ঈদে তো খাবেনই, তবে...
করোনার প্রাদুর্ভাবের মধ্যে উদ্যাপিত হচ্ছে আরও একটি ঈদ। যদিও ঈদে এখন বিধিনিষেধের কড়াকড়ি নেই, তারপরও বাইরে খুব একটা না যাওয়াই ভালো। বাসায় থেকে আনন্দের অন্যতম অনুষঙ্গ তাই খাবার। ঈদুল আজহায় খাবারের মধ্যে মূল আয়োজন হলো বিভিন্ন রকমের মাংসের পদ। তেল-মসলায়, ঝোলে-ঝালে ভারী খাবারের আয়োজন হবে বেশি। অনেক পদ চেখে দেখতে গেলেও খাওয়া হয়ে যাবে বেশি। আর বেশি খেলেই দেখা দিতে পারে নানা জটিলতা।
বেশি খেলে ক্ষতি কী
যাঁরা দীর্ঘমেয়াদি রোগে ভোগেন, তাঁদের মনেও খাবার নিয়ে থাকে অনেক সংশয়। এ ক্ষেত্রে বলা যায়, দু-এক দিন বেশি খেতে যদিও খুব বাধা নেই, তবু খাওয়া উচিত রয়েসয়ে। সমস্যা হলো তাঁদের, যাঁদের পেটের সমস্যা, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস বা হৃদ্রোগ আছে কিংবা যাঁদের এসব রোগের প্রাথমিক লক্ষণ আছে। তাঁদের খাওয়ার আগে অবশ্যই দুবার ভাবতে হবে।
অনেকেই একসঙ্গে প্রচুর তৈলাক্ত বা চর্বিযুক্ত খাবার খেয়ে হজম করতে পারেন না। এ ছাড়া কোরবানির জন্য মাংস একটু বেশি খাওয়া হয়। অধিক পরিমাণে মাংস খাওয়ার ফলে পেট ফেঁপে যায়, জ্বালাপোড়া করে, পেটব্যথা হয়, বারবার পায়খানা হয়। পর্যাপ্ত পানি পান না করার দরুন অনেকে কোষ্ঠকাঠিন্যে ভোগেন।
যেভাবে কম খাবেন
যদিও সাধারণভাবে কোনো নির্দিষ্ট খাবার খেতে কোনো মানা নেই কিন্তু পরিমাণ বজায় রাখা খুবই জরুরি। এ ক্ষেত্রে শুরু থেকেই পরিকল্পনা থাকা দরকার। যেহেতু দুপুর গড়িয়ে বিকেল হলেই সবাই মাংস খাওয়ার জন্য বেশি ব্যস্ত হয়ে পড়েন, তাই সকাল আর দুপুরের খাওয়াটা খুব কম রাখাই ভালো। অন্য বাসায়ও যথাসম্ভব কম খান। ঈদের দিন তৈলাক্ত খাবার, পোলাও, বিরিয়ানি ও আমিষজাতীয় খাবার, যেমন মুরগি, খাসি বা গরুর মাংস, কাবাব, রেজালা ইত্যাদি খাওয়া হয়। এ ছাড়া আছে চটপটি, দইবড়া কিংবা বোরহানির মতো টক খাবারও। এ-জাতীয় খাদ্য সকাল আর দুপুরে পরিহার করাই উত্তম। কারণ, বিকেলে প্রচুর মাংস খাওয়ার সম্ভাবনা থাকবে।
ঈদের নামাজ পড়তে যাওয়ার আগে অল্প করে সেমাই বা পায়েস খান। তার সঙ্গে কিশমিশ, বাদাম ইত্যাদি খান। ফলের জুস, ডাবের পানি ইত্যাদি খেতে পারেন। খাওয়ার আধঘণ্টা পর দেড় থেকে দুই গ্লাস পানি খেয়ে নামাজ পড়তে যান।
যেসব খাবার আরাম দেবে
লেবুর শরবত, বাসায় বানানো ফলের রস, ডাবের পানি, বোরহানি ইত্যাদি খাওয়া যায়।
যাঁদের বয়স কম এবং শারীরিক কোনো সমস্যা নেই, তাঁরা নিজের পছন্দমতো সবই খেতে পারেন এবং তাঁদের হজমেরও কোনো সমস্যা হয় না। শুধু অতিরিক্ত না হলেই হলো, বিশেষ করে চর্বিজাতীয় খাদ্য। বেশি মাংস খেলে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা বেড়ে যায়। যাঁদের অ্যানাল ফিসার ও পাইলসজাতীয় রোগ আছে, তাঁদের পায়ুপথে জ্বালাপোড়া, ব্যথা ইত্যাদি বাড়তে পারে, এমনকি পায়ুপথে রক্তক্ষরণ পর্যন্ত হতে পারে। তাই প্রচুর পানি, শরবত, ফলের রস, ইসবগুলের ভুসি ও অন্যান্য তরল খাবার বেশি খাবেন। যাঁদের আইবিএস আছে, তাঁরা দুগ্ধজাত খাবার এড়িয়ে চলার চেষ্টা করুন। দাওয়াতে গেলে পরিমিত, অতিভোজন পরিহারের চেষ্টা করবেন।
হয়তো অনেক খাবার টেবিলে সাজানো থাকবে, কিন্তু খেতে বসলেই যে সব খেতে হবে, তা নয়। রাতে খাওয়ার অন্তত দুই ঘণ্টা পর বিছানায় যাবেন। খাবারের ফাঁকে ফাঁকে পানি খাবেন না, এতে হজম রসগুলো পাতলা হয়ে হজমে অসুবিধা হয়। তাই খাওয়ার অন্তত এক ঘণ্টা পর পানি পান করুন। খাওয়ার মাঝে বোরহানি খেতে পারেন।
বিকল্প যা করতে পারেন
যেকোনো পশুর চর্বি খাওয়া এমনিতেই স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। তাই যতটুকু সম্ভব মাংসের চর্বি বাদ রাখুন। মাংসের সঙ্গে যথেষ্ট পরিমাণে সবজি খাবেন। টাটকা সবজি পাকস্থলীকে সাবলীল রাখে। পরিমিতিবোধ থাকলে ভয়ের কিছু নেই। মাংসে তেল বা ঘিয়ের পরিমাণ কমিয়ে রান্না করুন। ভুনা মাংসের বদলে শুকনা কাবাব করে খেলে, কোমল পানীয় ও মিষ্টি একেবারে কমিয়ে খেলে ঈদের দিন ভালো থাকতে পারবেন। সেই সঙ্গে হালকা ব্যায়াম বা বেশ কিছুক্ষণ হাঁটাহাঁটি করে শরীর থেকে অতিরিক্ত ক্যালরি কমিয়ে নিতে পারলে আরও ভালো।
অতিভোজনে তাঁদের পেট ভরা ভাব বা অস্বস্তিকর অনুভূতি হতে পারে। বেশি মাংস খেলে তা পরিপূর্ণভাবে হজম করতে অনেক সময় লাগতে পারে। এতে পেটে অস্বস্তিকর অনুভূতি, ভরা ভরা ভাব, বারবার ঢেকুর ওঠা, এমনকি বুকে ব্যথা পর্যন্ত হতে পারে। ডায়াবেটিসের রোগীকে অবশ্যই মিষ্টিজাতীয় খাবার এড়িয়ে চলতে হবে। তাঁরা বরং টক খাবারের মাধ্যমে রসনা পূরণ করতে পারেন। নেহাতই মিষ্টি খেতে চাইলে চিনির বিকল্প দিয়ে তৈরি করে নেবেন। পোলাও, বিরিয়ানি কম খাবেন, ভাত খাওয়াই ভালো। গরু বা খাসির মাংস খাওয়া যাবে, পরিমাণটা অতিরিক্ত যাতে না হয় এবং তেল বা চর্বি যেন কম থাকে।
হৃদ্রোগে আক্রান্ত, বিশেষ করে প্রবীণেরা অবশ্যই তৈলাক্ত মাংস কমিয়ে খাবেন। সারা বছর তাঁরা যে ধরনের নিয়মকানুন পালন করেন, খাওয়াদাওয়ার ব্যাপারে কোরবানির সময়ও সেভাবে চলাই ভালো। কোরবানির মাংস একটু-আধটু খেলে শরীরের যে খুব ক্ষতি হয়ে যাবে তা নয়, তবে সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। যাঁদের ওজন বেশি, তাঁদের অবশ্যই ঈদের সময় খাওয়ার ব্যাপারে বিশেষভাবে সতর্ক থাকতে হবে।
যাঁরা কিডনির সমস্যায় ভোগেন, তাঁদের প্রোটিনজাতীয় খাদ্য কম খেতে বলা হয়। তাই মাংস খাওয়ার ব্যাপারে আরও সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। কোনোক্রমেই অতিরিক্ত মাংস খাওয়া ঠিক হবে না। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী সারা বছরের মতো ঈদের সময়ও একই খাবার খাওয়াই ভালো।