আছি শরণার্থীদের পাশে

ইউক্রেন থেকে প্রতিবেশী দেশ হাঙ্গেরিতে ঢুকছেন হাজারো শরণার্থী। তাঁদের সহযোগিতা করছেন স্থানীয় লোকজন। এ কাজে যুক্ত আছেন বাংলাদেশি শিক্ষার্থী শৈলী যারিন তাসনিম। হাঙ্গেরির বুদাপেস্টের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতকোত্তর করছেন তিনি। মেসেঞ্জারে তাঁর অভিজ্ঞতা শুনলেন কবীর হোসাইন

২৪ ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার। ফেসবুকে ‘ওমেন অব বুদাপেস্ট’ নামের একটি গ্রুপ দেখলাম। ইউক্রেনের শরণার্থীদের জন্য সাহায্য চেয়ে একটি পোস্ট দিয়েছেন আম্যান্ডা নামের এক নারী। তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করলাম। সাতপাঁচ না ভেবেই কাজে নেমে পড়লাম।

‘ইউক্রেন রিফিউজি এইড’ নামে একটি ফেসবুক গ্রুপ পরিচালনা করছি আমরা। এখানে যুক্ত হচ্ছেন নানা বয়স আর পেশার মানুষ। আমার সঙ্গে একজন বাংলাদেশি শিক্ষার্থীও কাজ করছেন। নাম সাদিয়া হাসান। সাদিয়াসহ অন্য স্বেচ্ছাসেবীদের নিয়ে একটি টিম করেছি। তাঁদের কেউ অনুদান সংগ্রহ করছেন, কেউ পরিবহনের ব্যবস্থা করছেন, কেউ আছেন আশ্রয় ও দোভাষীর দায়িত্বে। আশ্রয়দাতাদের জন্য একটি ফরম বানিয়েছি। নিজের বাসায় কেউ যদি শরণার্থী রাখতে চান, তাহলে সেটি পূরণ করে আমাদের কাছে জমা দিতে হয়। বাসায় কতজন সদস্য রাখতে পারবেন, কতটি ঘর ফাঁকা আছে, বাসায় কুকুর-বিড়াল আছে কি না, শরণার্থীদের সঙ্গে পোষা প্রাণী থাকলে সেগুলো রাখা সম্ভব কি না, শিশু থাকলে রাখতে পারবেন কি না—এমন সব বিষয় উল্লেখ করা আছে তাতে। এসব বিষয়ে হাঙ্গেরির নাগরিকদের আন্তরিকতা আমাকে মুগ্ধ করেছে। শরণার্থীদের সহায়তা করার জন্য তাঁরা খুবই আগ্রহী। যে যেভাবে পারছেন, সাহায্য করছেন।

বাংলাদেশি শিক্ষার্থী শৈলী যারিন তাসনিম (মাঝে) শরণার্থীদের জন্য কাজ করছেন
ছবি: সংগৃহীত

এ মুহূর্তে গ্লাইসির কথা খুব মনে পড়ছে। নয়জনের এক বড় শরণার্থী পরিবারের থাকার জায়গা খুঁজতে গিয়ে গ্লাইসিকে ফোন করেছিলাম। এটা গত মঙ্গলবারের কথা। নয়জনকে একই বাসায় রাখা সম্ভব নয় বলে আমরা তিনজন করে একেক বাসায় রাখার সিদ্ধান্ত নিই। গ্লাইসিকে ব্যাপারটা বুঝিয়ে বলার পর কী যে আগ্রহ দেখাল! আমি খুবই অবাক হলাম। এখনই সে সব গুছিয়ে রাখছে, শরণার্থী পরিবারটিকে নিয়ে আসতে সে নিজেই যেতে চায় স্টেশনে, বলছিল গ্লাইসি। ওর ভাঙা ভাঙা ইংরেজির সেই মানবিক শব্দগুলো শুনে চোখে পানি চলে আসছিল! একটু পরপরই আমাকে মেসেজ পাঠাচ্ছিল। পরিবারের সঙ্গে থাকা বাচ্চারা কেমন আছে, কত দূর আছে এখন, বাচ্চারা কি অনেক ছোট, দুধের বোতল কিনে রাখবে কি না—এসব।

গ্লাইসি যেন পুরো হাঙ্গেরির প্রতিচ্ছবি। সে দেশের সরকারসহ প্রায় সব নাগরিকই হয়ে উঠেছেন এক একজন গ্লাইসি। সরকার সীমান্ত উন্মুক্ত করে দিয়েছে। ফ্রি করে দিয়েছে ট্রেনের ভাড়া। মেইল করে নাগরিকদের বিপর্যস্ত ইউক্রেন-শরণার্থীদের পাশে থাকতে বলছে।

এখন পর্যন্ত ৯০ হাজারের বেশি শরণার্থী এসেছে হাঙ্গেরিতে। সামনে কেমন দিন অপেক্ষা করছে, জানি না। এভাবেই বা কত দিন চলবে, কে জানে! মানুষের বিপর্যস্ত মুখ, বুড়োদের ক্লান্ত শরীর, শিশুদের অসহায় চিৎকার দেখছি খুব কাছ থেকে। ভালো লাগছে না কিছু। খুব করে চাই, শিগগিরই সব শান্ত হোক। নিজের ঘরে ফিরে যাক ঘরহারা মানুষ।