ও ভ্রমণকন্যা গো, পাহাড়ে, সমুদ্রে জাগো

‘ট্রাভেলেটস অব বাংলাদেশ-ভ্রমণকন্যা’ নারীদের ভ্রমণ সংগঠন। ভ্রমণের মাধ্যমে নারীর ক্ষমতায়নের লক্ষ্য নিয়ে কাজ করে চলেছে তারা। ২৭ নভেম্বর ছিল সংগঠনটির পঞ্চম বর্ষপূর্তির আয়োজন।

অতিথিদের সঙ্গে ভ্রমণকন্যার কার্যকরী কমিটির সদস্যরা, সঙ্গে আছে একজন আগামী দিনের ভ্রমণকন্যাও!
ছবি: সংগৃহীত

অনুষ্ঠানে অপ্রত্যাশিত আগমন ঘটল রাহুল আনন্দের। প্রিয় শিল্পীর আগমনে রীতিমতো শোরগোল বেধে গেল মিলনায়তনে উপস্থিত ‘ভ্রমণকন্যা’দের মধ্যে। অনির্ধারিত সূচিতে মঞ্চেও ডাক পড়ল জলের গানের এই শিল্পীর। মঞ্চে দাঁড়িয়ে তিনি শোনালেন বিশ্ববিদ্যালয়জীবনে কীভাবে ভ্রমণে আগ্রহী হয়ে উঠলেন, সেই কাহিনি। বললেন, এই ভ্রমণই তাঁকে কথা ও সুরের সাক্ষাৎ পাইয়ে দিয়েছে। রাহুল আনন্দের ভাষায়, ‘যেখানে যাই, চোখ মেলি পরমের সৃজন দেখি, দু-একটি কথার ভেতর সুর লাগিয়ে দিই, ওতেই গান!’

গাইছেন রাহুল আনন্দ

উপস্থিত ভ্রমণকন্যাদের পক্ষ থেকে ততক্ষণে গানের আবদার আসতে শুরু করেছে। রাহুল আনন্দও ‘দু-একটি কথার ভেতর’ সুর লাগিয়ে দিলেন, ‘ও ভ্রমণকন্যা গো, পাহাড়ে, সমুদ্রে জাগো/ সবুজ মাঠে সিঁথকাটা পথ, তোমার চরণ ধুলায় ধন্য গো/ ও ভ্রমণকন্যা গো’!

তাঁর সঙ্গে সোল্লাসে সুর মেলালেন ট্রাভেলেটস অব বাংলাদেশ-ভ্রমণকন্যার সদস্যরা। প্রাণের স্পন্দনে জেগে উঠল পুরো মিলনায়তন।

‘ট্রাভেলেটস অব বাংলাদেশ-ভ্রমণকন্যা’ নারীদের ভ্রমণ সংগঠন। ভ্রমণের মাধ্যমে নারীর ক্ষমতায়নের লক্ষ্য নিয়ে কাজ করে চলেছে তারা। গত ২৭ নভেম্বর ছিল সংগঠনটির পঞ্চম বর্ষপূর্তির আয়োজন। রাজধানীর জাতীয় জাদুঘরের বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব মিলনায়তনে উপস্থিত হয়েছিলেন ঢাকাসহ সারা দেশ থেকে আসা ভ্রমণকন্যার সদস্যরা। প্রধান অতিথি ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি।

কুঁড়েঘর ব্যান্ডের পরিবেশনা

সংক্ষিপ্ত বক্তব্যের সময় তিনি বললেন, ‘২০১৬ সালে চিকিৎসক মানসী সাহা ও সাকিয়া হকের হাত ধরে যে “ট্রাভেলেটস অব বাংলাদেশ-ভ্রমণকন্যা” যাত্রা করে, তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ৬২ হাজার নারী। কী দারুণ কাজ করছে তারা।’

এমন বিচিত্র পরিবেশনায় ভ্রমণকন্যার প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন হয়ে উঠেছিল উৎসবমুখর

‘ভ্রমণকন্যা’র মোড়ক উন্মোচন

দেশের নারীদের ভ্রমণের জন্য যেমন নতুন পথ তৈরি করেছে ‘ট্রাভেলেটস অব বাংলাদেশ-ভ্রমণকন্যা’, তেমনি নারীদের ভ্রমণের গল্পগুলোকেও সবার সামনে তুলে আনার প্রয়াস তাদের। সেই উদ্দেশ্যে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে আয়োজন করেছিল ভ্রমণবিষয়ক লেখালেখির প্রতিযোগিতা। যেকোনো বয়সী নারীর সুযোগ ছিল সে প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের।

সেরা লেখার পুরস্কার দেওয়ার সময় আয়োজকেরা জানালেন, এবারের প্রতিযোগিতায় ১১২ জন নারীর লেখা জমা পড়েছিল। নির্বাচন করেছেন তিন বিচারক—আহসান হাবীব, তারেক অণু ও রাকিব কিশোর। নির্বাচিত লেখা নিয়ে প্রকাশিত হয়েছে ঝলমলে ভ্রমণকন্যা ম্যাগাজিন। প্রকাশনাটির চতুর্থ সংখ্যা এটি। ভ্রমণের অভিজ্ঞতা ছাড়াও ট্রাভেলেটস অব বাংলাদেশের নানা কর্মসূচির বিবরণ আছে এতে।

ভ্রমণকন্যার চার সদস্য

অতিথিদের হাতে মোড়ক উন্মোচন হয় ম্যাগাজিনের। সেই সঙ্গে সেরা লেখকের পুরস্কার ঘোষণাও করা হয়। পুরস্কার বিজয়ীরা হলেন প্রাপ্তি অম্লান, মমতাজ জাহান, অবনী রায়, শিল্পী জান্নাত ও তাসনিয়া আহমেদ। পাঁচজন সেরা লেখক পেয়েছেন ইউএস-বাংলার পক্ষ থেকে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন গন্তব্যে যাওয়ার টিকিট। এ ছাড়া পাঠক সমাবেশ ও সিআরইর পক্ষ থেকে ছিল বই পুরস্কার।

নৃত্য পরিবেশন করছেন শিল্পীরা

দ্বিতীয় শ্রেণিপড়ুয়া নাফাসাত নুজহাত সামারা, তৃতীয় শ্রেণির জান্নাতুল মাওয়া রিহা ও তাশরীফ খান আদৃতার মতো ‘খুদে পর্যটকদের’ ভ্রমণকাহিনিও স্থান পেয়েছে ভ্রমণকন্যা ম্যাগাজিনে।

আপন ঘর ব্যান্ডের পরিবেশনা

গানে গানে বিদায়

প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজনের শেষ বেলায় ছিল কুঁড়েঘর ও আপন ঘর ব্যান্ডের পরিবেশনা। শিল্পীদের সঙ্গে সুর মিলিয়েছে ভ্রমণকন্যারা। তারও আগে নতুন এক কার্যক্রমের ঘোষণা দিয়েছে ট্রাভেলেটস অব বাংলাদেশ। তারা দেশের নানা প্রান্তে ঘুরতে যায়। এখন থেকে দলেবলে ভ্রমণে গেলে, সেখানে পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম পরিচালনা করবে। ভ্রমণকন্যা এই উদ্যোগের নাম দিয়েছে ‘পরিচ্ছন্ন ভ্রমণ’।