![অনেক শিক্ষার্থীই বইমেলায় খণ্ডকালীন কাজ করছেন l ছবি: আবদুস সালাম](https://images.prothomalo.com/prothomalo%2Fimport%2Fmedia%2F2016%2F02%2F05%2F27c04933e2126cc0a5f0388a2c9a9962-2.jpg?auto=format%2Ccompress)
ফেব্রুয়ারির বইমেলা শুধু নতুন বইয়ের আনন্দই নিয়ে আসে না, অনেকের জন্য তা খণ্ডকালীন কাজের সুযোগের উপলক্ষও। আর বইমেলায় কাজ করা যেমন আনন্দের, তেমনি এটি বাড়তি রোজগারের সুযোগও। এখানে যাঁরা কাজ করেন তাঁদের মতে এটি সব মিলিয়ে বেশ ভালো লাগার অভিজ্ঞতা।
এবারের একুশে বইমেলায় প্রথমবারের মতো কাজ করতে এসেছেন আলহাজ মকবুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মো. রায়হান। তিনি বলেন, এক পরিচিত বড় ভাইয়ের মাধ্যমে তিনি এবার অনন্যা প্রকাশনীতে কাজের সুযোগ পেয়েছেন। দিনের বড় একটি সময় নতুন বইয়ের সঙ্গে থাকতে খারাপ লাগছে না বলেও জানালেন তিনি।
রায়হানের মতো এমন কয়েক শ শিক্ষার্থী এবারের বইমেলায় খণ্ডকালীন কাজ করছেন। এ বছর বিভিন্ন প্রকাশনীর ৬৫১টি দোকান নিয়ে বসেছে বইমেলা। মেলায় প্রকাশকেরা নিজস্ব কর্মচারীর পাশাপাশি শিক্ষার্থীদেরও খণ্ডকালীন কাজের সুযোগ করে দেন। এতে তাঁদের যেমন প্রয়োজন মেটে, শিক্ষার্থীদের কিছুটা বাড়তি আয়ের সংস্থান হয়।
বইমেলার প্রথম দুই দিনে প্রথমা, শিখা, অন্বেষা, আগামী, অন্যপ্রকাশ, কাকলি, শিখা প্রকাশনীসহ বেশ কয়েকটি প্রকাশনীর দোকান ঘুরে দেখা গেছে, দোকানভেদে দুই থেকে আটজন পর্যন্ত শিক্ষার্থী বিভিন্ন প্যাভিলিয়নে কাজ করছেন। ছুটির দিনগুলোতে ভিড় বেশি হবে বলে অনেক প্রকাশনীর মালিকেরা আরও দু-একজন বাড়তি লোকের ব্যবস্থাও করেছেন বলে জানালেন।
বইমেলায় বিভিন্ন স্টলে কাজ করেন এমন একাধিক শিক্ষার্থী বলেন, বইমেলায় কাজ তাঁদের নতুন বইয়ের কাছাকাছি থাকার সুযোগ করে দেয়। আবার লেখক-পাঠকদের সঙ্গে যোগাযোগও আনন্দের। আর বাড়তি আয়ের ব্যাপারটি তো রয়েছেই।
বইমেলায় যাঁরা খণ্ডকালীন কাজ করেন, তাঁরা সাধারণত বিভিন্নভাবে কাজের সুযোগ পান। কেউ যেমন পরিচিত বন্ধু, বড় ভাই-আপুর মাধ্যমে কাজ পান। অনেকে আত্মীয়স্বজনের মাধ্যমে মেলায় কাজ পেয়ে যান। শিখা প্রকাশনীতে খণ্ডকালীন কাজ করতে আসা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের মো. বাকি বিল্লাহ যেমন কাজ পেয়েছেন বিভাগের লেখক বড় ভাইয়ের মাধ্যমে। আর ইডেন মহিলা কলেজের শায়লা পারভীন এর আগে বইমেলায় কাজ করেছেন, এমন এক বড় আপুর মাধ্যমে কাজ পেয়েছেন। তিনি এবার আগামী প্রকাশনীতে কাজ করছেন। শায়লা বললেন, ক্লাসের ফাঁকে বেলা তিনটা থেকে রাত আটটা, আর ছুটির দিনে সারা দিন বইমেলায় কাজ করতে তাঁর তেমন কোনো অসুবিধা হয় না। আবার বইমেলার কাজের সুযোগে হাজার ক্রেতার সঙ্গে কথা বলা এবং কাজের এই অভিজ্ঞতা তাঁর পেশাগত দক্ষতা বাড়াবে বলেও জানালেন তিনি।
বইমেলায় সাধারণত দুইভাবে কাজ করা যায়। কেউ মেলায় প্রতিদিনের হিসাবে কাজ করেন। আবার অনেকে শুধু ছুটির দিনগুলোতে কাজ করেন। সে জন্য কাজের সম্মানী দুই রকমের হয়। মেলায় সাধারণত বেলা তিনটা থেকে রাত আটটা, আর ছুটির দিনগুলোতে বেলা ১১টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত কাজ করতে হয়। যাঁরা মাসিক ভিত্তিতে কাজ করেন, তাঁরা গড়ে ৬ থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত পান। আবার শুধু ছুটির দিনগুলোতে কাজ করলে দুই থেকে চার হাজার টাকা পর্যন্ত আয় করা যায়।
তবে শিক্ষার্থীদের কাছে মেলায় কাজ করা শুধু আয়ের উপলক্ষ নয়, আনন্দের ব্যাপারও। ঢাকা সিটি কলেজের শিক্ষার্থী নিসা মাহবুব যেমন বললেন, ‘এখানে এসে লেখক-পাঠকদের সঙ্গে কথা হচ্ছে, নতুন বই, বিষয় সম্পর্কে জানতে পারছি। সেটিই বড় পাওয়া।’ আর মাস শেষে আয়ের ব্যাপারটিকে বললেন বাড়তি পাওয়া। সব মিলিয়ে এটি তাঁর জন্য মজার অভিজ্ঞতা বলেই জানালেন তিনি।
মেলায় খণ্ডকালীন কাজ নিয়ে কথা হয় শিখা প্রকাশনীর দোকান ব্যবস্থাপক ইমরান হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, সাধারণত তাঁদের সঙ্গে পরিচিতদের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের জীবনবৃত্তান্ত নেওয়া হয়। পরে সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে সাবলীলভাবে কথা বলতে পারে এবং চটপটে এমন শিক্ষার্থীদের কাজের সুযোগ দেওয়া হয়। তিনি আরও বলেন, বইমেলায় কাজ করে অনেকে প্রকাশনীতে স্থায়ীভাবে কাজের সুযোগও পেয়ে যান।