শখেই রান্না করেন অভিনেত্রী তাসনিয়া ফারিণ। ঈদসহ বিশেষ দিনগুলোতে করেন বিশেষ পদ। নকশার পাঠকদের জন্য কয়েক পদের রান্নার রেসিপি দিয়েছেন তরুণ প্রজন্মের এই অভিনেত্রী। বলেছেন তাঁর রান্নাবান্নার গল্প।
অভিনয়ে ব্যস্ততার কারণে রান্না করার জন্য খুব একটা সময় মেলে না। তবে বিশেষ দিনে বিশেষ কিছু রাঁধতে তো মন চায়ই। কথা হচ্ছিল এই সময়ের জনপ্রিয় অভিনেত্রী তাসনিয়া ফারিণের সঙ্গে। জানালেন রান্নার ব্যাপারে বেশ খুঁতখুঁতে তিনি। যেখানে যে উপকরণ ব্যবহার প্রয়োজন, সেখানে সেই উপকরণের ব্যবহার তাঁর লাগবেই। যখন যতটা রান্না করেন, সেটাই পরিবারের সদস্যদের প্রশংসা কুড়ায়।
ভালোবাসেন মা শারমীন আখতার ও মেজো মামির হাতের রান্না খেতে। ফারিণ বললেন, ‘রান্নার হাতেখড়ি মায়ের কাছেই। পাশাপাশি ইউটিউব দেখেই রান্না করি।’ ফারিণের হাতে রান্না গরুর শাহি রেজালা, ফুলকপির ম্যানচুরিয়ান, কাস্টার্ড, মাহালাবিয়া স্বাদে অনন্য হয়ে ওঠে। করোনার সংক্রমণ এড়াতে এবারও ঈদের দিন বাসায় পরিবারের সদস্যদের সঙ্গেই কাটাবেন ফারিণ। এই দিন রান্নাঘরে মা–মেয়ে মিলে রাঁধবেন ঈদের রান্না।
নকশার প্রচ্ছদের জন্য ছবি তোলার ফাঁকে ফাঁকে ফারিণ জানালেন, রান্নার সময় মায়ের সহযোগিতার কথা। আসলে তাঁকে দেখেই তো রান্না শেখা। তাই মা সহযোগিতা করলে কেন জানি আলাদা একটা ভালোলাগা কাজ করে।
নকশার পাঠকদের জন্য ঈদের পাঁচটি রান্না দিয়েছেন তাসনিয়া ফারিণ।
মাংসের কাবাব
উপকরণ
গরুর মাংসের কিমা ২৫০ গ্রাম, পানিতে ভেজানো বুটের ডাল ৪ টেবিল চামচ, আদাবাটা ১ চা–চামচ, রসুনবাটা ১ চা–চামচ, শুকনা মরিচ ৪টি, ডিম ২টি, কাঁচা মরিচ ২টি, জিরাগুঁড়া আধা চা–চামচ, ধনেগুঁড়া আধা চা–চামচ, তেল পরিমাণমতো, শামি কাবাব মসলাগুঁড়া ১ টেবিল চামচ, লেবুর রস ১ চা–চামচ পেঁয়াজ বেরেস্তা আধা কাপ, লবণ স্বাদমতো, পানি ২ কাপ,বিস্কুটের গুঁড়া পরিমাণমতো।
প্রণালি
প্রথমে হাঁড়িতে মাংসের কিমা, বুটের ডাল, আদাবাটা, রসুনবাটা, জিরা, ধনে, এলাচি, শুকনা মরিচ, লবণ, লেবুর রস, শামি কাবাব মসলা ২ কাপ পানি দিয়ে সেদ্ধ করে নিন। পানি শুকিয়ে গিয়ে মাংস নরম হয়ে এলে চুলা থেকে নামিয়ে ঠান্ডা করে নিন। এবার সেদ্ধ মাংসসহ পুরো মিশ্রণ চপার দিয়ে মিহি করে নিন। এবারে ওই মিশ্রণে ডিমের কুসুম ও মরিচগুঁড়া ভালো করে মিশিয়ে নিন। মিশ্রণ অল্প পরিমাণে নিয়ে হাতের চাপে কাবাব আকারে গড়ে নিন। এদিকে প্যানে তেল দিয়ে গরম হতে দিন। এখন ১টি করে কাবাব নিয়ে ডিমের সাদা অংশে ডুবিয়ে বিস্কুটের গুঁড়ায় মাখিয়ে বাদামি করে ভেজে নিন।
মাহালাবিয়া
উপকরণ
দুধ আধা লিটার, চিনি আধা কাপ, গোলাপজল আধা চা–চামচ, কর্নফ্লাওয়ার ৩ টেবিল চামচ, কুকিং ক্রিম ৩ টেবিল চামচ।
সিরাপের জন্য: চিনি আধা কাপ ও পানি আধা কাপ, রেড ফুড কালার দুই ফোঁটা, গোলাপজল আধা চা–চামচ, লেবুর আধা চা–চামচ, সাজানোর জন্য শুকনা নারকেলের গুঁড়া ও চেরি।
প্রণালি
দুধ ঠান্ডা করে সব উপকরণ একসঙ্গে মিশিয়ে নিতে হবে, যাতে দানা না বাঁধে। এবার মাঝারি আঁচে চুলায় দিয়ে অনবরত নাড়তে হবে। মিশ্রণটি একটু ঘন হয়ে এলে নামিয়ে ঠান্ডা করে ফ্রিজে রাখতে হবে। এদিকে শিরার সব উপকরণ জ্বাল দিয়ে শিরা তৈরি করে নিন। শিরা ঠান্ডা হলে মাহালাবিয়ার মিশ্রণটি বের করে ওপরে ঢেলে দিন। এবার শুকনা নারকেলগুঁড়া ও চেরি দিয়ে সাজিয়ে পরিবেশন করুন।
ঝরঝরে সেমাই
উপকরণ
সেমাই ২০০ গ্রাম, চিনি আধা কাপ, এলাচি ৪টি, দারুচিনি ২ টুকরা, তেজপাতা ২টি, ঘি ২ টেবিল চামচ, নারকেল কোরানো ২ টেবিল চামচ, কিশমিশ, কাজু ও পেস্তাবাদাম পরিমাণমতো ও গুঁড়া দুধ ২ টেবিল চামচ।
প্রণালি
প্রথমে একটা প্যানে মাঝারি আঁচে ঘি গরম করে সেমাই ভেজে নিতে হবে। এবার সেমাই উঠিয়ে একটি পাত্রে রেখে চিনি, গুঁড়া দুধ আধা কাপ দিয়ে পানি দিয়ে ফুটাতে হবে। ফুটে উঠলে সেমাই ও নারকেল কোরানো দিয়ে ততক্ষণ নাড়তে হবে যতক্ষণ না ঝরঝরে হয়। সেমাই ঝরঝরে হয়ে এলে বাদাম, কিশমিশ দিয়ে পরিবেশন করতে হবে।
মটর পোলাও
উপকরণ
সয়াবিন তেল এক কাপের তিন ভাগের এক ভাগ, এলাচি ২টি, দারুচিনি ২ টুকরা, তেজপাতা ২টি, লবঙ্গ ৪টি, পেঁয়াজকুচি ১ কাপ, পোলাওর চাল ২ কাপ, লবণ স্বাদমতো, আদাবাটা ১ চা–চামচ, কাঁচা মরিচ ৪টি, মটরশুঁটি আধা কাপ, ঘি ১ চা–চামচ, কেওড়াজল কয়েক ফোঁটা।
প্রণালি
পোলাওর চাল ভালো করে ধুয়ে পানি ঝরিয়ে রেখে দিন। হাঁড়িতে তেল গরম করে এলাচি, দারুচিনি, লবঙ্গ ও তেজপাতা ভেজে নিন। পেঁয়াজকুচি দিয়ে নরম করে ভাজুন। পোলাওয়ের চাল, লবণ ও আদাবাটা দিয়ে অনবরত নাড়তে থাকুন। এবার মটরশুঁটি দিয়ে দিন। কিছুক্ষণ ভেজে নিয়ে ৪ কাপ ফুটন্ত গরম পানি দিন। এবার কাঁচা মরিচ দিয়ে নেড়ে চুলার আঁচ বাড়িয়ে দিন। পানি ফুটে উঠলে চুলার আঁচ মাঝারি করে ঢাকনা দিয়ে ঢেকে দিন। ঢাকনায় কোনো ছিদ্র থাকলে সেটা কাগজ দিয়ে বন্ধ করে দিন। ১০ মিনিট পর ঢাকনা তুলে নেড়েচেড়ে দিন। ঘি ও কেওড়াজল দিয়ে নেড়ে মৃদু আঁচে আরও ১০ মিনিট দমে রাখুন। পরিবেশন করুন ঝরঝরে ও মজাদার মটর পোলাও।
গরুর শাহি রেজালা
উপকরণ
গরুর মাংস ১ কেজি (হাড়সহ), সয়াবিন তেল সিকি কাপ, ঘি সিকি কাপ, পেঁয়াজকুচি ১ কাপ, আদা ও রসুনবাটা দেড় টেবিল চামচ, হলুদগুঁড়া আধা চা–চামচ, মরিচ স্বাদমতো, লবণ স্বাদমতো, ধনেগুঁড়া ১ টেবিল চামচ, গরমমসলা ১ টেবিল চামচ, কাঁচা মরিচ ফালি ৮টি, কুকিং ক্রিম আধা কাপ, গোলাপজল আধা চা–চামচ, আলুবোখারা ৫টি, পেঁয়াজ বেরেস্তা আধা কাপ, টক দই আধা কাপ ও কাজু ও আমন্ড (আধা কাপ)।
প্রণালি
প্রথমেই বাদাম, টক দই ও অর্ধেক বেরেস্তা ব্লেন্ড করে নিন। এবার একটি ননস্টিক প্যানে তেল ও ঘি সিকি কাপ গরম করে নিতে হবে। হালকা গরম হলে গরমমসলা দিন। গরমমসলা থেকে গন্ধ বের হলে পেঁয়াজকুচি, আদা ও রসুনবাটা দিয়ে কষিয়ে নিতে হবে। যখন কাঁচা মসলার গন্ধ চলে যাবে, তখন একটু পানি দিয়ে হলুদ, মরিচ ও ধনেঁগুড়া দিয়ে নেড়ে দিতে হবে। এরপর বাকি সব মসলা দিয়ে কষাতে হবে। মসলায় তেল ছেড়ে এলে মাংসগুলো দিয়ে একটু বেশি আঁচে কষিয়ে নিয়ে ঢাকনা দিয়ে ১ ঘণ্টা রাখতে হবে। মাঝেমধ্যে নেড়ে দিতে হবে। এক ঘণ্টা পর মাংস সেদ্ধ হয়ে এলে বাদাম ও ব্লেন্ড করা মসলা, আলুবোখারা ও পানি দিয়ে আধা ঘণ্টা জ্বাল দিতে হবে। মাংসের তেল ভেসে উঠলে কাঁচা মরিচ, কুকিং ক্রিম ও গোলাপজল দিয়ে ১০ মিনিট দমে রাখলে তৈরি হয়ে যাবে শাহি রেজালা।