হঠাৎ বিয়ে-১ম পর্ব

প্রতীকী ছবি

টিএসসি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। বাপ্পী ঘাসের ওপর দুচোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে। হঠাৎ এ সময় এক নারীকণ্ঠের আওয়াজ বাপ্পীর কানে ভেসে এল।

- এই যে শুনছেন?
- না শুনছি না, আমি এখন গভীর ঘুমের মধ্যে আছি।
বাপ্পী চোখ না খুলেই উত্তর দিল।

- জি, আমি বুঝতে পারছি আপনি গভীর ঘুমে। তারপরেও দয়া করে যদি একটু উঠে বসতেন।

- সরি, উঠতে পারব না। বললাম না, আমি এখন গভীর ঘুমের মধ্যে আছি।
- মানে কী? আপনি রীতিমতো আমার প্রতিটা প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছেন, আর বলছেন গভীর ঘুমে আছেন? ঘুমিয়ে থাকলে কথা বলছেন কীভাবে? চোখ খোলেন।

- না, চোখ খোলা যাবে না। আমি স্বপ্নের মধ্যে সুন্দরী এক পরির সঙ্গে কথা বলছি। এখন চোখ খুললেই পরি চলে যাবে।

- চলে যাবে না। আপনি চোখ খুলুন। চোখ না খুললে আমি কিন্তু আপনার গায়ে পানি ঢেলে দেব। আমার কাছে কিন্তু পানির বোতল আছে।

- ঢেলে দিন, কোনো সমস্যা নেই। আমি আসলে স্বপ্নের মধ্যে পরির সঙ্গে বৃষ্টিতে ভিজতে চাইছিলাম। কিন্তু আকাশের যে অবস্থা আজ বৃষ্টি হবে বলে মনে হচ্ছে না। আপনি পানি ঢেলে দিলে আমি আর পরি সে পানিতে ভিজব। এক কাজ করুন, বালতি ভরে পানি নিয়ে আসুন। তারপর গায়ে ঢেলে দিন।

- তার মানে আপনি চোখ খুলবেন না? ঠিক আছে কোনো সমস্যা নেই। আমি পুলিশে কল করছি। পুলিশ এলে বলব, আপনি মদ খেয়ে এখানে শুয়ে আছেন। আর মেয়েদেরকে ইভ টিজিং করছেন।

এ কথা শোনামাত্র বাপ্পী দ্রুত উঠে বসল। কারণ, ওর পুলিশকে ভীষণ ভয়। এরা কিছু হলেই পশ্চাদ্দেশে লাঠি দিয়ে মারে। এটা খুবই ভয়ংকর একটা ব্যাপার। কাউকে দেখানো যায় না, বলাও যায় না। বাপ্পী উঠে বসে মেয়েটির দিকে তাকাল। ফুটফুটে মিষ্টি চেহারার একটি মেয়ে। দেখতে পরির চেয়েও সুন্দর। বাপ্পী উঠে বসতেই মেয়েটি মিষ্টি করে বলল,

- চোখ খুলে উঠে বসার জন্য আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ। আচ্ছা, আপনার সঙ্গে একটু কথা বলা দরকার। আমাকে দেওয়ার জন্য আপনার কি একটু সময় হবে?
- অবশ্যই হবে। বলেন কতটুকু সময় দরকার?

- আজ সারা দিন। আজ সারা দিন আপনি আমার সঙ্গে সঙ্গে ঘুরবেন। কোনো সমস্যা আছে?

- না, কোনো সমস্যা নাই। যান, আজ আমার সারা দিন আপনাকে দিয়ে দিলাম।
- ঠিক তো? তাহলে আসুন আমার সঙ্গে।

বিয়ে
ফাইল ছবি

বলেই মেয়েটি হাঁটা শুরু করল। বাপ্পী পেছন পেছন মেয়েটিকে অনুসরণ করল। টিএসসির বাইরে এসে মেয়েটি একটি সাদা রঙের টয়োটা গাড়িতে উঠে বসল। বাপ্পী বুঝতে পারছে না, সে কী করবে। সে বোকার মতো দরজার পাশে দাঁড়িয়ে রইল। মেয়েটি গাড়ির ভেতর থেকে বলল,

- দাঁড়িয়ে আছেন কেন? গাড়িতে উঠুন।

বাপ্পী গাড়িতে উঠে মেয়েটির পাশে বসল। এতক্ষণ সে খেয়াল করেনি, কিন্তু গাড়ির মধ্যে বসতেই সে টের পেল, মেয়েটির শরীর থেকে মিষ্টি একটা ফুলের গন্ধ চারদিকে ছড়িয়ে পড়ছে। কিন্তু গন্ধটা কোনো ফুলের তা সে ধরতে পারল না। তবে গন্ধটা তার খুব পছন্দ হয়েছে।

ড্রাইভার গাড়ি ছেড়ে দিল। মেয়েটি বাপ্পীর দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞাসা করল,
- আচ্ছা, আমরা কোথায় যাচ্ছি জিজ্ঞাসা করবেন না?
- জিজ্ঞাসা করতে ইচ্ছা করছে না। গেলেই তো জানতে পারব।
- আপনি তো আজব মানুষ। আমি কে জানলেন না, চিনলেন না। আমি বললাম আমার সঙ্গে চলেন আর আপনি রওনা হয়ে গেলেন। কেন?
- আমি ভাবলাম আপনি হয়তো আমাকে চেনেন। আর তা ছাড়া এটা কোনো সমস্যা না। আমার হাতে যথেষ্ট সময় আছে।

- কিন্তু আমরা তো কোনো খারাপ গ্যাংয়ের সদস্যও হতে পারি? ধরেন, আপনাকে নিয়ে মেরে ফেললাম বা গুম করে মুক্তিপণ চাইলাম।

- মেরে ফেলতে পারেন, এটা সহজ কাজ। কিন্তু মুক্তিপণ চেয়ে সুবিধা করতে পারবেন না। কারণ, আমাকে ছাড়িয়ে নিতে কেউ আপনাদের একটা টাকাও দেবে না।
- এই মিয়া, আপনি এমন পাগল পাগল কথা বলেন কেন? আপনার মাথায় কি কোনো গন্ডগোল আছে?
- এটা আমি নিশ্চিত না, থাকতেও পারে। ভাবছি, একজন সাইক্রিয়াটিক দেখাব। আচ্ছা আপনার জানাশোনা কোনো ভালো ডাক্তার আছে?
বাপ্পীর কথা শুনে মেয়েটি মুচকি একটা হাসি দিল। বাপ্পী মনে মনে বলল, এই মেয়ে নির্ঘাত অন্য কোনো গ্রহ থেকে এসেছে। এত মিষ্টি কারও হাসি হতে পারে, তা ওর ধারণা ছিল না।

- শোনেন, আমি আপনার সম্পর্কে খুব একটা জানি না। অনেক কষ্ট করে শুধু আপনার নামটা জেনেছি। তবে ছয় মাস ধরে আমি আপনার ওপর চোখ রাখছি। ধারণা করতে পারেন, কেন?
- আমার ধারণা আপনি পুরুষ পাচারকারী। অবলা পুরুষদের ধরে ধরে বিদেশে পাচার করেন। আর না হলে...
- থাক আপনার আর কষ্ট করে মাথা ঘামিয়ে বের করতে হবে না। শোনেন, ছয় মাস ধরে দেখছি, আপনি প্রতিদিন এখানে এসে শুয়ে থাকেন। আচ্ছা, আপনি এই কাঠফাটা রোদের মধ্যে শুয়ে থাকেন কেন?
- আমি এখানে শুয়ে শুয়ে ভিটামিন ডি খাই। আর জটিল সব বিষয় নিয়ে চিন্তা করি।
- তাই! তা জটিল কি সেই বিষয়, যা নিয়ে আপনি চিন্তা করেন?
- আমি চিন্তা করি, এই দুনিয়ায় আমি কেন এসেছি? আমি তো এ দুনিয়ায় না এসে অন্য কোনো গ্রহেও যেতে পারতাম।
- কেন, এই দুনিয়ার কী সমস্যা?
- সমস্যা দুনিয়ার না। সমস্যা হলো এখানে আমার করার মতো কোনো কাজ নেই।
- আপনার এসব আধ্যাত্মিক কথা বোঝার মতো ব্রেন আমার নেই। তা আপনি যে সব সময় এখানে শুয়ে থাকেন, আপনার ক্লাস নেই?
- না। মাস্টার্স পরীক্ষা হয়ে গেছে, তাই ক্লাস নেই।
- পরীক্ষা কেমন হলো?
- দিলে হয়তো ভালোই হতো। কিন্তু পরীক্ষা দিইনি।
- মানে কী! পরীক্ষা দেননি কেন?
- কারণ, পাস করলেই বাসা থেকে বলবে চাকরি করতে। কিন্তু আমার দ্বারা চাকরি করা সম্ভব না।

- এটা কোনো কথা? চাকরি না করলে চলবেন কীভাবে?
- এটা কোনো বড় সমস্যা না। আমি ঠিক করেছি একটা বড়লোকের মেয়েকে বিয়ে করে ঘরজামাই থাকব। আর সেই মেয়ের পয়সায় খাব আর শুয়ে শুয়ে চিন্তা করব।
- তাই! তাহলে এক কাজ করতে পারেন। আপনি চাইলে আমাকে বিয়ে করতে পারেন। আমি কিন্তু বড়লোকের মেয়ে।
- তাই?
- জি, আমার যমজ একটা ভাই আছে। সেও আমার সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে। আমার বাবার সব সম্পত্তি আমাদের দুই ভাই-বোনের নামে, যা আপনি সারা জীবন শুয়েবসে খেয়েও শেষ করতে পারবেন না। কী বলেন, আমাকে বিয়ে করবেন?
- অবশ্যই করব। বলেন কখন করতে হবে?
- আমি কিন্তু ফান করছি না, আমি সিরিয়াস।
- আমিও সিরিয়াস।
- যদি বলি এখনই বিয়ে করতে হবে, করবেন? নাকি সমস্যা আছে।
- না, কোনো সমস্যা নেই। তবে সমস্যা হচ্ছে আমার কাছে এই মুহূর্তে বিয়ের পোশাক নেই। এমনকি টুপিও নেই। আর তা ছাড়া এখন সাক্ষী পাবেন কোথায়?
- কোনো সমস্যা নেই। আমি সব ব্যবস্থা করছি।
এরপর মেয়েটি ড্রাইভারকে বলল,
- কাদের ভাই, বিয়ের সাক্ষীর ব্যবস্থা করতে পারবেন?
- জি আপা, পারব। আমি কাদের পারি না—এমন কাজ এই দুনিয়ায় নেই। আমি হলাম গিয়ে...
- কাদের ভাই, নিজের প্রশংসা আর করতে হবে না। আপনি তাড়াতাড়ি একটা কাজি অফিসে চলেন।
- জি আপা, এখনই যাচ্ছি।
ড্রাইভার কাদের অনেক ঘোরাঘুরির পর একটা কাজি অফিসের সামনে গিয়ে গাড়ি পার্ক করল। বিয়ের সব কাজ শেষে কাজি অফিস থেকে বের হতেই মেয়েটি বলল,
- আচ্ছা, তুমি তো আমাকে বিয়ে করলে, বলো তো আমার নাম কী?
- নাম তো জানি না।

সন্তানের বিয়ে নিয়ে মা–বাবার কাজের অন্ত নেই
ছবি: সংগৃহীত

- নাম জানো না, অথচ সেই মেয়েকে বিয়ে করে ফেললে?
- নাম কোনো সমস্যা না। কারণ, তোমাকে তো আমি আর নাম ধরে ডাকব না।
- তা কী বলে ডাকবে?
- তোমাকে আমি বউ বলে ডাকব।
- ভেরি গুড। তবুও নামটা জেনে রাখো। আমার নাম রিয়া।
- সুন্দর নাম। আচ্ছা সন্ধ্যা হয়ে গেছে, আমি কি এখন যেতে পারি। তোমাকে সারা দিন দিয়েছিলাম, দিন তো শেষ।
- মানে কী! আজ আমাদের বাসররাত। আর তুমি আমাকে ফেলে চলে যেতে চাইছ? শোনো, তোমার এখন কোথাও যাওয়া হবে না। তুমি আমার সঙ্গে এখন সাভার যাবে।
- ঠিক আছে, চলো।
- আচ্ছা সেই শুরু থেকে দেখছি, তোমাকে যা–ই বলছি, তুমি তা–ই করছ। কোনো প্রশ্নও করছ না। সাভার কেন যাচ্ছি, জানতে চাইবে না?
- তোমার ইচ্ছে হলে বলতে পারো।
- সাভারে আমাদের বাসা। ওখানে আমার বাবা-মা-ভাই, সবাই আছেন। তোমাকে নিয়ে গিয়ে এখন সবার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেব। তারপর আমরা মজা করে বাসররাত করব।
গাড়ি ঢাকা ছেড়ে সাভারের উদ্দেশে ছুটে চলল। সন্ধ্যা হয়ে গেছে অনেক আগেই। সাভারে গিয়ে গাড়ি প্রধান সড়ক থেকে নেমে অন্ধকার ইট–বিছানো রাস্তায় চলতে লাগল। বেশ কিছুক্ষণ চলার পর চারদিকে উঁচু প্রাচীরঘেরা, গাছগাছালিতে ভরা একটি বিশাল বাড়ির সদর দরজায় ওরা উপস্থিত হলো। চারদিকে ঘুটঘুটে অন্ধকার। ড্রাইভার মেইন গেট দিয়ে ঢুকে গাড়িটি বাড়ির সামনে না নিয়ে বাড়ির ডানপাশে বাগানের ভেতরে নিয়ে গেল। বাপ্পী বুঝতে পারছে না, বাড়ির সামনে না গিয়ে কেন গাড়িটি বাগানের ভেতর এই অন্ধকার জায়গায় থামল। গাড়ি থামতেই বাপ্পী আর রিয়া দুজনেই গাড়ি থেকে নামল। রিয়া বাপ্পীর উদ্দেশে বলল,
- নিশ্চয় ভাবছ, বাসায় না গিয়ে অন্ধকার বাগানে কেন এলাম। আসলে ভাবলাম, বাসায় যাওয়ার আগে মায়ের সঙ্গে একটু দেখা করে যাই। না হলে মা রাগ করতে পারেন। আমার মা ওই গাছের নিচে ঘুমিয়ে আছেন।
বলেই রিয়া হাঁটা শুরু করল। বাপ্পী চাবি দেওয়া পুতুলের মতো রিয়ার পেছন পেছন হেঁটে চলল। গাড়ির হেডলাইটের আলোয় বাপ্পী দেখল, একটু দুরে গাছের নিচে পাশাপাশি দুটো কবর। রিয়া একটি কবরের সামনে গিয়ে মাটিতে বসে পড়ল। তারপর বাপ্পীকে ইশারায় তার পাশে বসতে বলল। বাপ্পী গিয়ে রিয়ার পাশে বসতেই রিয়া কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলল,

- মাকে সালাম করো।
বাপ্পী কবরের মাটিতে হাত দিয়ে সালাম করল। হঠাৎ করেই বাপ্পীর কাঁধে মাথা রেখে রিয়া ডুকরে কেঁদে উঠল। সারা দিন পাগলামি করা খেয়ালি এই মেয়েটি এভাবে কাঁদবে, বাপ্পীর ধারণা ছিল না। রিয়া কাঁদতে কাঁদতে বলল,
- মা দেখো, কাকে সঙ্গে করে নিয়ে এসেছি। এ হচ্ছে তোমার মেয়ের জামাই। সুন্দর না? একটু পাগলা কিসিমের, তবে খুব ভালো মানুষ। আমি ওকে অনেক ভালোবাসি। সরি মা, আমি কিন্তু ওকে তোমার থেকেও বেশি ভালোবাসি। রাগ করেছ? রাগ করলেও কিছু করার নেই, মা। স্ত্রী স্বামীকে বেশি ভালোবাসবে, সেটাই তো স্বাভাবিক, তাই না?
হঠাৎ করেই রিয়া উঠে দাঁড়াল। তারপর মিষ্টি করে বাপ্পীকে বলল,
- তুমি এখানে বসে থাকো। আমি বাসায় গিয়ে ওদের ডেকে নিয়ে আসি। ওরা এসে তোমাকে সাদরে গ্রহণ করে বাসায় নিয়ে যাবে। আমার স্বামী তো আর ফেলনা না। তার একটা সম্মান আছে, তাই না?
কথাটি বলেই রিয়া বাসার দিকে পা বাড়াল। কয়েক কদম গিয়ে রিয়া আবার ফিরে এল। আবেগপ্রবণ গলায় বলল,
- বাপ্পী, মায়ের পাশের এই কবরটায় একটি অভাগী মেয়ে শুয়ে আছে। তুমি কি ওর মাথায় একটু হাত বুলিয়ে দেবে?
বাপ্পী বসা থেকে উঠে পাশের কবরটির মাথার দিকে বসল। কোমলভাবে কবরের মাটিতে হাত বুলিয়ে দিল।
- একটা চুমু দাও না ওর মাথায়।
বাপ্পী কবরের মাটিতে ঠোঁট ছোঁয়াল। কান্নার আওয়াজে বুঝল, রিয়া কাঁদছে।
- তুমি জানতে চাইলে না, কবরটি কার?
বলেই রিয়া কাঁদতে কাঁদতে দৌড়ে বাসার দিকে চলে গেল।
কাদের কখন গাড়ির হেডলাইট নিভিয়ে দিয়েছে, তা বাপ্পী খেয়াল করেনি। চারদিকে এখন ঘুটঘুটে অন্ধকার। গা ছমছমে পরিবেশ। আশপাশে কোনো আলো নেই। শুধু দূরে রিয়াদের বাসার উঠোনে একটি অল্প পাওয়ারের লাইট জ্বলছে। বাপ্পী মোবাইল বা ঘড়ি কিছুই ব্যবহার করে না। যার কারণে বুঝতে পারছে না, এখন কয়টা বাজে। ওর ধারণা রাত একটার মতো হবে। রিয়া ঘণ্টা খানেক হলো বাসায় গিয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত বাপ্পীকে নিতে কেউ আসেনি। সম্ভবত বাসার কেউ হয়তো ওদের এই বিয়েটা মেনে নিচ্ছে না। অবশ্য মেনে নেওয়ার কথাও না। আসলে ঝোঁকের মাথায় হুট করে এ ধরনের ছেলেমানুষি করাটা একদম ঠিক হয়নি। বাপ্পীর সাধারণত কারও জন্য মন খারাপ হয় না। কিন্তু এ মুহূর্তে রিয়ার জন্য ওর খারাপ লাগছে। ওর ধারণা, সম্ভবত বাসার সবাই মেয়েটিকে বকাঝকা করছে।

প্রায় তিন ঘণ্টা হয়ে গেল, এখন পর্যন্ত বাপ্পীকে নিতে কেউ আসেনি। ও বুঝতে পারছে না, ওর আসলে কী করা উচিত। বাপ্পীর খুবই ঘুম পাচ্ছে। ও আর চোখ খুলে রাখতে পারছে না। ওর মনে হলো, এভাবে দুটি কবরের মাঝে বসে থাকার চেয়ে ড্রাইভার কাদেরের সঙ্গে গাড়িতে বসে থাকাই ভালো। বাপ্পী বসে থেকেই ঘাড় ঘুরিয়ে পেছনে তাকাল। দেখল গাড়িটি এখন আর ওখানে নেই। ও অবাক হলো। মনে মনে নিজেকেই প্রশ্ন করল, গাড়িটি তো এখানেই ছিল। চলে গেল কখন? আমি তো গাড়ির কোনো আওয়াজ শুনিনি।
বাপ্পী বুঝতে পারল, এই অন্ধকার গভীর রাতে এই কবরস্থানে ও ছাড়া এখন আর কেউ নেই। বাপ্পী সাধারণত কোনো কিছুতেই ভয় পায় না। তবে এখন ওর একটু একটু ভয় করতে লাগল। ও বসা থেকে উঠে দাঁড়াতে চাইল। কিন্তু পারল না। ওর মনে হলো, ওর পুরোটা শরীর পাথরের মতো ভারী হয়ে আছে। ঠিক সেই সময় বাপ্পী অনুভব করল, একটি ঠান্ডা হাওয়া কোমলভাবে ওর ঘাড় ছুঁয়ে বয়ে গেল। ভয়ে ওর পুরোটা শরীর কাঁটা দিয়ে উঠল। ঠিক তখনই ও একটি নারীকণ্ঠ শুনতে পেল। যে তাকে ফিসফিস করে বলে উঠল,
– এই বোকা ছেলে, তুমি কি ভয় পাচ্ছ?
বাপ্পী আশপাশে ভালো করে খেয়াল করে দেখল। কিন্তু অন্ধকারে কাউকেই খুঁজে পেল না। আবার সেই নারীকণ্ঠ ফিসফিস করে বলল,
– তুমি এদিক-ওদিক কাকে খুঁজছ? আমি তো তোমার পাশেই বসে আছি।
কথাটি শোনার সঙ্গে সঙ্গেই বাপ্পী জ্ঞান হারিয়ে কবরের ওপর ঢলে পড়ল। ...চলবে
*[email protected]