বাবা, তোমাকে বলা হয়নি
বাবা তাঁর প্রিয় বাইসাইকেল বিক্রি করে দিলেন
আজ ২০ জুন, বাবা দিবস। বাবাকে ভালোবাসার বিশেষ এই দিন উপলক্ষে পাঠকের কাছে লেখা আহ্বান করেছিল গোদরেজ প্রটেক্ট ও প্রথম আলো অনলাইন। ‘বাবা, তোমাকে বলা হয়নি’ শিরোনামে বিপুলসংখ্যক পাঠক তাঁদের বাবাকে নিয়ে অনুভূতিমালা লিখেছেন। এখানে নির্বাচিত লেখাগুলোর একটি প্রকাশিত হলো।
পড়াশোনার জন্য মেসে থাকি তখন। বাসায় এসে দেখি, মাসের টাকা পাঠাতে গিয়ে বাবা তাঁর প্রিয় বাইসাইকেলটি বিক্রি করে দিয়েছেন!
আশ্বিন-কার্তিক—এই দুই মাস কৃষক পরিবারের জন্য সবচেয়ে অভাবের দুটি মাস। বাবা হাসিমুখে বলেছিলেন, ‘নতুন ধান ঘরে উঠলেই আরেকটা সাইকেল কিনে নেব।’ কষ্টের স্মৃতিটি এখনো জীবন্ত।
কৃষক পরিবারে বেড়ে ওঠা আমার। খেতের কাজে বাবাকে সাহায্য করতে গেলে তিনি বলতেন, ‘তোমার নিজের কাজ ঠিকঠাক করো। কৃষি আমার ডিপার্টমেন্ট, এটা আমাকেই সামলাতে দাও!’
সামনেই আশপাশের অনেকেই টিটকিরি মারত। অনেকে বলত, ছেলেকে আমড়া কাঠের ঢেঁকি বানাচ্ছে! মামা-চাচা ছাড়া চাকরি হয় নাকি? বাবা হাসিমুখে আমাকে বলতেন, ‘নিজের কাজ মন দিয়ে করো!’
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর বাইসাইকেল কেনার প্রয়োজন হলো। কারণ, বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধুদের সবাই বাইসাইকেল ব্যবহার করে। পরের মাসে বাড়ি গিয়ে দেখি, আমার রুমে একটা বাইসাইকেল রাখা। বাবা কিনে রেখেছেন। আবার ল্যাপটপের জরুরি দরকার হলো। কিনতে হবে। বাবাকে বললাম, টাকা লাগবে। কয়েক দিন পর বাবা টাকা পাঠালেন।
বাড়িতে গিয়ে দেখি টাকা পাঠাতে গিয়ে মা-বাবা তাঁদের প্রিয় গাছগুলো বিক্রি করে দিয়েছেন।
এখন আমি দিনাজপুরে হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। বিদেশে পড়তে এসেছি। এখনো দিন শেষে যখন ক্লান্ত হই, অনুপ্রেরণা পাই বাবার মুখের সেই বাক্য থেকে, ‘নিজের কাজটা ঠিকমতো করো।’