যুদ্ধে যাওয়ার পথে ঘোড়ার ওপর ঘুমিয়ে পড়েছিলেন নেপোলিয়ান

যুদ্ধ যাত্রাকালে ঘোড়ার ওপর ঘুমিয়ে পড়েছিলেন নেপোলিয়ান
ছবি: উইকিমিডিয়া কমন্স

ঘুম এক রহস্য। নানাজন একে দেখেছেন নানাভাবে। সাদামাটা যা বুঝি, ঘুম আমাদের ক্লান্তি দূর করে। শরীর ও মন—দুটিরই। ঘুমের তত্ত্ব নিয়ে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ বলেছেন,

‘জাগার থেকে ঘুমোই

আবার ঘুমের থেকে জাগি

অনেক সময় ভাবি মনে

কেন, কিসের লাগি?’

অনেক বিখ্যাত মানুষের ঘুম নিয়ে নানা রকম গল্প শোনা যায়। কেউ বেঘোরে ঘুমাতেন, কেউ আবার ঘুমের জন্য ছটফট করতেন। কেউ ঘুমিয়ে পড়তেন যুদ্ধের মাঠেই! যাহোক, বিখ্যাত লোকেরা যে কত রকমফের করেন ঘুমের, তা–ও জানাই এবার।

বিখ্যাতদের ঘুমের গল্প

ইতালির নবজাগরণের পথিকৃৎ লেওনার্দো দা ভিঞ্চি। অবাক ঘুম ছিল তাঁর। একটানা কয়েক ঘণ্টা ঘুমাননি কখনো। তিনি সাধারণত একটানা ২০ মিনিট থেকে বড় জোর দুই ঘণ্টা। এ রকম ঘুম দিনে কয়েকবার দিতেন ভিঞ্চি। ইংরেজ কবি ও নাট্যকার শেক্‌সপিয়ার এমনিতেই রহস্যময় মানুষ ছিলেন। তাঁর ঘরের কথা পরে খুব কম জেনেছে। তবে নানা সূত্র থেকে জানা যায়, অনিদ্রা ছিল তাঁর নিত্যসঙ্গী।

ফরাসি সম্রাট মহাবীর নেপোলিয়ানের কথা শুনেছেন নিশ্চই? কিন্তু তাঁর ঘুমের কথা শুনেছেন কি? বিচিত্র ঘুমের অভ্যাস ছিল এই বীরের। ঘুমানোর আগে পোশাক বদলানোর অভ্যাস ছিল না। রাতে কিছুটা ঘুমাতেন, বাকি সময় থাকতেন জেগে। দিনের বেলা ঝিমাতেন বেশি। আবার যুদ্ধে যাচ্ছেন, ঘোড়ায় বসেও ঘুমিয়ে পড়তেন—একবার ভাবুন, কী কাণ্ড! আবার বড় অভিযান শেষে টানা ১৮ ঘণ্টা ঘুমানোর রেকর্ডও আছে তাঁর।

জার্মান সুরস্রষ্টা বিটোভেনের নাম শুনেছেন সংগীতপিপাসু অনেকেই। অনেক শারীরিক সমস্যা ছিল তাঁর। একসময় হয়ে যান কালা। তাঁর সংগীতের মূর্ছনা সহজে ঘুম আনত অনেকের চোখে। কিন্তু নিজে কী কখনো ভুগতেন অনিদ্রায়? না, তাঁর ঘুম ছিল ঠিকঠাক। বেশ নিয়মিত ঘুমাতেন তিনি।

ইংরেজ সাহিত্যের বিখ্যাত নাম চার্লস ডিকেন্স। তিনি ছিলেন একজন অনিদ্রা রোগী। যে কারণে নিজে বানাতেন নানা রকম ঘুমের নিয়মকানুন। উত্তর দিকে শিয়র ছিল তাঁর। সঠিকভাবে দিক নির্ণয় করতে তিনি ব্যবহার করতেন কম্পাস। অনেক সময় রাতবিরেতে লন্ডনের পথে পথে হাঁটতেন এই সাহিত্যিক। রাতে যতই চেষ্টা করুক, সূর্যমামা উঠলেই নাকি ঘুম আসত তাঁর।

ইংরেজ কবি পি বি শেলির স্ত্রী মেরি শেলিও বিখ্যাত লেখক। তাঁর বিখ্যাত উপন্যাস ‘ফ্রাঙ্কেনস্টাইন’–এর ধারণা তিনি পেয়েছিলেন আধেক ঘুম আর আধেক জাগরণের মধ্যে। তাঁর আধেক ঘুমে নয়ন চুমে স্বপ্নে দিয়ে গেল সেই উপন্যাসের সূত্র।

আবার চার্লস ডারউইনের ঘুম ছিল বেশ গোলমেলে। বিবর্তনবাদের জনক ঘুমাতেন অশান্তির ঘুম। দুপুর ৩টায় একটু আবার রাতে একটু। কিন্তু সেটাও অশান্তির। নানা ধরনের অসুখ ছিল, আর সে জন্য অনিদ্রাও ছিল নিয়মিত।

হালের জনপ্রিয় তরুণ মার্ক জাকারবার্গের কথাই ধরুণ, তিনি কিন্তু নিয়ম মেনে ঘুম থেকে ওঠেন। ফেসবুকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মার্ক জাকারবার্গ ঘুমাতে যানও নিয়ম মেনে। রাতের খাবারের পর সন্তানদের সঙ্গে কিছুটা সময় কাটিয়ে ঘুমাতে যান। তবে খুব ভোরে না, জাকারবার্গ ঘুম থেকে ওঠেন সকাল আটটার দিকে।

ঘুম নিয়ে মজার আরও তথ্য

  • ১২ শতাংশ লোক স্বপ্ন দেখেন পুরো সাদা কালো।

  • বিড়ালের জীবনের দুই–তৃতীয়াংশ সময় কাটে ঘুমিয়ে।

  • জিরাফের দিনে ১.৯ ঘণ্টা ঘুম চাই, আর বাদামি বাদুড়ের লাগে ১৯.৯ ঘণ্টার ঘুম।

  • মানুষ জীবনের এক–তৃতীয়াংশ কাটে ঘুমিয়ে।

  • মানুষের মধ্যে এযাবৎ নির্ঘুম সময়ের রেকর্ড ১১ দিনের।

যাই হোক ঘুমাবেন নিয়মিত। প্রতিদিন এক সময়ে ঘুমাতে যাবেন আর উঠবেনও এক সময়ে। সুস্বাস্থ্যের জন্য ঘুম খুব প্রয়োজন।