গরমের দিনে বারান্দাগুলোতে আড্ডাও চলত দিনের যেকোনো সময়। বাইরে থেকে বাড়িতে এলেই মনে হতো কোথাও কোনো তাড়া নেই, চৈত্রের দুপুরে গা এলিয়ে পড়ে থাকার এমন সুখ আর কোথাও পাই না।

এই বাড়িতে হইহুল্লোড়, হট্টগোল, আনন্দ–বেদনায় জীবন কাটানো মানুষগুলো এখন একেকজন একেক স্থানে। দেশ-বিদেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়েছেন তাঁরা। শুধু এই বাড়ি থেকে নয়, পৃথিবী থেকেই চিরবিদায় নিলেন আমার দাদি, বাবা, মা ও তিন ভাই।

সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বাড়িটাও এখন পরিবর্তন হয়েছে। তবু যে বাড়িটার কথা সব সময় মনে গেঁথে আছে, সেটা শৈশবের বিশাল এক বাড়ি, যেখানে ডাইনিং টেবিলটা টেনিস কোর্টের মতো বড়, মায়ের বিছানা ছিল একটা সুইমিংপুল।

অনেক বছর পর ফিরে গিয়ে দেখি, হঠাৎ বাড়িটা খেলনার মতো ছোট হয়ে গেছে। দরজা-জানালার ওপরের চৌকাঠ হাত উঁচু না করেই ছোঁয়া যায়। যে করিডর পার হতে দৌড়াতে হতো অনেকটা সময়, সেটা হাঁটা শুরু না করতেই শেষ হয়ে যায়। আমার সঙ্গে সঙ্গে বাড়িটাও বড় হয়নি, রোজ যেন ছোট হয়ে যাচ্ছে, দূরে সরে যাচ্ছে।

যে বাড়িতে গেলেই টাইম মেশিনে চড়ে অতীতে ফেরা যায়, সেই বাড়ির মায়া কাটানো যে বড্ড কঠিন।