আহ্‌ ঈদ

পাঠকের কাছে ঈদ অভিজ্ঞতা জানতে চেয়েছিল ছুটির দিনে। অনেক পাঠক নিজের অম্ল-মধুর অভিজ্ঞতা লিখে পাঠিয়েছেন। তার মধ্য থেকে নির্বাচিত একটি ঈদ অভিজ্ঞতা প্রকাশিত হলো এখানে।

আমার কাছে মনে হয়, ঈদুল ফিতরের চেয়ে ঈদুল আজহায় কাজকর্ম, দৌড়াদৌড়ি বেশি থাকে। বিশেষ করে ঈদুল আজহার প্রস্তুতি নেওয়ার টুকরো টুকরো বিষয় আমার দারুণ লাগে! কারণটা, আমি বড় হয়েছি আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে একই ভবনে।

মনের চোখে ভাসে ঈদুল আজহার সপ্তাহখানেক আগে থেকে নানুভাই কোরবানির পর মাংস রাখার জন্য চাটাই কিনে নিতেন আর কাটাকুটি জন্য দা-ছুড়ি সব ধার করিয়ে ফেলতেন। মামা আর আম্মু মিলে কয়েক ঘণ্টা ধরে আলোচনা করে বিশাল দুটো তালিকা করে ফেলতেন। প্রথম তালিকায় থাকত যাবতীয় কাছের আর আধা কাছের আত্মীয়দের নাম। আরেক তালিকায় হতো এলাকার পরিচিত সমস্ত অসহায়-নিম্নবিত্ত মানুষদের নিয়ে। ভবনের দারোয়ান, এলাকার পরিচ্ছন্নতাকর্মী, নৈশপ্রহরীসহ যথাসম্ভব চেনাজানা সবাই, যাতে এক প্যাকেট মাংস ভাগে পান, তা নিশ্চিত করা।

আর আমাদের, মানে কন্যা দলের প্রধান কাজ ছিল মন দিয়ে দুনিয়ার পেঁয়াজ, রসুন আর আদা ছিলে ব্লেন্ড করে দেওয়া। মনে পড়ে, এ বিশেষ কাজটি থেকে সারা বছর আমরা পালিয়ে বেড়ালেও এই সময়টায় আমি আর আমার খালাতো বোন রীতিমতো পাল্লা দিয়ে করতাম! আম্মুর অতি প্রিয় অ্যালুমিনিয়ামের ঝকঝকে হাঁড়ি–পাতিল রান্নাঘরের ওপরের আলমারি থেকে নামানো হতো। আমরা আনন্দ নিয়ে সাবান দিয়ে ঘষে সেগুলো পরিষ্কার করতাম! আমাদের জন্য এ কাজগুলো করা ছিল একধরনের খেলা।

এ ছাড়া ফ্রিজ পরিষ্কার করার জন্য আম্মু, খালারা পুরো একটা দিন বরাদ্দ রাখতেন। পত্রিকার রান্নার রেসিপি থেকে মাংসের অন্য রকম রেসিপি কেটে রেখে দিতেন! ভাইয়েরা নিজ দায়িত্বে গরুর যত্নআত্তি থেকে কোরবানির সময়কার কাজ বুঝে নিতেন।

দিন কয়েক পর আবার ঈদ আসছে। এই করোনার দিনে বারবার শুধু শৈশবের-কৈশোরের ঈদ উদ্‌যাপনের স্মৃতি নিউরনে টোকা দিয়ে যাচ্ছে!

মিরপুর, ঢাকা