শান্তি রানীর সবজির দোকান

নিজের সবজির দোকানে শান্তি রানী চাকমা।
ছবি: লেখক

খাগড়াছড়ির দীঘিনালার লারমা স্কয়ারে গেলেই শান্তি রানী চাকমার দেখা মেলে। তাঁর ছোট দোকানটিতে পাহাড়ি নানা শাকসবজির পসরা। কী ঝড়-বৃষ্টি, কী দাবদাহ—সেখানেই আছেন তিনি। সবজি বিক্রির আয়েই চলে শান্তি রানীর (৭০) সংসার।

শান্তি রানী চাকমার এই জীবনসংগ্রাম দুই দশকের। শুরুতে বসতবাড়ির কাঁঠাল আর পাহাড় থেকে বাঁশ কোড়ল সংগ্রহ করে এনে বিক্রি করতেন। সামান্য পুঁজি হলে তা দিয়েই শাকসবজি কিনে এনে বিক্রি শুরু করেছিলেন। তা-ই চালিয়ে নিচ্ছেন এখনো।

শান্তি রানী চাকমার বাড়ি সদর উপজেলার বোয়ালখালী ইউনিয়নের বাবুপাড়া এলাকায়। স্বামী জ্ঞান রঞ্জন চাকমা (৮০) শারীরিক অসুস্থতায় শয্যাশায়ী। তাঁদের তিন সন্তান। বড় ছেলে প্রাণেশ্বর চাকমা স্নাতক পাস করে আলাদা থাকেন। মেয়ে বৈশালী চাকমাকে এইচএসসি পাস করিয়ে বিয়ে দিয়েছেন। ছোট ছেলে ভবতোষ চাকমা স্নাতকোত্তর পড়ছেন।

২৫ জুলাই বিকেলে লারমা স্কয়ারে দেখা মেলে শান্তি রানীর। কঠোর বিধিনিষেধের কারণে দোকানে ক্রেতা নেই, অলস বসে আছেন। কেমন আছেন জিজ্ঞেস করতেই জানালেন, বিধিনিষেধের কারণে ভালো নেই। আগে যেখানে দিনে দুই থেকে পাঁচ হাজার টাকা সবজি বিক্রি হতো, এখন হচ্ছে ২০০ থেকে ৩০০ টাকার। শান্তি রানী বলেন, দিনে আগে ৩০০ থেকে ৬০০ টাকা পর্যন্ত আয় হতো। এখন আয় কমে গেছে।

আয় কম বলে সংসার চালাতেও হিমশিম খেতে হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘সংসার, স্বামীর ওষুধ আর এক ছেলের পড়াশোনার খরচ চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। আমরা স্বামী-স্ত্রী কেউই বয়স্ক ভাতা পাই না। সরকারি কোনো সুবিধা পেলে উপকার হতো।’

তাঁর কথা বলেছিলাম দীঘিনালা উপজেলা পরিষদের নারী ভাইস চেয়ারম্যান সীমা দেওয়ানকে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘শান্তি রানী চাকমা একজন সংগ্রামী নারী। শান্তি রানী বৃদ্ধ বয়সেও শাকসবজি বিক্রি করে ছেলেমেয়েদের পড়াশোনা করিয়েছেন, সংসারের খরচ চালাচ্ছেন, তা অনুকরণীয়। আমি তাঁদের সামাজিক নিরাপত্তাসুবিধা দেওয়ার ব্যবস্থা করব।’