সেলাইয়ের নিপুণতা, ব্যক্তির শারীরিক গঠনের নির্দিষ্ট মাপ, আনুষ্ঠানিক কিন্তু চলতি ধারার কাট—এ সবকিছুই তুলে ধরা হয় টেইলরড কাটের পোশাকে। এ ধরনের পোশাক সাজপোশাকে নিয়ে আসে ভিন্নতা, ব্যক্তিত্বে নিয়ে আসে আত্মবিশ্বাস।
অক্সফোর্ড ডিকশনারিতে ১২৯৭ সালে প্রথম ‘টেইলার’ শব্দটি যুক্ত বা প্রকাশিত হয়। এটি ফরাসি শব্দ ‘টেইলার’ থেকে এসেছে, যার অর্থ ‘কাটা’। সেলাইয়ের কাজটি পশ্চিম ইউরোপে বৈচিত্র্য পেতে শুরু করে। এই সময়ের আগে পোশাকগুলো সাধারণত এক টুকরো কাপড় থেকে তৈরি করা হতো এবং শরীর ঢেকে রাখা বা আড়াল করার উদ্দেশ্যেই তৈরি করা হয়েছিল; গার্মেন্টস প্রস্তুতকারক বা পোশাক পরা ব্যক্তির স্টাইলের ওপর বিশেষ আগ্রহ দেখা যায়নি। টেইলরড কাটের পোশাকটি ব্যক্তির শারীরিক কাঠামো অনুযায়ী বানানো হয়। একদম যথার্থ মাপ নিয়ে। মজার বিষয় হলো, টেইলরড কাটের পোশাকের মাধ্যমে শারীরিক অবকাঠামোতে শুকনা ধাঁচ আনা সম্ভব। তবে এটা করতে গিয়ে পোশাকে আঁটসাঁট ভাব আনা যাবে না কোনোভাবেই।
আমাদের দেশে টেইলর শপ বা দরজির দোকানে গিয়ে নির্দিষ্ট মাপে কাপড় বানানোর ঐতিহ্য বহু পুরোনো। দোকানে তৈরি কাপড়ের চাহিদা অনেক বেশি থাকলেও এ শিল্প এখনো সগর্বে বিরাজমান। তবে পাশ্চাত্যের টেইলরড কাট পোশাকের সঙ্গে এখানকার দরজি দোকানের বানানো পোশাক এক নয়। শব্দটির অর্থ এবং পোশাক পরিবেশনে রয়েছে ভিন্নতা। করপোরেট লুকের পোশাক, এখানে থাকবে না গতানুগতিক আনুষ্ঠানিক লুক। প্রকাশ পাবে চলতি ধারার ছাঁটকাট। এমনটাই জানালেন ফ্যাশন ডিজাইনার আফসানা ঊর্মি। তবে শর্ত হচ্ছে সেলাইয়ে থাকবে নিখুঁত নিপুণতা। পুরো সেটের পোশাকের সম্পূর্ণতায় প্রকাশ পাবে কড়কড়ে ভাব।
আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন নামীদামি ব্র্যান্ডগুলোতে খুঁজে পাওয়া যায় টেইলরড কাটের পোশাক। কেনার আগে মানিব্যাগের দিকে ১০ বার তাকাতে হয়। সেই ধরনের পোশাকটাই আপনি কম দামে ডিজাইনারদের কাছ থেকে করে নিতে পারছেন। এককথায় হাই-অ্যান্ড ( দামি ব্র্যান্ডেড পোশাক) পোশাকগুলোই কিনতে পারবেন অনায়াসে। ফ্যাশন ডিজাইনার রিফাত রহমান জানান, দোকানের তৈরি পোশাকের জনপ্রিয়তা আছে। তবে ব্যক্তির শারীরিক গঠনের মাপ অনুযায়ী পোশাক বানানোটা একটি শিল্পই বলা যায়। কারও হাত মোটা কিন্তু শরীরের অন্য অংশগুলো তুলনামূলক শুকনা। দোকান থেকে পোশাক কেনার সময় হাতের কারণে তাঁকে এক সাইজ বড় পোশাক কিনতে হয়। এতে শরীরের বাকি অংশে পোশাকটি ঢিলে হয়ে যায়। করপোরেট সাজের ক্ষেত্রে এটি দেখতেও তখন ভালো লাগে না। টেইলরড কাটে এ ধরনের সমস্যাগুলো এড়ানো যায় সহজেই।
করপোরেট পোশাকের জ্যাকেটটিকেই উপস্থাপন করা যায় নানা ধরনের কাটের মাধ্যমে। কখনো লম্বা কাটে, কখনো খাটো কাটে। প্যান্টে দেওয়া যায় নানা কাট এবং এটি পরা যায় নানা রকম টেইলরড কাটের টপস কিংবা কামিজের সঙ্গে। টেইলরড বলতে অনেকেই গতানুগতিক কাটের স্যুট বোঝেন। কিন্তু এ দেশের গরমের কথা মাথায় রেখেই রিফাত রহমান ভিন্ন ধাঁচের আনুষ্ঠানিক পোশাকগুলো বানিয়েছেন। দিয়েছেন চলতি ধারার কাট। স্যুট, লম্বা কাটের পোশাক, এমনকি কামিজও করা যায় টেইলরড কাটের মাধ্যমে। তবে কাপড় বাছার সময় খেয়াল রাখুন সেটি যেন একটু ভারী হয়। সুতি, লিনেন মেশানো ভারী কাপড় কিংবা টেরি কাপড়। সিল্ক, জর্জেট কিংবা শিফনের মতো ফুরফুরে কাপড়গুলো দিয়ে ভালো কাট আনা সম্ভব হবে না।