বরযাত্রায় যেভাবে সঙ্গী হলাম

শীতকাল এলেই আমাদের গ্রামটায় বিয়ের ধুম পড়ে যায়। কেমন যেন চারপাশটায় ‘বিয়ে বিয়ে গন্ধ’ ঘুরে বেড়ায়। বিয়ে মানেই জম্পেশ খাওয়াদাওয়া, এ তো আর বলার অপেক্ষা রাখে না। তা ছাড়া পাড়ায় বিয়ের আয়োজন মানেই ছোটদের উৎসব।

একবার গ্রামে টাকাওয়ালা এক লোকের বিয়ের আয়োজন হলো। বিয়ের অনুষ্ঠান হচ্ছে বড় করে। পাড়ার প্রতি ঘর থেকে অনন্ত দুজন বিয়ের নিমন্ত্রণ পেয়েছেন। বিশাল আকারের দুটি গেট করা হলো বিয়েবাড়িতে। আলোতে ঝলমল করতে লাগল পুরো পাড়া। ওদিকে শহরের এক নামকরা ক্লাবও ভাড়া নেওয়া হয়েছে, বিয়ের অনুষ্ঠান সেখানেই। বরযাত্রীদের জন্য প্রায় ৫০টি গাড়ি ভাড়া নেওয়া হলো।

আমরা তখন তৃতীয় কি চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ি। জমকালো এমন আয়োজন দেখে পাড়ার আমরা ছোটরা প্ল্যান করলাম, যে করেই হোক বরযাত্রায় সঙ্গী হতে হবে।

যথারীতি বিয়ের দিন আমরা প্রস্তুত। কিন্তু বরযাত্রীর গাড়িতে ওঠার আগে শুনতে পেলাম, যাত্রায় ছোটদের নেওয়া হবে না। আমাদের দেখে একজন হুমকিই দিয়ে বসলেন, ‘ভুলক্রমেও যদি কোনো গাড়িতে তোমাদের পাই, তাহলে নামিয়ে দেওয়া হবে।’ তখন আমাদের পাড়ায় এই বাজে কাজটা প্রথার মতো ছিল। মানে, দূরে কোনো বিয়ের অনুষ্ঠানে ছোটদের না নেওয়া।

বরযাত্রী হিসেবে যেতে পারব না শুনে সবার মন খারাপ হয়ে গেল। তবে আমরাও দমবার পাত্র নই! মিশন সাকসেস করার ফন্দি আঁটলাম। বরযাত্রীর গাড়ির মধ্যে বেশ কয়েকটি গাড়ি পাড়ার দিদিদের জন্য বরাদ্দ আছে, এ তথ্য জানা। যেহেতু ওই গাড়িতে শুধু মেয়েরা যাবে, তাই ওদিকটায় একটু ঝামেলা কম হবে। তাই আমরা সবাই দিদিদের কাছে গেলাম। তাঁরা আমাদের কথা শুনে অভয় দিলেন আর জানালেন, তাঁদের গাড়িতেই নিয়ে যাবেন।

আমরা একসঙ্গে এক গাড়িতে না উঠে ভাগ হয়ে গেলাম। তারপর দিদিদের গাড়িতে উঠে পড়লাম। গাড়ি ছাড়ার সময় হয়ে গেল আর আমরা দুরুদুরু বুকে বসে থাকলাম। তবে যখনই গাড়ির দরজা বন্ধ করল, তখনই যে লোকটা ছোটদের নিয়ে যাবেন না বলেছিলেন, তিনিই গাড়ির সামনে এসে হাজির।

জোর গলায় জিজ্ঞেস করলেন গাড়িতে ছোটরা কেউ আছে কি না। এক দিদি বুদ্ধি করে বললেন, ‘না, নেই।’ লোকটি চলে গেল আর আমাদের গাড়িও ছেড়ে দিল।

ঘণ্টা তিনেক পর গাড়ি ক্লাবে পৌঁছাল। আমরা ছোটরা এক এক করে বিভিন্ন গাড়ি থেকে নামতে থাকলাম। তারপর একত্র হতেই যাঁরা ছোটদের নিতে চাননি, তাঁরা তাজ্জব বনে গেলেন। আর বলতে লাগলেন, ‘কীভাবে সম্ভব!’

আমরা অবশ্য ততক্ষণে বিজয়ীর বেশে ঘুরে বেড়াচ্ছি, হইহল্লার করছি।

লেখক: শিক্ষার্থী, কক্সবাজার সরকারি কলেজ, কক্সবাজার