বাজার নয়, উৎসব!

নানা রকম প্রপস হাতে মজার সব ছবি তোলার সুযোগ ছিল উৎসবে। ছবি: জাইম বিন তাজদিদ
নানা রকম প্রপস হাতে মজার সব ছবি তোলার সুযোগ ছিল উৎসবে। ছবি: জাইম বিন তাজদিদ

মোড়কটা দেখতে অনেকটা ছাতার মতো। ভেতরে কী? কচুর লতি! নানা রকম মোড়কের ভেতরে আরও ছিল গাজর, কাঁঠালের বিচি, টমেটো, কচুর মোচা, কচু শাক, আপেল, কাঁচা মরিচ...কত কী! বাজার ভাবলে ভুল করবেন। তবে যাঁরা এসবের পসরা সাজিয়ে বসেছিলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে তাঁরাই হয়তো একদিন বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করবেন।

সেই প্রস্তুতি নিতেই ‘ডিআইইউ মার্কেটিং ফেস্ট ২০১৭’তে হাজির হয়েছিলেন ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির (ডিআইইউ) শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগের শিক্ষকদের উদ্যোগে ধানমন্ডি ক্যাম্পাসে উৎসবটির আয়োজন করা হয়েছিল গত ২৩-২৫ জুলাই। শিরোনামে ‘মার্কেটিং ফেস্ট’ বলা হলেও উৎসবের মোট নয়টি প্রতিযোগিতা উন্মুক্ত ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের সব বিভাগের শিক্ষার্থীদের জন্য। উৎসবের পৃষ্ঠপোষকতা করেছে আড়ং ডেইরি।

 ‘শিক্ষার্থীরা পাঠ্যবই থেকে যা শিখছে, তা যেন মাঠপর্যায়ে সহজে কাজে লাগাতে পারে, তাই এ আয়োজন। আমরা বিশ্বাস করি, এই উৎসবে অংশগ্রহণের অভিজ্ঞতা তাঁদের কর্মজীবনে সাফল্য আনতে সহায়ক হবে।’ বললেন উৎসবটির সহ-আহ্বায়ক ও ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগের জ্যেষ্ঠ প্রভাষক সাবিহা মতিন। জানালেন, শিক্ষার্থীদের তাঁরা সব সময়ই ‘ক্রিয়েটিভ অ্যাসাইনমেন্ট’ দিতে চেষ্টা করেন, যেন তত্ত্বীয় জ্ঞানটা শিক্ষার্থীরা কাজে লাগাতে পারে।

প্রতিযোগিতার নামগুলোও বেশ মজার—ক্র্যাক দ্য কেস, কুইজ ম্যানিয়া, ব্র্যান্ড রেস, অ্যাড ম্যাড, হাজার টাকার খেলা, ই-ওয়ার, ক্ল্যাশ অব ওয়ার্ডস, জ্যাম এবং দ্য প্যাক টু প্রমোট। ক্র্যাক দ্য কেসে ‘মার্কেটিং’ সংক্রান্ত বিভিন্ন সমস্যার সমাধান করেছেন প্রতিযোগীরা। কুইজ ম্যানিয়ায় রীতিমতো লিখিত পরীক্ষা দিতে হয়েছে, তবে সেই পরীক্ষাও নাকি বেশ উপভোগ্য ছিল। ব্র্যান্ড রেসে তৈরি করতে হয়েছে পণ্যের ট্যাগলাইন, লোগো কিংবা স্লোগান। অ্যাড ম্যাড ছিল বিজ্ঞাপন নির্মাণের প্রতিযোগিতা।

হাজার টাকার খেলায় প্রতিযোগীদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছিল এক হাজার টাকা। শর্ত হলো, এই এক হাজার টাকা মূলধন দিয়েই এক দিনের জন্য একটা ব্যবসা দাঁড় করাতে হবে। কঠিন চ্যালেঞ্জটা ঠিকঠাক মোকাবিলা করে শেষ পর্যন্ত চ্যাম্পিয়ন হয়েছে ‘বোঝাবেন ডট কম’ নামে একটি দল। সহপাঠীদের পড়া বুঝিয়ে আয় করার বন্দোবস্ত করেছিলেন তাঁরা। ওদিকে ই-ওয়ারে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে বিকিকিনির প্রতিযোগিতা হয়েছে। ক্ল্যাশ অব ওয়ার্ডস ছিল বিতর্ক প্রতিযোগিতা। মার্কেটিংয়ের নানা বিষয় নিয়ে জমে উঠেছিল তুমুল বিতর্ক। ‘জ্যাম’ নামের প্রতিযোগিতাটিতে অংশগ্রহণকারীদের সময় দেওয়া হয়েছিল এক মিনিট। মাত্র এক মিনিটের মধ্যেই ক্রেতার মন জয় করে বিক্রি করতে হবে নির্ধারিত পণ্য, কাজটা কিন্তু সহজ নয়। তার ওপর পণ্যগুলোও বেশ অদ্ভুত: চুলকানির ওষুধ, ইঁদুর মারার ওষুধ কিংবা রং শ্যামলা হওয়ার ক্রিম!

সাবিহা মতিন জানালেন, ‘দ্য প্যাক টু প্রমোট’ প্রতিযোগিতাটির ধারণা একেবারেই নতুন। ছয়-সাত বছর আগে শাইখ সিরাজের হৃদয়ে মাটি ও মানুষ অনুষ্ঠান থেকে তিনি জেনেছিলেন, বাংলাদেশের সবজি ঠিকমতো প্যাকেটজাত করা যায় না বলে বিদেশে রপ্তানি হয় না। এ তথ্য মাথায় নিয়ে ‘দ্য প্যাক টু প্রমোট’ প্রতিযোগিতাটি সাজানো হয়েছে। বিভিন্ন ধরনের সবজি কত কম দামে কতটা আকর্ষণীয় ও টেকসইভাবে প্যাকেটজাত করা যায়, সেটাই ছিল প্রতিযোগিতার মূল লক্ষ্য। অন্য সব সবজিকে পেছনে ফেলে শেষ পর্যন্ত চ্যাম্পিয়নের পুরস্কার জিতে নিয়েছে কচুর লতি।

জ্যাম আর অ্যাড ম্যাডের প্রথম রানারআপ মহসিনা দেওয়ান পৃথিল বলেন, ‘ড্যাফোডিলে বারবার এমন উৎসব হওয়া উচিত। আশা করি এই অভিজ্ঞতা আমাদের চাকরিক্ষেত্রে অনেক কাজে লাগবে।’ ‘জ্যাম’-এর দ্বিতীয় রানারআপ ফওজিয়া আক্তার বললেন, ‘উৎসবটা শুধু আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে সীমাবদ্ধ না রেখে আন্তবিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে করা গেলে আরও ভালো হতো।’ সাবিহা মতিন জানালেন, এরই মধ্যে সে পরিকল্পনাও তাঁরা করতে শুরু করেছেন।

পাঁচটি প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে তিনটিতে পদক জিতেছেন ফারুক হোসেন। কুইজ ম্যানিয়া, প্যাক টু প্রমোট আর ক্ল্যাশ অব ওয়ার্ডসের তিনটিতেই প্রথম রানারআপ হয়ে সবচেয়ে বেশি পুরস্কার জিতেছেন তিনি। বিভিন্ন প্রতিযোগিতার মোট ৫২টি স্টল সাজানো ছিল পুরো তিন দিন। ‘ফটো বুথ’-এ ছিল নানা ঢঙের প্রপস নিয়ে ছবি তোলার সুযোগ। তিন দিনজুড়ে উৎসবমুখর হয়ে ছিল ড্যাফোডিলের ক্যাম্পাস। সব শেষে আয়োজক ও অংশগ্রহণকারী সবাই একমত—কেউ নিজেকে চিনেছেন, কেউ অন্যকে অনুপ্রেরণা দিতে গিয়ে নিজে অনুপ্রাণিত হয়েছেন, কেউ হয়েছেন আত্মবিশ্বাসী। এই অভিজ্ঞতাকে পুঁজি করেই অনেক দূর যেতে চান তাঁরা।