যেভাবে করোনা সংক্রমণ কমিয়েছে চাঁপাইনবাবগঞ্জ
করোনা সংক্রমণের উচ্চ হার অর্থাৎ হটস্পট হয়ে যেমন, তেমনি তা নিয়ন্ত্রণে এনেও আলোচনায় এসেছে চাঁপাইনবাবগঞ্জ। দুই দফায় ১৪ দিনের কঠোর বিধিনিষেধ, এরপর কিছুটা শিথিল করে দুই দফায় ১৪ দিনের বিশেষ বিধিনিষেধ, ওয়ার্ড পর্যায়ে করোনা প্রতিরোধ কমিটির তৎপরতা ও প্রশাসনের অভিযানে সংক্রমণের রাশ টানা গেছে বলে মনে করা হচ্ছে।
ঈদুল ফিতরের পর গত মে মাসের তৃতীয় সপ্তাহে সংক্রমণের হার যখন ৬২ দশমিক ১১ শতাংশ, তখন টনক নড়ে করোনা প্রতিরোধ জেলা কমিটির। জরুরি সভা তো হয়ই, তার আগে জনপ্রতিনিধিসহ বিভিন্ন স্তরের নেতাদের সঙ্গে করোনা সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি ঠেকানো নিয়ে মতবিনিময় করেন জেলা প্রশাসক মো. মঞ্জুরুল হাফিজ।
২৪ মে করোনা প্রতিরোধ জেলা কমিটির জরুরি সভায় সাত দিনের বিশেষ বিধিনিষেধের ঘোষণা দেন জেল প্রশাসক। জেলা সদরসহ প্রতিটি উপজেলার রাস্তায় কঠোর অবস্থান নেয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। ২০ থেকে ২৭টি পর্যন্ত ভ্রাম্যমাণ আদালতেসহ প্রশাসনের তৎপরতা ছিল চোখে পড়ার মতো।
অন্যদিকে সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে ভারত যাওয়া-আসা সোনামসজিদ বন্দর দিয়ে আটকে পড়া বাংলাদেশিদের আসা, ভারতীয় ট্রাকচালকদের বন্দরে প্রবেশ নিয়ে নাজুক পরিস্থিতিতে ছিল শিবগঞ্জ উপজেলা। সেখানে সংক্রমণের হারও ছিল বেশি। এ পরিস্থিতি সামাল দিতে স্থানীয় সাংসদ, উপজেলা প্রশাসন এবং সীমান্তে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের জোর তৎপরতা ছিল।
সংক্রমণের হার নিচে নেমে আসার প্রধান কারণই হচ্ছে ২৫ মে থেকে ১৪ দিনের বিশেষ বিধিনিষেধ সফলভাবে বাস্তবায়ন। এ ছাড়া বিধিনিষেধ প্রত্যাহার করা হলেও স্বাস্থ্যবিধি মেনে সকাল নয়টা থেকে বিকাল পাঁচটা পর্যন্ত দোকানপাট খোলা, আমের বাজারগুলোকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে বসানো, জেলা ও উপজেলার পাশাপাশি ওয়ার্ড পর্যায়ের কমিটিগুলোর সক্রিয়তায় মাস্ক ব্যবহার বৃদ্ধিও ছিল সংক্রমণ কমে যাওয়ার কারণ।
জেলা প্রশাসক মো. মঞ্জুরুল হাফিজ বলেন, ‘মানুষজন এই বিধিনিষেধকে মেনে নিয়ে আমাদের সাফল্য এনে দিয়েছে। মানুষজনের মনে করোনাভাইরাসের ভারতীয় ধরন নিয়ে ভীতিও ছিল। এ ছাড়া গণমাধ্যমকর্মীদের তৎপরতাও আমাদের সহায়তা করেছে। আমরা এ অবস্থা ধরে রাখতে সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।’ প্রতিটি ইউনিয়নে একজন জেলা পর্যায়ের কর্মকর্তা ও একটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থাকে (এনজিও) দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তাঁরা করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড কমিটিগুলোর কাজ তদারকি করে প্রতিবেদন দেবেন।
জেলার সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে পাওয়া তথ্যে দেখা যায়, মে মাসে প্রথম বিধিনিষেধ সপ্তাহে জেলায় করোনা শনাক্তের হার ছিল ২০ দশমিক ০৭ শতাংশ। এ বিধিনিষেধ আরও সাত দিন বাড়ানো হয়। জুন মাসে করোনা শনাক্তের হার দাঁড়ায় ১৭ দশমিক ৭৯ শতাংশ; যা ২৮ জুলাই পর্যন্ত আরও কমে এসে দাঁড়ায় ১২ দশমিক ০৮ শতাংশ।
গত মে মাস পর্যন্ত জেলায় করোনা আক্রান্ত হয়ে মৃত রোগীর সংখ্যা ছিল ৩৭ জন। জুন মাসে তা বেড়ে দাঁড়ায় ১১৩ জনে। জুন মাসে মারা যান ৭৬ জন। এদিকে জুলাই মাসে (২৮ তারিখ পর্যন্ত) মারা গেছেন ২৫ জন।
জাতীয় পর্যায়ের সংক্রমণের যে হার, তার চেয়ে এখন অনেক কম চাঁপাইনবাবগঞ্জে। জেলা হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডে রোগীর চাপও কমেছে। মৃত্যুহীন দিনও যাচ্ছে মাঝেমধ্যে।