বাড়ির ছাদে পিঠার উৎসব

শীতের শুরু মানেই যেন পিঠা–পুিলর উৎসব। নতুন ধানের চালের তৈরি পিঠার আমেজই আলাদা। এ সময়ে পিঠা নিয়ে বাড়ির ছাদে করা যায় আলাদা আয়োজন।

চাইলে বাড়ির ছাদেই নিজেদের মতো করে বসানো যায় পিঠার আসর। মডেল: আকাশ, অনিন্দিতা, মিম, নীল, এশা।ছবি: কবির হোসেন

‘আরও এলো সাথে সাথে, নতুন গাছের খেজুর রসে, লোভ দেখিয়ে মিষ্টি পিঠা।’ কবি সুফিয়া কামালের এই রচনার মতো পিঠার লোভে গ্রামীণ জীবনে ফিরে যেত শহুরে মানুষ। শহরকে কেন্দ্র করে পিঠা তৈরি বা খাওয়ার স্মৃতি হয়তো সে রকম নেই। শীতের সময় বাড়ি ফিরে যাওয়া এই মানুষদের পিঠা দিয়েই বরণ করে নেওয়া হতো। ‘বৌ করে পিঠা পুর-দেওয়া মিঠা, দেখে জিভে সরে জল’। কাজী নজরুল ইসলাম বরণের আবেগকে এভাবেই তুলে ধরেছেন। মানুষের সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক, আবেগ আর ভালোবাসার কথা যেন বলে দেয় এক টুকরো পিঠা।

পিঠা ভালোবাসেন তরুণেরাও
ছবি: কবির হোসেন

শীতের ধান কেটে ঘরে তোলা শুরু হয় অগ্রহায়ণ মাসে। এরপর ধান সেদ্ধ, মাড়াই আর ভাঙতেই অগ্রহায়ণের অনেকটা চলে যায়। আর তাই বলা যায় পরের মাস পৌষ হলো পিঠা খাওয়ার সময়।

পিঠা উৎসব আয়োজনের ধরনে পরিবর্তন এলেও গ্রামীণ পিঠাগুলো কিন্তু নিজের প্রাণশক্তি হারিয়ে ফেলেনি। শহুরে মানুষকে এখনো কাছে টেনে নিচ্ছে। গরম গরম ভাপা পিঠা, গুড় আর নারকেল এখনো আমাদের মনে করিয়ে দেয় মমতার কথা। তাই শখ করে হলেও নিজের ছাদে বা রাস্তায় দাঁড়িয়ে দুই টুকরো পিঠা উপভোগ করা যায় চাইলেই। তাই গ্রাম হোক কিংবা শহর এ সময়টায় পিঠা খাওয়ার ধুম লেগেই থাকে। যদিও শহরে এ উৎসব উপভোগের ধরন এখন কিছুটা আলাদা। বাড়ির ছাদেই বসানো যায় পিঠার আসর।

শীতের বিকেলের নরম আলোয় শুরু হোক পিঠা উৎসব
ছবি: কবির হোসেন

বাড়ির ছাদের এ পিঠা উৎসব একদম নতুন নয়। নিজেরা পিঠা তৈরিতে পটু হলে মাটির চুলায় পিঠা তৈরি করাও কঠিন কিছু নয়। আর পটুতা যদি না থাকে, তাহলে পিঠাওয়ালাকে বাড়িতে নিয়ে এসেও আয়োজন করা যায়। ছাদটি রঙিন কাগজ দিয়ে সাজিয়ে নিতে পারেন মনের মতো করে। শীতের এই সময়ে ছাদ ছাড়াও ঘরোয়া দাওয়াতে বা হলুদের অনুষ্ঠানেও পিঠা উৎসব করা যায়। খরচও থাকবে হাতের নাগালে। সাধারণত প্রতিটি পিঠার দাম অনুসারেই মোট দাম নির্ধারণ করা হয়।

গরম–গরম ভাপা পিঠা
ছবি: কবির হোসেন

খনার বচনের উল্লেখিত ‘কাল ধানের ধলা পিঠা’র মতো চালের পিঠা হয়তো বাড়ির ছাদে পাওয়া যাবে না। অথবা ‘তাহার মতন চেরন সেওই কে কাটিতে পারে, নক্সী করা পাকান পিঠায় সবাই তারে হারে— জসীমউদ্‌দীনের কবিতার এমন নকশা করা বাহারি পিঠাও হয়তো পাওয়া যাবে না। তবে হাজার বছর ধরে চলে আসা পুরোনো সেই আমেজ কিছুটা হলেও বাড়ির ছাদেই আমরা পেতে পারি, তারই–বা মূল্য কম কী!