প্রাণ ফিরেছে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে

দেড় বছরের বন্ধ শেষে ক্যাম্পাস খোলার পর এক শিক্ষার্থী হাজির হয়েছেন তাঁর চার মাসের সন্তানকে নিয়ে।
ছবি: সাদ্দাম হোসেন

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকল্প অফিস শুরু হয়েছিল খালিশপুরের একটি বাড়িতে ১৯৮৭ সালে। সেখান থেকে আহসান আহমেদ রোড। এরপর গল্লামারী এলাকায় বাংলাদেশ বেতারের পরিত্যক্ত জায়গায়। সে সময় বাংলাদেশ বেতারের একতলা ভবনটি দ্বিতল করা হয়। এখানেই শুরু হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম।

স্মৃতি হাতড়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ ও প্রকাশনা বিভাগের পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) এস এম আতিয়ার রহমান বলেন, সেদিনের কথা ভাবাই যায় না। এখানে সন্ধ্যার পর লোক চলাচল ছিল না বললেই চলে। অন্ধকার নামলেই শিয়ালের আনাগোনা বাড়ত, ভয় লাগত। ক্যাম্পাসে প্রায়ই ধরা পড়ত বিষধর সাপ। এমনকি প্রকল্প পরিচালক ও পরে উপাচার্যের দায়িত্ব নেওয়া অধ্যাপক ড. গোলাম রহমানের অফিসেও সাপ ধরা পড়েছিল। কর্মকর্তারা বিকেল হলেই শহরে যাওয়ার জন্য উদ্‌গ্রীব হয়ে পড়তেন।

এখন অবশ্য সেই ভয়-শঙ্কা আর নেই। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় হয়ে উঠেছে এ অঞ্চলের তারুণ্যের প্রতীক।

উৎসবমুখর ক্যাম্পাস

খুলনা-সাতক্ষীরা মহাসড়কের গল্লামারী থেকে কিছুটা এগিয়ে গেলেই সড়কের সঙ্গে লাগোয়া খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক। ফটকের দুই পাশে উড়ছে লাল, নীল, সাদাসহ বিভিন্ন রঙের পতাকা। ফটকের ওপরে বড় ব্যানার টানানো। তাতে লেখা ‘খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় দিবস-২০২১ ’।

২৫ নভেম্বর খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩১তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালিত হয়েছে। তাই আগের দিন, অর্থাৎ ২৪ নভেম্বর ক্যাম্পাসে গিয়ে দেখা যায়, সর্বত্রই চলছে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালনের প্রস্তুতি।

মূল ফটক দিয়ে ঢুকে পিচঢালা পথ ধরে কিছুটা এগিয়ে গেলেই বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাফেটেরিয়া। এক পাশে চোখে পড়ে জটলা। চার মাসের এক শিশুকে নিয়ে রীতিমতো হইহুল্লোড় চলছে। কোলে নেওয়ার জন্য চলছে কাড়াকাড়ি। কেউ শিশুটির ছবি তুলছেন, কেউবা তার সঙ্গে সেলফি তুলছেন। ছবি তোলা পর্ব শেষে আমাদের কথা বলার সুযোগ হলো।

জানা গেল, তাঁরা সবাই মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা ডিসিপ্লিনের (বিভাগ) চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী। সেদিনই ছিল তাঁদের স্নাতকের শেষ ক্লাস। এ কারণে সবাই বেশ সেজেগুজে এসেছেন। করোনাকালেই এ ক্লাসের এক শিক্ষার্থী মা হয়েছেন। ক্যাম্পাস খোলার পর এই প্রথম সন্তানকে নিয়ে হাজির হয়েছেন তিনি। তাই শিশুটিকে ঘিরে বন্ধুবান্ধবদের আগ্রহের শেষ নেই।

শাকিলা জামান নামের শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা হলো। তিনি বললেন, ‘আজই ছিল স্নাতক শেষ বর্ষের শেষ ক্লাস। আগামী ৫ ডিসেম্বর থেকে শুরু হবে পরীক্ষা। হয়তো আর ক্যাম্পাসে আসা হবে না। তাই সবার সঙ্গে ছবি তুলে স্মৃতি ধরে রাখার চেষ্টা চলছে।’

স্নাতকের শেষ ক্লাসে সবাই এসেছিলেন সেজেগুজে
ছবি: সাদ্দাম হোসেন

ফারহানা আমিন নামের আরেক শিক্ষার্থী যোগ করলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ক্যালেন্ডার অনুযায়ী গত ডিসেম্বরেই আমাদের স্নাতক শেষ করার কথা ছিল। কিন্তু করোনার কারণে তা হয়নি। সেশনজটহীন ক্যাম্পাসে এক বছরের জট তৈরি হয়েছে। স্নাতক শেষ করার পর অনেকেই হয়তো আর খুলনায় থাকবে না। প্রকৃতিঘেরা এমন নিরিবিলি ক্যাম্পাস খুব মিস করব।’

ক্যাফেটেরিয়া ছেড়ে আরও কিছুটা এগিয়ে গেলেই পশ্চিম ও পূর্ব দিকে চলে গেছে দুটি সড়ক। পশ্চিম দিকের সড়কে রয়েছে একটি একাডেমিক ভবন ও মেয়েদের দুটি হল। আর পূর্ব দিকে রয়েছে একাডেমিক ভবন, খেলার মাঠ ও ছেলেদের হল। ওই সড়কের ঠিক সামনেই উত্তর দিকে রয়েছে ‘অদম্য বাংলা’ ভাস্কর্য। ইট বিছানো পথ ধরে যেতে হয় সেদিকে।

অদম্য বাংলার উত্তর-পশ্চিম কোণে কয়েকটি দোকান। প্রতিটি দোকানের সামনে বাঁশ আর কাঠ দিয়ে তৈরি হয়েছে বসার ব্যবস্থা। তবে সেগুলোর অধিকাংশই ফাঁকা পড়ে আছে। হাতে গোনা কয়েকজন দোকানে বসে আড্ডা দিচ্ছিলেন। কারও হাতে চায়ের কাপ, কারও হাতে ঝালমুড়ি।

প্রথম দোকান মো. সাইদুল শেখের। লাল চা, ঝাল চা, ধনেপাতার চা, লেবু চা পাওয়া যায় তাঁর দোকানে। ঝাল চায়ের অর্ডার দেওয়া হলো সাইদুলকে। ধনেপাতা আর বেশ বড় একটি কাঁচা মরিচ দেওয়া চা এল হাতে। স্বাদ মন্দ নয়। চায়ে চুমুক দিতে দিতেই কথা হলো তেহসিন আশরাফের সঙ্গে। গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের স্নাতক শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী তিনি। প্রত্যয় বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ডিসিপ্লিনের, সব সেমিস্টারের ক্লাস ও পরীক্ষা একই সঙ্গে শুরু হয়, আবার একই সঙ্গে শেষ হয়। কিছুদিন আগে সব ডিসিপ্লিনের ক্লাস শেষ হয়ে গেছে। আগামী ৫ ডিসেম্বর থেকে শুরু হবে পরীক্ষা। এখন চলছে পরীক্ষা প্রস্তুতির ছুটি। এ কারণে ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থী নেই বললেই চলে। ক্যাম্পাসের মূল আড্ডাস্থলই হলো এই দোকানগুলো। অন্য সময় দোকানগুলোতে বসার জায়গা পাওয়া যায় না।’

ফেরার আনন্দ

সাইদুল শেখের দোকানে বসে চা খেতে খেতে দেখা যায় অদম্য বাংলার ঠিক পেছনে বাগানের মধ্যে কয়েক ছেলেমেয়ে কী যেন করছেন। সেখানে গিয়ে দেখা যায়, সবাই ছবি আঁকায় ব্যস্ত। সামনের প্রকৃতির দৃশ্য কাগজে ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করছিলেন তাঁরা। সবাই চারুকলা অনুষদের প্রিন্ট মেকিং ডিসিপ্লিনের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী। পরীক্ষার অংশ হিসেবে ছবি আঁকছিলেন তাঁরা।

অন্তর মণ্ডল পেনসিল দিয়ে সামনে থাকা বাঁশঝাড়ের ছবি আঁকছিলেন। তিনি বললেন, শিক্ষকেরা জায়গা চিহ্নিত করে দিয়েছেন। এখানে বসেই সামনের কোনো একটি দৃশ্য আঁকতে হবে। মোহসানা আহসান নামের এক ছাত্রী বলেন, ‘করোনার কারণে ভর্তি হওয়ার আড়াই মাসের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ হয়ে যায়। এ কারণে ক্যাম্পাসের যে “ঘ্রাণ”, তা পাওয়া হয়নি। বাসায় বসে অনলাইনে ক্লাস-পরীক্ষা হয়েছে বটে, তবে তাতে শান্তি ছিল না। অনেক হতাশার মধ্য দিয়ে সময় কেটেছে। এখন বন্ধুবান্ধবদের নিয়ে একসঙ্গে কাজ করতে পেরে খুব ভালো লাগছে।’

আবার জমে উঠেছে ক্যাম্পাসের চায়ের দোকান
ছবি: সাদ্দাম হোসেন

যা কিছু অর্জন

বর্তমানে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে আটটি স্কুল (অনুষদ) রয়েছে। এখানে মোট ২৯টি ডিসিপ্লিনে (বিভাগ) শিক্ষা ও গবেষণা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। এ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নিয়মিত ব্যাচেলর ডিগ্রি, ব্যাচেলর অব অনার্স ডিগ্রি, মাস্টার্স ডিগ্রি, এম ফিল ও পিএইচডি প্রদান করা হয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে শিক্ষকসংখ্যা পাঁচ শতাধিক। ছাত্রছাত্রী রয়েছেন প্রায় সাত হাজার। এর মধ্যে বিদেশি শিক্ষার্থী রয়েছেন ১৯ জন। গত ৩১ বছরে ২৭টি ব্যাচ থেকে উত্তীর্ণ স্নাতকের সংখ্যা ১৩ হাজারের বেশি। যাঁদের মধ্যে অনেকেই দেশে-বিদেশে সুনামের সঙ্গে কাজ করছেন। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মধ্যে এক-তৃতীয়াংশই পিএইচডি ডিগ্রিধারী। শিক্ষার্থী ও শিক্ষকের অনুপাত ১: ১১।

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় ২০১৮ ও ২০১৯ সালে পরপর দুইবার স্কোপাস পরিচালিত জরিপে দেশের মধ্যে উদ্ভাবনীতে প্রথম ও গবেষণায় দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থান লাভ করে। জাতিসংঘের এসডিজি অর্জনে সহায়তার জন্য এ বছর প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে চেঞ্জমেকার অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন ডিসিপ্লিনের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী ফাইরুজ ফাইজা বিথার। এ ছাড়া আন্তর্জাতিক তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞান অলিম্পিয়াডে অংশ নিয়ে দেশের মধ্যে প্রথম স্থান অর্জন করেছে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান ডিসিপ্লিনের ফার্মিনেফ দল। সম্প্রতি স্টুডেন্ট প্রজেক্ট প্রতিযোগিতায় ১২টি পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপটিমিস্ট দলের উদ্ভাবনা চ্যাম্পিয়ন হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা কার্যক্রম জোরদারের লক্ষ্যে বহুতলবিশিষ্ট কেন্দ্রীয় গবেষণাগার স্থাপন করা হয়েছে। এই গবেষণাগারে আরটি-পিসিআর মেশিনসহ উন্নতমানের গবেষণা যন্ত্রপাতির সংস্থান করা হয়েছে। এ গবেষণাগারের মাধ্যমে ৬২টি গবেষণা প্রকল্পে ইতিমধ্যে ২ কোটি টাকার বেশি অনুদান বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে তিন শতাধিক গবেষণা নিবন্ধ আন্তর্জাতিক জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে।

সব বিভাগের কার্যক্রম স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরেছে: উপাচার্য

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মাহমুদ হোসেন
ছবি: সংগৃহীত

কয়েক মাস আগেই আপনি উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন। করোনার কারণে নিশ্চয় দায়িত্ব নিয়েই বড় চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছেন। কোন বিষয়টি সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিচ্ছেন?

মাহমুদ হোসেন: শুরুতে পরীক্ষা শুরু করা এবং অনলাইন ক্লাস অব্যাহত রাখার ব্যাপারেই আমি সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়েছি। দায়িত্ব গ্রহণের পরপরই আমি একাডেমিক প্রধানদের নিয়ে মতবিনিময় করি। চার মাস উপাচার্য না থাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামোগত নির্মাণসহ অনেক কাজ আটকে ছিল। যেহেতু আমি সিন্ডিকেটসহ বিভিন্ন বডির সদস্য ছিলাম, তাই বিশ্ববিদ্যালয়ের সমস্যাগুলো জানতাম। এ কারণে দায়িত্ব গ্রহণের দিন থেকেই আমি জমে থাকা কাজ সম্পন্ন করতে শুরু করি। যেসব অবকাঠামোর নির্মাণকাজ আটকে ছিল, তা পুনরায় শুরু করার পদক্ষেপ নিই। এখন বিশ্ববিদ্যালয়ের সব বিভাগের কাজে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে এসেছে।

দেড় বছরের বেশি সময় ধরে ক্যাম্পাস বন্ধ ছিল, এই ক্ষতি কীভাবে পুষিয়ে নেওয়ার কথা ভাবছেন?

মাহমুদ হোসেন: দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রেই এ সংকট বিদ্যমান। আমরা এ ব্যাপারে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ইউজিসির নির্দেশনার আলোকে কাজ করছি। এ ছাড়া আমাদের নিজস্ব প্রচেষ্টাও আছে। অনলাইনে ক্লাস নিয়ে কোর্স সম্পন্ন করার পর প্রথম টার্মের ফাইনাল পরীক্ষাও ইতিমধ্যে অনুষ্ঠিত হয়েছে। আগামী মাসে দ্বিতীয় টার্মের চূড়ান্ত পরীক্ষা সশরীর অনুষ্ঠিত হবে। গত দেড় বছরের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে কিছুটা সময় লাগবে।

উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম আছে। এ সুনাম ধরে রাখতে আপনার পদক্ষেপ কী হবে?

মাহমুদ হোসেন: গত ৩১ বছরে এখানে কোনো ছাত্র সংঘর্ষ হয়নি। প্রাণ ঝরেনি। সেশনজট হয়নি। ধারাবাহিক শিক্ষা কার্যক্রম অব্যাহত আছে। এটা আমাদের সবচেয়ে বড় অর্জন। আমিসহ এখানে শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী, শিক্ষার্থী—সবাই মিলে এই পরিবেশ সংহত রাখা এবং ভাবমূর্তি আরও উজ্জ্বল করতে সর্বদা সচেষ্ট। সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আমরা এই ঐতিহ্য ধরে রাখতে পারব বলে আমার দৃঢ় বিশ্বাস। গবেষণার কার্যক্রম জোরদার করা, গবেষণায় বরাদ্দ বৃদ্ধি, গ্রন্থাগার অটোমেশন, উচ্চগতিসম্পন্ন ইন্টারনেট ব্যবস্থা স্থাপনের ব্যাপারে গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। সব মিলিয়ে বিশ্বমানের শিক্ষা ও গবেষণাই আমার মূল লক্ষ্য। তা ছাড়া চতুর্থ শিল্পবিপ্লবকেও আমরা কাজে লাগাতে চাই।

গবেষণা ও গ্রন্থাগারে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়ার কথা বলছেন। অথচ বাজেটে এ দুটি খাতই অবহেলিত। এ বিষয়ে কী বলবেন?

মাহমুদ হোসেন: আপনি ঠিকই বলেছেন। আসলে গবেষণা ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সমৃদ্ধি সম্ভব নয়। আর দেশ ও জাতির উন্নতি সাধনও সম্ভব নয়। গবেষণা কার্যক্রম বৃদ্ধি ও গ্রন্থাগার উন্নয়ন—এ দুটি দিকেই খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে জোর দেওয়া হচ্ছে। বিগত দিনের চেয়ে গবেষণা কার্যক্রম অনেকাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে এবং খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার এখন অনেক বেশি সমৃদ্ধ। আমরা পুরোপুরিভাবে অটোমেশনে যাওয়ার চেষ্টা করছি। ইতিমধ্যে গ্রন্থাগারে অনলাইন জার্নাল ও ই-বুক সংগ্রহের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া ইউজিসির সহায়তায় ডিজিটাল লাইব্রেরি বাস্তবায়নের কাজও চলছে। গবেষণা কার্যক্রম বৃদ্ধির জন্য এখানে গবেষণা সেল রয়েছে। গবেষণার উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টির জন্য নতুন একটি স্বতন্ত্র ভবনের নির্মাণকাজ প্রায় শেষ। এ গবেষণাগারে আধুনিক যন্ত্রপাতিও স্থাপিত হচ্ছে। এখানে একটি উন্নতমানের আরটি-পিসিআর ল্যাব স্থাপিত হয়েছে। এটা স্বীকার করতেই হবে যে বর্তমান সরকারের আমলে গবেষণা খাতে আগের চেয়ে বরাদ্দ অনেক বেড়েছে। তবে এ কথা ঠিক যে সরকারিভাবে গবেষণা ও গ্রন্থাগারের জন্য আরও বাজেট বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। সুন্দরবন ও উপকূল নিয়ে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে দেশের মধ্যে প্রথম স্থাপিত হয়েছে ইনস্টিটিউট ফর ইন্টিগ্রেটেড স্টাডিজ অন দ্য সুন্দরবনস অ্যান্ড কোস্টাল ইকোসিস্টেম (আইআইএসএসসিই)। এটাকে আন্তর্জাতিক মানের ইনস্টিটিউট হিসেবে গড়ে তুলতে পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।