ওরা ১১ জন
পড়াশোনার বাইরেও ছিলেন শফিয়ার
দরিদ্র শিক্ষার্থীদের সহায়তায় কেউ প্রতিষ্ঠা করেছেন দাতব্য সংগঠন, কেউ আবার দুর্গম চরে স্থাপন করেছেন স্কুল। আপন আলোর দীপ্তিতে তাঁরা হয়ে উঠেছেন শিক্ষার্থীদের প্রেরণা, এলাকার সর্বজন শ্রদ্ধেয়। দেশজুড়ে ছড়িয়ে থাকা এমন ১১ জন শিক্ষককে সম্মানিত করেছে আইপিডিসি ও প্রথম আলো। এখানে পড়ুন রংপুর জিলা স্কুলের সহকারী শিক্ষক শফিয়ার রহমানের কথা।
শুধুই পড়াশোনা নয়, শিক্ষার্থীদের সৃজনশীল নানা উদ্যোগের সঙ্গেও যুক্ত থাকতে হবে। কথাটি খুব করে মানতেন রংপুর জিলা স্কুলের সহকারী শিক্ষক শফিয়ার রহমান। তাই তো শিক্ষার্থীদের নানা কাজের সঙ্গে যুক্ত করতেন। জিলা স্কুলে থাকা অবস্থায় গণিত উৎসব, ভাষা প্রতিযোগ, বিজ্ঞান উৎসবসহ বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে তাঁর উদ্যমও ছিল মনে রাখার মতো। বিজয়ী শিক্ষার্থীদের নিয়ে রংপুরের বাইরেও গিয়েছেন। স্কুলে বিতর্কচর্চা, দেয়ালপত্রিকা উৎসব, পয়লা বৈশাখে নিজেই লাঠিখেলা দেখিয়ে ছাত্রদের যুক্ত করতেন।
একসময় ভাবলেন, অসহায় শিক্ষার্থীদের পাশে থাকতে হবে। আর্থিক কারণে এমন শিক্ষার্থীরা যেন ঝরে না পড়ে, পিছিয়ে না যায়, তার জন্য তাদের প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন। এসব শিক্ষার্থীকে বিভিন্ন সময়ে নিজ বাড়িতে এনে পড়াতেন। তাদের বাড়িতে গিয়েও খোঁজখবর নিতেন। এসব শিক্ষার্থীর পরিবারের আপদে-বিপদেও পাশে দাঁড়াতেন।
রংপুর জিলা স্কুলের বিশাল এলাকাজুড়ে ছিল ঝোপজঙ্গল। নিজে সেগুলো পরিষ্কার করে নানা জাতের গাছ লাগিয়েছেন। খরা মৌসুমে শিক্ষার্থীদের নিয়ে পানি দেওয়াসহ গাছের পরিচর্যা করেছেন। এসব গাছ এখন অনেক বড় হয়েছে। স্কুলটি হয়ে উঠেছে সবুজ।
স্কুলে একজন মাত্র পরিচ্ছন্নতাকর্মী থাকায় দুই শিফটের ক্লাস পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখাটা সব সময় সম্ভব হয়ে উঠত না। শিক্ষার্থীদের নিয়ে নিজেই তিনি ক্লাস-কক্ষ পরিষ্কার অভিযানে নেমে পড়েন। এ জন্য অভিভাবকদের কটুকথাও শুনতে হয়েছে। এরপরও থেমে যাননি।
তিস্তাপাড়ের মানুষ শফিয়ার রহমান। ছোটবেলায় দেখেছেন তিস্তার বন্যা ও ভাঙনে সর্বস্ব হারানো মানুষের দুঃখ। বর্তমানে তিনি তিস্তা নদী সুরক্ষায় ‘তিস্তা বাঁচাও নদী বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদ’-এর সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন। এই সংগঠনের মাধ্যমে তাঁর নেতৃত্বে ইতিমধ্যে নদীতীরবর্তী দুই পাড়ে ২৩০ কিলোমিটারব্যাপী মানববন্ধন কর্মসূচি হয়েছে। এতে অংশ নেন নদীপারের হাজার হাজার মানুষ।