধতি মুখার্জি এবং শিশু শিল্পী তানিশা চৌধুরি ও আনভিতা গুপ্তু।

উৎসবের পরিচালক টি এম আহমেদ কায়সার বলেন, ‘১০ বছরেই রাধারমণ উৎসব ইংল্যান্ডের অন্যতম প্রধান একটি উৎসবে পরিণত হয়েছে। এর কারণ এর পেছনের অভিনব ধারণা। ইয়র্কশারডেলসের নয়ানাভিরাম লেক আর অরণ্যে একদিকে যেমন বারবিকিউ করতে করতে গান, কবিতা–নেটওয়ার্কিং চলেছে, তেমনি লোকালয় থেকে দূরে স্কামন্ডেন সেন্টারে রাতব্যাপী অনুষ্ঠানমালা দর্শকদের স্মরণীয় অভিজ্ঞতার অংশে পরিণত হয়েছে। প্রতিবছরই বিভিন্ন ভাষা–সংস্কৃতির শিল্পী এবং দর্শকদের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে। সারা রাত–সারা দিনব্যাপী মানুষে মানুষে এমন মিলনমেলা খুব বিরল বলেই বোধ করি শিল্পীরা দর্শকেরা প্রতিবছরই অশ্রুসজল হয়ে বাড়ি ফেরেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা এ বছর যদিও ওই সরাসরি সাক্ষাতের উষ্ণতা পাচ্ছি না। কিন্তু সৌভাগক্রমে এ বছর আমরা যুক্ত করেছি সত্যিকার কিছু মহান শিল্পীদের।

দর্শকেরা এবার তিন দিনের অনুষ্ঠান শেষ হয়ে যাওয়ার পর শূন্যতা বোধ করবেন।’
উৎসবের সার্বিক সহযোগিতায় রয়েছে ব্রিটিশ শীর্ষ মার্গসংগীতের সংস্থা সৌধ, লিডস সিটি কাউন্সিল, সাউথ এশিয়ান আর্টস ইউকে, গ্রন্থী ও সংগীত ফাউন্ডেশন।