
নতুন একটি শিশু এল পরিবারে। সবার খুশির শেষ নেই। কিন্তু এই নবজাতকের জন্য চাই বাড়তি যত্ন। যা খুশির আতিশয্যে অনেক সময় সঠিকভাবে করা হয় না। এতে নবজাতকের অসুস্থ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থেকে যায়।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের শিশুস্বাস্থ্য বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক প্রণব কুমার চৌধুরী জানাচ্ছেন কেমন করে দেখভাল করতে হবে নবজাতক। তিনি বলেন, প্রথমেই শিশুকে তাপমাত্রা থেকে সুরক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে। আর জন্মের প্রথম ঘণ্টার মধ্যেই মায়ের বুকের দুধ পান করাতে হবে। বাচ্চাকে প্রথম তিন দিন গোসল করানো যাবে না। মা ছাড়া বাইরের লোকের সংস্পর্শে কম আনতে হবে। আর যেসব নবজাতক নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্রে থাকে, তাদের ক্ষেত্রে অবশ্যই সেখানকার সব নিয়ম মেনে চলতে হবে। এ বিষয়ে তিনি দিয়েছেন আরও কিছু পরামর্শ।
নবজাতকের পরিচ্ছন্নতা
পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন জীবাণুমুক্ত পোশাক-পরিচ্ছদ বা ডায়াপার ব্যবহার করতে হবে।
ঈষদুষ্ণ জীবাণুমুক্ত পানির ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।
প্রতিবার পায়খানা-প্রস্রাবের পর অপরিষ্কার কাপড় বদলে ফেলুন। পায়খানা-প্রস্রাবের স্থান জীবাণুমুক্ত তুলা ঈষদুষ্ণ পানিতে ডুবিয়ে আলতোভাবে পরিষ্কার করে দিন। মেয়ে নবজাতকের বেলায় সামনে থেকে পেছন দিকে নরম স্পর্শে পরিষ্কার করতে হবে। এতে মূত্রতন্ত্রে সংক্রমণ হওয়ার ঝুঁকি কমে আসে। নবজাতকের শরীরে যদি র্যাশ দেখা যায় এবং তিন দিনের মধ্যে না সারে, তবে সংক্রমণের আশঙ্কা থাকতে পারে। তাই শিশুবিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।
বুকের দুধ খাওয়ানো
নবজাতককে ‘যখন চায়, যতক্ষণ চায়’—এ নীতিতে বুকের দুধ পান করাবেন। প্রতিবার বুকের দুধ পানকালে শিশু কিছু না কিছু বাতাস গিলে ফেলে। এ বাতাস বের করে দেওয়ার জন্য দুধপানের পর নবজাতকের মাথা আলতোভাবে কাঁধে রেখে পিঠে হাত বুলিয়ে দিন। দুধপানের পর ১০ থেকে ১৫ মিনিট বসিয়ে রাখার অবস্থায় রাখুন। দুধ খাওয়ানোর পরপরই ওকে শুইয়ে দিলে দুধ উগলে ফেলতে পারে।
গোসল করানো
নবজাতকের নাভি শুকাতে এক থেকে চার সপ্তাহ পর্যন্ত লেগে যেতে পারে। এ সময় পর্যন্ত সপ্তাহে দু-তিনবার স্পঞ্জ বাথ দিতে হবে।
এ জন্য যেসব সামগ্রীর প্রয়োজন: পরিষ্কার জীবাণুমুক্ত ঈষদুষ্ণ পানি, অল্প ক্ষারের সাবান, শুকনো ও পরিচ্ছন্ন জীবাণুমুক্ত পোশাক ও তোয়ালে।
নবজাতকের জন্য বিশেষ বাথটাব ব্যবহার করা হলে দু-তিন ইঞ্চির মতো হালকা গরম পানিতে ভর্তি রাখতে হবে। তবে, নিজের কবজি ডুবিয়ে আগেই গরম অনুভব করে নিন। নবজাতকের নাক, কান, কানের পাশ, দেহের ভাঁজ পরিচ্ছন্ন রাখতে সচেষ্ট হোন।
ঘুমানোর কলাকৌশল
নবজাতক ২৪ ঘণ্টার প্রায় ১৬ ঘণ্টা বা এরও বেশি সময় ঘুমিয়ে কাটায়। প্রতিবার প্রায় তিন-চার ঘণ্টা করে ঘুমোয়। খুব নরম বা তুলতুলে নয়—এমন বিছানার ওপর ওকে শোয়াতে হবে; যাতে উল্টে গিয়ে তার নাকমুখ গুঁজে না যায়।