কন্ডোমিনিয়ামে মিলছে বাড়তি সুযোগ–সুবিধা
উচ্চবিত্ত ও মধ্যবিত্তদের জন্য বিভিন্ন স্থানে তৈরি হচ্ছে কন্ডোমিনিয়াম প্রকল্প। মানুষের প্রয়োজন বুঝে, আনুষঙ্গিক সুবিধাসহ তৈরি হচ্ছে এসব বসতি
সারি সারি আধুনিক অ্যাপার্টমেন্ট ভবন। খোলামেলা পরিবেশ। ভবনগুলোর মাঝে বাচ্চাদের খেলার জন্য সবুজ মাঠ। পাশেই সাজানো–গোছানো সুইমিংপুল। প্রাতর্ভ্রমণের জন্য রয়েছে হাঁটার জায়গা। বাসিন্দাদের সামাজিক অনুষ্ঠানের জন্য করা হয়েছে কনভেনশন হল। আছে বিদ্যালয়, সুপারশপ, মসজিদসহ আরও কিছু সুযোগ–সুবিধা।
রাজধানীর মিরপুরে ১৬ একর জমিতে এ রকম আবাসন প্রকল্প গড়ে তুলেছে রাকিন ডেভেলপমেন্ট সিটি। ফ্ল্যাটের সঙ্গে আনুষঙ্গিক বিভিন্ন সুযোগ–সুবিধাসংবলিত এ ধরনের প্রকল্পকে বলে কন্ডোমিনিয়াম বা গেটেড কমিউনিটি। দ্রুত জনপ্রিয়তা পাওয়ায় মিরপুর, মোহাম্মদপুর, রামপুরা, মালিবাগ, কাঁচপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় নতুন নতুন কন্ডোমিনিয়াম প্রকল্প হাতে নিয়েছে আবাসন প্রতিষ্ঠানগুলো। এমনও প্রতিষ্ঠান আছে, যারা একসঙ্গে তিনটি কন্ডোমিনিয়াম প্রকল্পের কাজ করছে।
ইউরোপ-আমেরিকার পাশাপাশি এশিয়ার বিভিন্ন দেশে কন্ডোমিনিয়াম প্রকল্প আছে। সেসব দেশে অভিজাত কন্ডোমিনিয়াম যেমন আছে, তেমনি মধ্যবিত্তের জন্যও কন্ডোমিনিয়াম আছে। স্থানীয় মানুষের চাহিদা অনুযায়ী একেক দেশে একেক রকম প্রকল্প। সুযোগ-সুবিধাও কিছুটা ভিন্ন। তেমনি বাংলাদেশেও মধ্যবিত্ত ও উচ্চমধ্যবিত্তের কথা মাথায় রেখে এ ধরনের প্রকল্প হাতে নিচ্ছে বিভিন্ন আবাসন প্রতিষ্ঠান। তাতে একটি সমাজের প্রয়োজন অনুসারে সুযোগ-সুবিধা থাকছে।
বর্তমানে একসঙ্গে তিনটি এলাকা—মিরপুর ১১ ও ১৫ এবং মোহাম্মদপুরে কন্ডোমিনিয়াম আবাসন প্রকল্প করছে নাভানা রিয়েল এস্টেট। এর মধ্যে মিরপুর ১৫–তে একসঙ্গে তিনটি প্রকল্প। এসব কন্ডোমিনিয়াম প্রকল্পে দুই হাজারের বেশি ফ্ল্যাট হবে। সব কটি প্রকল্পেই খেলার মাঠ, সুইমিংপুল, ব্যায়ামাগার, প্রাক্–প্রাথমিক বিদ্যালয়, কমিউনিটি হল, হাঁটার জায়গা, সুপারশপ, মসজিদসহ বিভিন্ন সুযোগ–সুবিধা থাকবে।
বাড়তি সুযোগ–সুবিধার কারণে যে ফ্ল্যাট কিনতে বাড়তি অর্থ ব্যয় করতে হবে, বিষয়টি কিন্তু তা নয়। আবাসন প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা জানালেন, কন্ডোমিনিয়াম প্রকল্প সাধারণত কিছুটা বড় জমিতে করা হয়। আর রাজউকের নিয়ম মেনে ভবন করতে গেলে কিছু জায়গা ছাড়তে হয়। সেই জায়গাতে সহজেই খেলার মাঠ, সুইমিংপুল, ব্যায়ামাগার, প্রাক্–প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ অন্যান্য সুযোগ–সুবিধা নিশ্চিত করা যায়। এ ক্ষেত্রে অবকাঠামো নির্মাণ ছাড়া অন্য ব্যয় নেই।
মিরপুর–১১–তে নাভানার কন্ডোমিনিয়াম প্রকল্পে ১৭০০–২২০০ বর্গফুটের ফ্ল্যাট কিনতে প্রতি বর্গফুটে খরচ করতে হবে ৫ হাজার ৭০০ থেকে ৬ হাজার ২০০ টাকা। প্রতিষ্ঠানটির মিরপুর–১৫–তে তিন কন্ডোমিনিয়াম প্রকল্পে ফ্ল্যাট কিনতে প্রতি বর্গফুটে খরচ পড়বে ৬ হাজার থেকে ৭ হাজার ২০০ টাকা। এখানে ফ্ল্যাটের আকার ১৩২৮–২০৪৮ বর্গফুট। ডুপ্লেক্স ফ্ল্যাটও আছে। আবার দুটি ফ্ল্যাটকে একত্র করেও বিক্রি করছে প্রতিষ্ঠানটি। মোহাম্মদপুরে নাভানার কন্ডোমিনিয়ামের প্রতি বর্গফুটের দাম ৬ হাজার ৫০০ থেকে ৭ হাজার ৪০০ টাকা। এই প্রকল্পে ফ্ল্যাটের আকার ১৫০০–২৩০০ বর্গফুট। ইতিমধ্যে মিরপুর ১১ ও ১৫–তে নির্মাণাধীন কন্ডোমিনিয়াম প্রকল্পের বেশ কিছু ফ্ল্যাট বুঝিয়ে দিয়েছে নাভানা রিয়েল এস্টেট কর্তৃপক্ষ।
জানতে চাইলে নাভানা রিয়েল এস্টেটের জ্যেষ্ঠ সহকারী মহাব্যবস্থাপক মোহাম্মদ জাকির হোসেন বলেন, ‘সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মানুষের চাহিদার পরিবর্তন হচ্ছে। ফ্ল্যাটের গ্রাহকদের বড় অংশই বর্তমানে বাচ্চাদের খেলার জায়গাসহ বিভিন্ন সুযোগ–সুবিধা চান। চাহিদা থাকায় আমরাও নিত্যনতুন কন্ডোমিনিয়াম প্রকল্প হাতে নিচ্ছি।’ দামের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘নির্মাণসামগ্রীর দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে গেছে। ফলে প্রতি বর্গফুটে কমপক্ষে ৩০০ টাকা বাড়াতে হবে শিগগিরই। তবে এখনো আমরা ফ্ল্যাটের মূল্য বৃদ্ধি করিনি।’
রাজধানীতে প্রথম কন্ডোমিনিয়াম প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে আবাসন খাতের শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠান শেল্টেক্। মিরপুর মাজার রোডে ৬৩ কাঠা জায়গার ওপর গড়ে তোলা হয় শেল্টেক্ বীথিকা। এ কন্ডোমিনিয়াম প্রকল্পে ফ্ল্যাট রয়েছে ১৮৪টি। পাশাপাশি রয়েছে ব্যায়ামাগার, সুইমিংপুল, খেলার জায়গা, সুপারস্টোরসহ আধুনিক সব সুযোগ-সুবিধা।
এই প্রকল্পের ধারাবাহিকতায় মোহাম্মদপুরে নতুন একটি কন্ডোমিনিয়াম প্রকল্প হাতে নিয়েছে শেল্টেক্। ৮১ কাঠার জমির ওপর শেল্টেক্ উইন্ডফ্লাওয়ারে চারটি ১০ তলা ভবন নির্মিত হবে। প্রকল্পটিতে ১ হাজার ৪৪০ বর্গফুটের ১৯২টি ফ্ল্যাট থাকবে। এখানকার বাসিন্দাদের জন্য খেলার মাঠ, সুইমিংপুলসহ অন্যান্য সুযোগ–সুবিধা থাকবে। ভবনের চারপাশে থাকবে বিভিন্ন প্রজাতির গাছ।
জানতে চাইলে শেল্টেকের ব্র্যান্ড ও জনসংযোগ বিভাগের প্রধান শফিনাজ ঝুমা বলেন, ‘কন্ডোমিনিয়াম প্রকল্পের ফ্ল্যাটের চাহিদা থাকায় বীথিকার পর উইন্ডফ্লাওয়ার প্রকল্প হাতে নিয়েছে শেল্টেক্। মাঝে বাড্ডা শেল্টেক্ রেনুকবির নামে আরেকটি কন্ডোমিনিয়াম ধাঁচের প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছি আমরা। সেটি পুরোপুরি কন্ডোমিনিয়াম না হলেও সেখানে কিছু বাড়তি সুযোগ–সুবিধা ছিল।’ তিনি জানান, শেল্টেক্ বীথিকায় কয়েকটি রেডি ফ্ল্যাট অবিক্রীত রয়েছে।