স্পেনে বাংলাদেশিদের ঈদুল আজহা উদযাপন

স্পেনের রাজধানী মাদ্রিদে ধর্মীয় বিশ্বাস ও উৎসবমুখর আবহে উদযাপিত হয়েছে মুসলমানদের বড় ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল আজহা। ইউরোপের অন্যান্য দেশের মতো স্পেনেও গত মঙ্গলবার (২০ জুলাই) মুসলমানদের পবিত্র ধর্মীয় উৎসব ঈদুল আজহা উদযাপিত হয়েছে।

ছবি: লেখক

দেশটিতে করোনার প্রাদুর্ভাব কিছুটা বেড়ে যাওয়ার পরও স্বাস্থ্যবিধি মেনে দেশটির মসজিদগুলোয় এবং কয়েকটি খোলা জায়গায় ঈদের নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। রাজধানী শহর মাদ্রিদ, পর্যটন নগরী বার্সেলোনা, কানারিয়াস দ্বীপপুঞ্জসহ বিভিন্ন শহরে ছড়িয়ে থাকা প্রবাসী বাংলাদেশিরা ঈদের নামাজ আদায় করেন ও একে অপরের সঙ্গে কুশলাদি বিনিময় করে ঈদের দিনকে আনন্দময় করার চেষ্টা করেন। স্পেনের মাদ্রিদে ২০ জুলাই স্থানীয় সময় সকাল ৭টা ৩০ মিনিট থেকে ১০টা ৩০ মিনিটের মধ্যেই প্রায় সব ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়। ঈদের নামাজে অন্য দেশীয়দের সঙ্গে সমবেত হন স্থানীয় বাংলাদেশি মুসলমানেরাও। স্পেনে প্রকাশ্যে পশু কোরবানি দেওয়ার নিয়ম না থাকায় স্থানীয় গ্রোসারি দোকান থেকে মাংস কিনে নিয়েছেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা।

রাজধানী শহর মাদ্রিদে এম থার্টি ‘সেন্ত্র কুলতুরাল ইসলামিকো দে মাদ্রিদ’-এ স্পেনের সবচেয়ে বড় ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে। সকাল আটটায় অনুষ্ঠিত এ জামাতে স্পেনে অবস্থানরত বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মুসলিম কূটনৈতিক ব্যক্তিরা নামাজ আদায় করেন। বাংলাদেশি অধ্যুষিত এলাকা লাভাপিয়েস–সংলগ্ন বায়তুল মোকাররম জামে মসজিদে ঈদের নামাজের পাঁচটি জামাত অনুষ্ঠিত হয়। সকাল ৭টা ৩০, ৮টা ১৫, ৯টা, ৯টা ৪৫ ও ১০টা ৩০ মিনিটে অনুষ্ঠিত ঈদের জামাতগুলোয় পাঁচ শতাধিক মুসল্লি অংশগ্রহণ করেন। প্রথম জামাতে ঈদের নামাজ আদায় করেন স্পেনে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ সারোয়ার মাহমুদ, বাংলাদেশ দূতাবাসের কাউন্সেলর ও দূতালয় প্রধান এ টি এম আবদুর রউফ মণ্ডল, মসজিদ পরিচালনা কমিটির সভাপতি খোরশেদ আলম মজুমদার, বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন ইন স্পেনের সভাপতি কাজী এনায়েতুল করিম তারেক, সাধারণ সম্পাদক কামরুজ্জামান সুন্দর, ভালিয়েন্তে বাংলার সভাপতি মো. ফজলে এলাহী, সাধারণ সম্পাদক রমিজ উদ্দিন, কমিউনিটি নেতা দুলাল সাফা, মাহবুবুর রহমান ঝন্টু, রাসেল দেওয়ান, জালাল আহমেদ, আবদুল কাইয়ুম মাসুক, রিজভী আলম, তামিম চৌধুরী, বিল্লাল আহমেদ শাকিলসহ স্থানীয় বাংলাদেশি কমিউনিটির নেতারা। এ ছাড়া মাদ্রিদে শাহজালাল লতিফিয়া জামে মসজিদে চারটি ও আল হুদা মসজিদে দুইটি ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়।

বার্সেলোনায় ঈদের নামাজে মুসল্লিরা
ছবি: সংগৃহীত

কাতালোনিয়া প্রদেশের বার্সেলোনায় বাংলাদেশি অধ্যুষিত এলাকাগুলোর বাংলাদেশি পরিচালনাধীন মসজিদগুলোয়ও ঈদুল আজহার নামাজের বেশ কয়েকটি জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে। বর্তমান সময়ে করোনা সংক্রমণের মাত্রা কাতালোনিয়া প্রদেশে বৃদ্ধি পাওয়ায় রাত একটা থেকে ভোর ছয়টা পর্যন্ত কারফিউ জারি থাকলেও সেখানে বসবাসরত মুসলমান প্রবাসী বাংলাদেশিরা ঈদের আনন্দ নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি করে নেন। ঈদের নামাজ আদায় করার জন্য মুসল্লিদের বাসা থেকে অজু করে এবং জায়নামাজ সঙ্গে নিয়ে আসার নির্দেশনা ছিল। শাহজালাল জামে মসজিদ কর্তৃপক্ষের আয়োজনে মসজিদে সকাল ৭টা ও ৮টা ৩০ মিনিটে দুইটি এবং মসজিদের সম্মুখে খোলা ময়দানে সকাল ৭টা ৩০ মিনিটে ঈদের একটি জামাত অনুষ্ঠিত হয়। লতিফিয়া ফুলতলী জামে মসজিদে সকাল ৬টা ৫৫, ৭টা ২৫, ৭টা ৫৫ ও ৮টা ২৫ মিনিটে মোট ৪টি জামাত অনুষ্ঠিত হয়। বার্সেলোনা কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ কর্তৃপক্ষের আয়োজনে মসজিদে সকাল ৭টা ও ৯টা ৩০ মিনিটে দুইটি এবং সকাল ৮টায় মাকবায় খোলা ময়দানে ঈদের একটি জামাত অনুষ্ঠিত হয়। সুনামগঞ্জ অ্যাসোসিয়েশনের উদ্যোগে প্লাজা ব্লাঙ্কেরনাতে খোলা ময়দানে সকাল ৭টা ৩০ ও ৮টা ৩০ মিনিটে ঈদের দুইটি জামাত অনুষ্ঠিত হয়। প্রতিটি জামাতের নামাজ শেষে খুতবায় করোনা থেকে মুক্তির জন্য আল্লাহর কাছে বিশেষ ফরিয়াদ, বিশেষ করে বাংলাদেশে করোনা পরিস্থিতি অবনতি হওয়ায় বাংলাদেশের জন্য দোয়া করা হয়।

কানারিয়া দ্বীপপুঞ্জভুক্ত শহর টেনেরিফেও ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে। উল্লেখযোগ্যসংখ্যক প্রবাসী বাংলাদেশি ঈদের নামাজ পড়ে এবং একে অপরের সঙ্গে ঈদের কুশলাদি বিনিময় করে ঈদ উদ্‌যাপন করেছেন। ওখানেও ছিল স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার নির্দেশনা। ঈদের জামাতগুলোয় বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তানসহ বেশ কয়েকটি দেশের অভিবাসীরা নামাজ আদায় করেন।