সামাজিক মাধ্যমে নারী-বিদ্বেষ মোকাবিলায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা

নারী বিদ্বেষ (ইংরেজি: Misogyny) হল নারীর প্রতি ঘৃণা বা বিরাগ মনোভাব। অ্যালান জি জনসন ও অন্যান্য সমাজবিজ্ঞানীরা মনে করেন নারী বিদ্বেষ একটি সাংস্কৃতিক মনোভাব যেখানে নারীকে শুধু নারী হওয়ার কারণে ঘৃণা করা হয়, কম যোগ্য মনে করা হয় বা ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়। এটি শুধু নারীর প্রতি তীব্র বিদ্বেষই প্রকাশ করে না সেই সাথে তাদের প্রতি কুসংস্কারও জুড়ে দেয়। সমাজে নারী বিদ্বেষ বিভিন্নভাবে প্রকাশ পেতে পারে এবং নারীর বিকাশে নারী-বিদ্বেষ একটি বড় বাধা এবং সামাজিক সমস্যা। এ সম্পর্কিত শিক্ষা, সামাজিক জাগরণ এবং আইনি পদক্ষেপ সমাজকে এই সমস্যা থেকে বের করে আনতে পারে।

সাম্প্রতিক সময়ে অনলাইনে, বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে (যেমন: ফেসবুক, টুইটার), নারী বিদ্বেষ বেশ চোখে পড়ছে। করোনাভাইরাসের (কোভিড ১৯) মাহামারির এই সময়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ব্যবহার বৃদ্ধির সাথে সাথে নারীর প্রতি কুটুক্তি, হয়রানি, ঘৃণা এবং বিদ্বেষের মাত্রাও আশংকাজনকহারে বৃদ্ধি পেয়েছে। অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে এইসব সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম নারী বিদ্বেষ ছড়িয়ে দিতে নতুন সুযোগ তৈরি করে দিয়েছে।

অনলাইনে নারীর প্রতি কুটুক্তি এবং অপব্যবহার নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা। অনেক সময় এসব কিটুক্তি এবং অপব্যবহারের মধ্যে থাকে লিঙ্গবাদী ভাষা, নারী বিদ্বেষ, কুবচন, আপত্তিকর ভাষা, হুমকি, যৌন সহিংসতা, ভীতি প্রদর্শন, অপমান, এবং কণ্ঠরোধের প্রচেষ্টা।

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা আর্টিফিশিয়াল ইন্টিলিজেন্স ব্যবহার করে স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশিত পোস্টে কার্যকরীভাবে নারি বিদ্বেষ শনাক্ত করা যায়। অর্থাৎ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নারী বিদ্বেষমূলক পোস্টগুলো নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করা যায়। এমন পর্যবেক্ষণ নারী বিদ্বেষের ধরণ, অন্তর্নীহিত কারণ এবং এর নিরসনে গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপের কার্যকারিতা বুঝতে আমাদের সাহায্য করবে। এতে করে সরকার এবং বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনগুলো কার্যকরি প্রতিকারের ব্যবস্থা নিতে পারবে।

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম টুইটারে প্রকাশিত নারি বিদ্বেষী পোস্ট স্বয়ংক্রিয়ভাবে শনাক্ত করার উপর কুইন্সল্যান্ড ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজিতে আমাদের গবেষক দল বেশ কিছু কাজ করেছে এবং এসব কাজের উপর লেখা তিনটি গবেষণা পত্র প্রথম সারির জার্নালে (এস.জে.আর. ইন্ডেক্সে কিউ ১) এবং কনফারেন্সে প্রকাশ করেছে। আমাদের গবেষণা পত্রগুলি এবং পাইথন প্রোগ্রামিং ভাষার কোড নিচের লিংকগুলিতে পাওয়া যাবে।

১. Regularising LSTM Classifier by Transfer Learning for Detecting Misogynistic Tweets with Small Training Set.
গবেষণা পত্রাঃ https://link.springer.com/article/10.1007/s10115-020-01481-0#citeas <https://link.springer.com/article/10.1007/s10115-020-01481-0>

২. Misogynistic Tweet Detection: Modelling CNN with Small Datasets.
গবেষণা পত্রাঃ <https://link.springer.com/chapter/10.1007/978-981-13-6661-1_1>
পাইথন কোডঃ <https://github.com/mdabashar/CNN_for_Misogynistic_Tweet_Detection>

৩. QutNocturnal@ HASOC'19: CNN for Hate Speech and Offensive Content Identification in Hindi Language.
গবেষণা পত্রাঃ <http://ceur-ws.org/Vol-2517/T3-8.pdf>
পাইথন কোডঃ <https://github.com/mdabashar/QutNocturnal-Hasoc2019>

আমাদের গবেষনায় ইংরেজি এবং হিন্দি ভাষার টুইট ব্যবহার করা হয়েছে। আমরা দেখেছি বাংলা ভাষার নারি-বিদ্বেষী টুইট বা অন্যান্য অনলাইন পোস্ট শনাক্ত করার জন্য উল্যেখযোগ্য কোন গবেষণা হয়নি। বাংলা ভাষার জন্য কেউ এই সম্পর্কিত কাজ করতে চাইলে আমাদের গবেষক দল কোলাবরেশন করতে আগ্রহী। এই সম্পর্কিত যেকোনো তথ্যের জন্য আমার সঙ্গে যোগাযোগ করা যাবে।

*ডাটা সায়েন্স রিসার্চ ফেলো, কুইন্সল্যান্ড ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি, অস্ট্রেলিয়া। [email protected]