কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলা সদর মানুষের কোলাহলে মুখর থাকে সারা দিন। কলেজশিক্ষক জাকির হোসেনের সেখানেই বাড়ি। তাঁর বাড়ির সামনে সাড়ে তিন শতক জমির জলাশয়। সেই জলাশয়ে এখন ফুটছে শত শত পদ্ম। তবে এই পদ্ম আপনা-আপনি ফোটেনি, এর পেছনে আছে জাকিরের পদ্মপ্রেম। পদ্মে ভরা জলাশয়ের পাশে বসে সেই গল্পই শোনালেন জাকির হোসেন, ‘২০১৯ ও ২০২০ সালে দুইবার চারা লাগিয়েছিলাম। দুবারই ব্যর্থ হয়েছি। ২০২১ সালে আটটি চারা লাগিয়েছিলাম। পাঁচটি গাছ হয়েছিল। গত বছর এই পাঁচটি গাছ থেকে অনেক পাতা হয়েছিল। তিনটি কলি এসেছিল। দুটি কলি শিশুরা তুলেছে। ফুটেছিল মাত্র একটি। লাগানোর পর মনে মনে ভাবতাম, একটি ফুল যদি ফোটে, তবেই আমার সব পরিশ্রম সার্থক।’
যে ফুল দেখার জন্য আমি দূরে যেতাম, সেই ফুল এখন আমার বাড়িতে। তাও আবার শত শত
পদ্মফুল জাকির হোসেনের ভীষণ পছন্দের। বাড়ির সামনের ছোট্ট জলাশয়ে পদ্ম ফুটবে কি না, এ নিয়ে খুব সংশয় ছিল। অনেকে তাঁর এই প্রচেষ্টা দেখে ঠাট্টা-তামাশাও করেছেন। পরপর দুই বছর ব্যর্থ হলেও তিনি থেমে থাকেননি। তৃতীয় বছর একটি পদ্ম তাঁর দেখার সুযোগ হয়েছে। পরের বছরই যে সম্পূর্ণ জলাশয় পদ্মে ভরে উঠবে, এটা তিনি কল্পনাও করতে পারেননি।
গত ২৬ কি ২৭ মার্চ প্রথম কলি আসে। তখন জলাশয়টিতে পানি ছিল না। একটি কলি আসতে দেখে তিনি বাসা থেকে পানির লাইন টেনে এটি পানিতে পূর্ণ করেন। এর মাসখানেকের মধ্যেই দুই শতাধিক কলি এসেছে। অনেক ফুল ফুটেছে। টুনটুনিপাখি বাগানে উড়ছে। কথা বলতে বলতেই জাকির হোসেন পদ্মবাগান থেকে আগাছা পরিষ্কার করতে শুরু করলেন। তিনি নিজেই এই বাগানের পরিচর্যা করেন। পরিচর্যার কাজ করতে করতে বলছিলেন, ‘যে ফুল দেখার জন্য আমি দূরে যেতাম, সেই ফুল এখন আমার বাড়িতে। তাও আবার শত শত। অনেকেই এই ফুল দেখতে আসছে। সত্যিই, আমার আনন্দের সীমা নেই।’