ফোর্বস ৩০ অনূর্ধ্ব ৩০ এশিয়া ২০২১
শোকের শক্তিতে শক্তিমান শমী
২০ এপ্রিল বিশ্বখ্যাত সাময়িকী ফোর্বস প্রকাশ করেছে এশিয়ার ৩০ অনূর্ধ্ব ৩০ (থার্টি আন্ডার থার্টি) তালিকা। ১০টি শ্রেণিতে এশিয়ার ৩০০ তরুণ স্থান পেয়েছেন তালিকায়। এবার তালিকায় বাংলাদেশের নয়জন রয়েছেন। তাঁদের দুজন নারী। সামাজিক প্রভাব শ্রেণিতে স্থান পাওয়া বাংলাদেশের শমী হাসান চৌধুরীর কথা থাকছে এই প্রতিবেদনে।
এক দিনের ডায়রিয়ায় ভুগে মারা গিয়েছিলেন শমী হাসান চৌধুরীর মা আশরাফুননেসা। প্রতিরোধযোগ্য এমন একটি রোগে তাঁর আকস্মিক মৃত্যু মেনে নিতে পারেনি তাঁর পরিবার। শোকে মুহ্যমান শমী তখনই প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়েছিলেন কিছু করার।
সেই ‘কিছু করা’ হচ্ছে নিরাপদ পানি, পয়োনিষ্কাশন ও পরিচ্ছন্নতা (ওয়াশ) সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করা। তাই তো মায়ের মৃত্যুর চার দিন পরই তিনি শোককে শক্তিতে পরিণত করলেন। হাজির হলেন ময়মনসিংহের হরিজন সম্প্রদায়ের মানুষের মধ্যে, শোনালেন মাকে হারানোর করুণ গল্প, সেই সঙ্গে ছড়িয়ে দিলেন পরিচ্ছন্নতার বার্তা।
শমী বলেন, ‘২০১৪ সালে এসে কেউ ডায়রিয়ায় মারা যেতে পারে, এটা ভেবে আমি পীড়িত হচ্ছিলাম। আমি শিক্ষিত পরিবারে বেড়ে ওঠা মানুষ, কিছু বুঝে ওঠার আগেই মাকে হারিয়েছিলাম। আমারই যদি এই অবস্থা হয়, যাঁদের শিক্ষা নেই, টয়লেট নেই, সচেতনতা নেই—ওই পরিবারগুলোর কী হবে।’
সচেতনতার বার্তা নিয়ে নেমে পড়লেন শমী। বছরে কত সংখ্যক মানুষ ডায়রিয়ায় প্রাণ হারায়, সেই কাঠখোট্টা পরিসংখ্যানের চেয়ে নিজের অভিজ্ঞতা শোনাতেন। তাঁর মাকে বাঁচাতে না পারার কষ্টের কথা বলতেন। তিনি চেষ্টা করে যেতে থাকলেন অন্যদের বাঁচাতে, অন্য কারোর মাকে বাঁচাতে।
শমী বললেন, ‘বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যে হাজারো মানুষ ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মারা যান, এটা আমার ধারণাতেও ছিল না। ডায়রিয়া প্রতিরোধযোগ্য রোগ। সচেতনতা আর স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললেই অনেক মানুষকে বাঁচানো সম্ভব। সেখান থেকেই আমার এ কাজে জড়িয়ে পড়া।’
তত দিনে শমী বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে প্রবেশ করেছেন। সহপাঠী হিসেবে পেয়েছেন রিজভী আরেফিনকে। দুজনের কাজের ক্ষেত্র আর ভাবনা অনেকটাই এক। তাঁরা ভাবলেন, নিজেদের কাজগুলো সুন্দরভাবে করতে একটি প্ল্যাটফর্ম গড়তে। সেই ভাবনা থেকে গড়ে তুললেন সেবামূলক সংস্থা ‘অ্যাওয়ারনেস ৩৬০’।
শমী জানালেন, বিশ্বের ২৩টি দেশের ১ হাজার ৫০০ তরুণ এখন অ্যাওয়ারনেস ৩৬০ উদ্যোগের সঙ্গে কাজ করছেন। ওয়াশ নিয়ে কাজের পাশাপাশি জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য অর্জনেও কাজ করছেন তাঁরা। শমী ও রিজভী প্রথমে দেশের একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে কিছুদিন পড়েছেন, পরে দুজনেই ইউনিভার্সিটি পুত্রা মালয়েশিয়া থেকে অর্থনীতি ও ব্যবস্থাপনায় স্নাতক করেছেন।
বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের আগেও নানা স্বেচ্ছাসেবামূলক কার্যক্রমে যুক্ত ছিলেন শমী, পুরস্কারও পেয়েছেন। ২০১২ সালে যুক্তরাষ্ট্রে ‘এ’ লেভেল সমমানের ডিপ্লোমা করেছিলেন শমী, সেখানে স্বেচ্ছাসেবী কাজে অংশ নিয়ে পেয়েছিলেন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার ‘প্রেসিডেন্টস ভলান্টিয়ার সার্ভিস অ্যাওয়ার্ড’। ২০১৯ সালে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পেয়েছেন পুত্রা আইকন অ্যাওয়ার্ড, যুক্তরাজ্যের রাজপরিবারের পক্ষ থেকে পেয়েছেন ডায়ানা অ্যাওয়ার্ড ও ডায়ানা লিগ্যাসি অ্যাওয়ার্ড। এবার তো রিজভী আরেফিনসহ পেলেন ফোর্বস–এর স্বীকৃতি।
শমী বলেন, ‘ফোর্বস–এর স্বীকৃতিই আনন্দের ব্যাপার, আরও আনন্দিত হয়েছি ফোর্বস–এর ৩০০ জনের মধ্যে প্রতি শ্রেণিতে যে ‘ফিচারড অনারি’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়, সামাজিক প্রভাব শ্রেণিতে আমাদের দুজনকে এ সম্মান দেওয়া হয়েছে। এ স্বীকৃতি আমাদের কাজকে এগিয়ে নিতে অনুপ্রাণিত করবে।’