পোশাক
জমকালো শাড়িতে ঈদের সাজ
দেশীয় পোশাক হিসেবে শাড়ির আবেদন সব সময়ই ছিল, আছে, রয়ে যাবে। শাড়ির সৌন্দর্য হলো যেকোনো সময়, জায়গায় এটি পরা যায়। তাই যেকোনো উৎসবে বাঙালির নারীদের সাজে এখনো অপ্রতিদ্বন্দ্বী শাড়ি। ঈদ সামনে রেখে জামদানি, সিল্ক, কাতান, মসলিনের ছয় গজের ক্যানভাসে তুলে ধরা হচ্ছে জমকালো নকশা।
দুই বছর পর এবারের ঈদে আশা করা যায় বাড়ির বাইরে বের হওয়া যাবে। উদ্যাপনের প্রস্তুতিও তা-ই আলাদা। এ কারণে প্রাধান্য পাচ্ছে জমকালো নকশা। অন্যদিকে গরমের জন্য আরামের ওপরও জোর দিচ্ছেন ডিজাইনাররা। সেদিক থেকে চিন্তা করলে গরমে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করবেন, এমন উপকরণের ওপর ভারী কাজ কিংবা জমকালো নকশার শাড়ি তালিকার ওপরে রাখা যায়।
ছয় গজের লম্বা কাপড়টি ডিজাইনারদের কাছে ক্যানভাসের মতো। সাদা কিংবা রঙিন এই ক্যানভাসে তাঁরা ফুটিয়ে তোলেন নানা নকশা। সেখানে সোনালি-রুপালি জরিতে, অ্যাপ্লিকে, ভারী ব্লকে কিংবা নকশিকাঁথায় তাঁরা ফুটিয়ে তোলেন নানা গল্প। জামদানি, মসলিন, হালকা নকশার কাতান, সুতি কিংবা সিল্কের উপকরণের ওপর তুলে ধরা হচ্ছে নতুন নতুন নকশা। ১২ হাতের শাড়িতে কখনো একটি নকশাই রাজত্ব করেছে, কখনোবা দুটি–তিনটি নকশায় ভাগ করে সাজানো হয়েছে পুরো শাড়ি।
নকশার পুনরাবৃত্তি নেই বললেই চলে, প্রতিটি ফ্যাশন হাউসই নতুন কিছু করার চেষ্টা করেছে। পাড়, কুঁচি, আঁচল বেয়ে নকশার ওঠা-নামা দেখতে দারুণ লাগে। কখনো একই নকশা তৈরি করছে নান্দনিকতা, কখনো ভিন্ন ভিন্ন নকশা পাশাপাশি অবস্থান নিয়ে প্রকাশ করছে ভিন্নতা। শাড়ির ওপর দেশীয় নকশার আবেদন সব সময়ই ছিল। জামদানি, ফুল, পুঁতি, কাঁথা ফোঁড়ের নকশার মাধ্যমে তৈরি করা হয়েছে ভিন্নতা, জানালেন কে ক্র্যাফটের স্বত্বাধিকারী খালিদ মাহমুদ। একইভাবে পাশ্চাত্যের নকশাও শাড়িতে আঁকা হচ্ছে। মেক্সিকান চিত্রশিল্প, বিদেশি নানা ফুল, জ্যামিতিক নকশা, ডোরাকাটা প্রভৃতিও দেখা যাচ্ছে। এর বাইরে ন্যাচারাল ডাই, মোমবাটিক, চুনরি প্রিন্ট তো আছেই। অনেকেই নির্দিষ্ট কোনো থিমের ওপর কাজ করেননি। জারদৌসি আর অ্যাপ্লিকের কাজের ওপর প্রাধান্য দিয়েছেন এবার ড্রেসিডেলের স্বত্বাধিকারী মায়া রহমান। সিল্ক, মসলিন আর জর্জেটের শাড়ির ওপর করা হয়েছে এসব কাজ। প্যাস্টেল রঙের কিছু শাড়ি দিনে পরার জন্য আলাদা করেছেন তিনি, রাতের জন্য বারগেন্ডি, মেরুন আর কালো রঙের কিছু শাড়ি।
১০০ কাউন্টের মিহি সুতার জামদানির আভিজাত্যই অন্য রকম। জামদানির ওপর জরি সুতার কাজ যেমন নজর কাড়ে, তেমনি একই রঙের কাজও সুন্দর লাগে। বাইরের গরমের কথা চিন্তা করে পাতলা সুতির শাড়িগুলো দেখলেও এখন আরাম লাগে। মসলিনের ভেতর টিস্যু ব্যবহার করে শাড়ি বানানো হচ্ছে, জানালেন টাঙ্গাইল শাড়ি কুটিরের স্বত্বাধিকারী মুনিরা এমদাদ। এর ওপর করা হচ্ছে ভারী জরির পেটানো কাজ। কাতান শাড়ি ক্রেতারা সাশ্রয়ী বলে মিরপুরের কাতানই বেশি কিনছেন বলে জানালেন তিনি। রাজশাহী সিল্কের পাশাপাশি পিউর ক্রেপ সিল্কেরও এবার চাহিদা আছে। অ্যান্ডি সিল্ক, মলমল কাপড়, চান্দেরি, পাতলা খাদি, কোটা, তাঁত, জর্জেট, শিফনের শাড়িগুলোও পিছিয়ে নেই।
শাড়ির ওপর কাজের অন্যতম জনপ্রিয় মাধ্যম হিসেবে এগিয়ে আছে ব্লক। অনেকেই খারির কাজ পছন্দ করছেন। ব্লকের ওপর যোগ করা হচ্ছে হাতের সুতার কাজ। ডিজিটাল প্রিন্টের মাধ্যমেও শাড়ির ওপর বেশ ভিন্নধর্মী নকশা আনা হয়েছে। ভারমিলিয়নের অন্যতম স্বত্বাধিকারী ও ডিজাইনার ইমতিয়াজ ইসলাম ও ইফ্ফাত আরা জানালেন ঐতিহ্যবাহী ও সমসাময়িক দুটি ধারাই তুলে ধরেছেন ডিজিটাল প্রিন্টের মাধ্যমে। শাশুড়ি গাজী রওশন আরার বিয়ের শাড়ি থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে ‘রওশন’ শিরোনামের শাড়িতে রুপালি জরির কাজ করেছেন তাঁরা। ফয়েলের কাজও থাকছে, সীমিত পরিসরে। প্রাকৃতিক রঙের কাজ মূলত সুতি ও সিল্কের ওপরই করা হয়েছে। শিবরির ওপর এবার অনেকেই কাজ করছেন। শাড়িতে শুধু দুই থেকে তিনটি শেডে রাঙানো হয়েছে, দেওয়া হয়নি কোনো নকশা। পাশাপাশি আঁচল আর মূল জায়গায় বিমূর্ত কাজও করা হয়েছে। আবার শুধু কুঁচির মধ্যেই নকশা সীমাবদ্ধ রাখা হয়েছে। বাকি শাড়িতে কোনো নকশা নেই।
উপাদান ও নকশা, দুই দিক থেকেই শাড়িতে এবার তাই অনেক বৈচিত্র্য। এই বৈচিত্র্যের মধ্য থেকে বেছে নিতে পারেন আপনার পছন্দের ঈদের শাড়ি। কেননা, এবারও মনে হয় বয়স-নির্বিশেষে মেয়েদের পছন্দের পোশাকের তালিকায় ওপরের দিকেই থাকবে শাড়ি।