অতিথিদের সঙ্গে বিজয়ীরা। ছবি: সংগৃহীত
অতিথিদের সঙ্গে বিজয়ীরা। ছবি: সংগৃহীত

পুরো ক্যাম্পাসেই সাজ সাজ রব। সবাই যখন ইতিউতি ঘুরে বেড়াচ্ছিল, মনীষা পারমিতা তখন আছেন ভীষণ টেনশনে। কিছুক্ষণ পরই মন্ত্রী পৌঁছে যাবেন অনুষ্ঠান উদ্বোধন করতে। সব ঠিকঠাক আছে তো? এই দৃশ্য গত ২৮ জুলাইয়ের। মিলিটারি ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির (এমআইএসটি) লিটারেচার অ্যান্ড কালচারাল ক্লাব আয়োজিত আন্তবিশ্ববিদ্যালয় সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক উৎসব ‘অঙ্কুর ২০১৭’তে গেলেই আপনার হয়তো দেখা হয়ে যেত ক্লাবটির সহ–সভাপতি মনীষার সঙ্গে।

রোদ-বৃষ্টি মাথায় নিয়ে সেদিন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা জড়ো হয়েছিলেন বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতি নিয়ে তাঁদের ভাবনা তুলে ধরতে। ৩০টিরও বেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নিয়ে নয়টি বিভাগে সাজানো হয় অনুষ্ঠান। প্রায় এক মাস আগে থেকে শুরু হয় এই মহাযজ্ঞের আয়োজন। ফেসবুক ও ডিজিটাল মিডিয়ার মাধ্যমে সংগ্রহ করা হয় প্রতিযোগীদের লেখা ও কাজ। এরপর চলেছে বাছাইপর্ব। বাছাইপর্ব শেষে চূড়ান্ত লেখাগুলো নিয়ে প্রথমবারের মতো প্রকাশ করা হয় সাহিত্য ম্যাগাজিন ওঙ্কার। তো বোঝাই যাচ্ছে, কতটা ঝক্কি পোহাতে হয়েছে শিক্ষার্থীদের। কিন্তু ঝক্কির শেষ এখানেই নয়। চূড়ান্ত পর্বে অন্য প্রতিযোগীদের সঙ্গে লড়াই করে নিজেদের অবস্থানও ধরে রাখা চাই। দিন নেই রাত নেই শিক্ষার্থীদের কখনো ডিপার্টমেন্টে, কখনো-বা প্রেসে ছুটতে হয়েছে।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূরের সম্মানে তৈরি করা হয় তাঁরই অভিনীত জনপ্রিয় চরিত্র ‘বাকের ভাই’-এর খণ্ড নাটক। মুহুর্মুহু করতালি এবং নাচ-গানে মুখর ছিল পুরো মিলনায়তন। সম্মিলিতভাবে প্রতিযোগিতায় প্রাইজমানি ধার্য করা হয়েছিল দুই লাখ টাকা। পুরো আয়োজনে ছিল মোট নয়টি অংশ—কথোপকথন, বাংলা সাহিত্য অলিম্পিয়াড, গল্পপূরণ, কুইজ, ফটোটেল, ক্যানভাসে আঁকি, কালচারাল কেস কম্পিটিশন ও স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র প্রতিযোগিতা। উৎসবের প্রধান আকর্ষণ ছিল সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা ‘রংমেশালি’। ব্যান্ডদল চিরকুটের সদস্যরা ছাড়াও এতে বিচারকের দায়িত্ব পালন করেন অভিনেতা হাসান ইমাম ও লায়লা হাসান, পরিচালক গিয়াসউদ্দিন সেলিম ও শিহাব শাহীন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন নাট্যব্যক্তিত্ব শহিদুল আলম সাচ্চু। ভিডিও মেসেজের মাধ্যমে অঙ্কুরকে শুভেচ্ছা জানান অভিনয়শিল্পী চঞ্চল চৌধুরী ও মম এবং জলের গান ব্যান্ডের রাহুল আনন্দ।

উৎসব নিয়ে ক্লাবের সভাপতি সিভিল ডিপার্টমেন্টের শিক্ষার্থী আহমেদ সাদমান বলেন, ‘আমাদের ক্লাবের মূলকথা হচ্ছে শেকড়ের তরে। আমরা যারা আমাদের শেকড়, অর্থাৎ বাঙালি সত্তাকে আঁকড়ে ধরে বাঁচতে চাই, তাদের জন্যই এই ক্লাব, তাদের জন্যই এই উৎসব।’

অন্যদিকে ক্লাবের সাবেক সভাপতি ও শিক্ষার্থী এবসানা সারিয়া বলেন, ‘সাহিত্যচর্চা যে যেকোনো অবস্থান থেকেই করা যায়, সেই ভাবনাই আমরা সবার মধ্যে ছড়িয়ে দিতে চাই।’ এমআইএসটির ডিরেক্টর অব স্টুডেন্টস ওয়েলফেয়ার ব্রিগেডিয়ার জাকির হোসেন বলেন, ‘আশা করি, ভবিষ্যতে এই আয়োজন আরও বড় রূপ নেবে।’