অবাধ নিধনের শিকার টেকনাফের বন্য শূকর

শিকারিদের অবাধ নিধনের শিকার হয়ে হারিয়ে যেতে বসেছে কক্সবাজারের টেকনাফের সংরক্ষিত বনের বন্য শূকর। অভিযোগ উঠেছে, একটি সংঘবদ্ধ চক্র সংরক্ষিত বনের বন্য শূকর শিকার করে মিয়ানমারে পাচারের পাশাপাশি স্থানীয় হাট-বাজারে মাংস বিক্রি করছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উপজেলার সদর ইউনিয়নের কেরুনতলি, জাহালিয়াপাড়া, মাঠপাড়া, চৌকিদারপাড়া, শামলাপুর, চাকমাপাড়াসহ বিভিন্ন এলাকার বনভূমিতে শূকর শিকার হচ্ছে। শিকারিচক্র কয়েকটি দলে বিভক্ত হয়ে গভীর বনে ঢুকে গুলি করে শূকর শিকার করছে বলে স্থানীয় বাসিন্দারা জানান।
স্থানীয় লোকজন জানান, উপজেলার লেঙ্গুরবিল বাজার, শামলাপুর, হোয়াইক্যং ও হ্নীলা বাজার এলাকায় ৬০০ টাকা কেজি দামে শূকরের মাংস বিক্রি হয়।
কয়েকজন শিকারি নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, তাঁরা প্রতি সপ্তাহে পাঁচ থেকে সাতটি শূকর শিকার করেন। পাহাড়ি এলাকার কাছাকাছি ফসলের খেতে আসা শূকর তাঁদের হাতে ধরা পড়ে। এদের জীবিত ধরা কঠিন বলে গুলি করে মারেন তাঁরা। একটি শূকর বিক্রি হয় ২০-৩০ হাজার টাকায়। অধিকাংশ শূকর পার্শ্ববর্তী দেশ মিয়ানমারে চোরাইপথে পাচার হয়।
বন বিভাগের কর্মকর্তারা বলেন, এ উপজেলার তিনটি রেঞ্জের আওতাধীন ৩৯ হাজার একর বন পাহারার জন্য প্রহরী রয়েছেন মাত্র ১২ জন। আবার এসব বনে যাওয়ার পথও দুর্গম। তাই সব সময় টহল দেওয়া সম্ভব হয়ে ওঠে না।
সদরের ইউপি চেয়ারম্যান নুরুল আলম ও বাহারছড়ার ইউপি চেয়ারম্যান হাবিব উল্লাহ বলেন, এখন পুরো উপজেলায় আমন ধান পাকছে। সাধারণত পাকা ধান খেতে শূকর লোকালয়ে এলে শিকারিদের হাতে ধরা পড়ে।
জানতে চাইলে শীলখালী রেঞ্জ কর্মকর্তা মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ‘বিশাল বন পাহারা দেওয়ার জন্য পর্যাপ্ত লোকবল নেই। অনেক সময় শূকর শিকারের কথা শুনেছি, কিন্তু ব্যবস্থা নিতে পারছি না। বন পাহারার জন্য লোকবল নিয়োগ জরুরি হয়ে পড়েছে। তার পরও আমরা শিকারিদের প্রতিরোধের চেষ্টা করছি।’
উপজেলা প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা এ কে এম হুমায়ুন কবির বলেন, বনাঞ্চল উজাড় হওয়ায় শূকরের বাসস্থান ও খাবারের সংকট দেখা দিয়েছে। বনের মুলিবাঁশের বাগান ধ্বংস হয়ে যাওয়ায় খাবারের খোঁজে লোকালয়ে এসে শূকরের পাল শিকারিদের হাতে ধরা পড়ছে। শিকারিদের প্রতিরোধ করা না গেলে শূকর শিকার বন্ধ করা কঠিন হয়ে পড়বে।
জেলা দক্ষিণ সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) রেজাউল করিম চৌধুরী শূকর শিকারের ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, স্থানীয় একটি চক্র অবৈধভাবে নির্বিচারে শূকর শিকার করছে। তাই সংশ্লিষ্ট এলাকায় বন্য প্রাণী নিধন থেকে বিরত থাকার জন্য এলাকায় মাইকযোগে প্রচারণা চালানো হচ্ছে।