সেদিন বন্ধু ছিল বলেই
আজ আগস্ট মাসের প্রথম রোববার—বন্ধু দিবস। স্বপ্ন নিয়ের আহ্বানে পাঠকেরা লিখে পাঠিয়েছেন তাঁদের সেই সব বন্ধুর কথা, যাঁরা দুঃসময়ে বাড়িয়েছেন সাহায্যের হাত।
২০১৯ সাল। পৃথিবীতে তখনো শুরু হয়নি করোনা মহামারি। সে সময় ঢাকার নটর ডেম কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাস করেছি। চেনা-অচেনা বন্ধুরা বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তিযুদ্ধের রণক্ষেত্র থেকে একের পর এক বিজয় ছিনিয়ে আনছে। প্রতিদিনই পেতাম কারও না কারও ‘যুদ্ধজয়’–এর খবর।
অথচ আমি তখনো অনিশ্চয়তায়। এক বিভাগ থেকে আরেক বিভাগ, রাজশাহী থেকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, কিংবা জগন্নাথ থেকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছুটছি। অথচ তখনো আমার কলেজের বন্ধু, রুমমেট, গ্রুপমেট উ থান্টকে বেশ নির্ভার, প্রাণোচ্ছল দেখাচ্ছিল।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) একই সঙ্গে, একই দিনে দুজনের ভর্তি পরীক্ষা ছিল। আমি পরীক্ষা দিতে গিয়েছি ঠিকই, অথচ উ থান্ট সেদিন ঘুমিয়ে ছিল, পরীক্ষা দিতে যায়নি। ওর আত্মবিশ্বাস দেখে খুব অবাক হয়েছিলাম। ও জানত, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ঠিকই ওর জায়গা হয়ে যাবে। কলেজের প্রোগ্রেস কার্ড কিংবা এইচএসসির ফলাফলও হয়তো বন্ধুর এই আত্মবিশ্বাস আর নির্ভার থাকতে পারার অন্যতম কারণ।
এরপর একদিন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) একটি ইউনিটে লিখিত পরীক্ষায় টেকার পর ভাইভার ডাক পড়ল। আমি প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। সেদিনই জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের এক বড় ভাই ফোন করে জানালেন, জাবিতে ভর্তির জন্য একাডেমিক সনদগুলো জমা দিয়ে আসতে হবে। আমি পড়লাম দোটানায়। কোনটা ছেড়ে কোনটা করি। জাবিতে কাগজপত্র জমা দিতে যাব, নাকি চবির ভাইভা পরীক্ষায় যাব। তাহলে উপায়? দুটাই যে আমার শেষ ভরসা।
আমি বলার আগেই আমার সংকটটা বুঝে নিল উ থান্ট। সে-ই জাহাঙ্গীরনগর গিয়ে কাগজপত্র জমা দিয়ে আসার দায়িত্ব নিল।
প্রিয় বন্ধুর সেদিনের সাহায্যের কারণেই আমি আজ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভুগোল ও পরিবেশ বিভাগে পড়তে পারছি। আর উ থান্ট পড়ছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগে। কোনো দিন বলা হয়নি; আজ সুযোগ পেয়ে বলি—ধন্যবাদ বন্ধু!
স্বপ্ন নিয়েতে লেখা পাঠাতে চাইলে যোগাযোগ করুন ফেসবুক পেজে। ফেসবুক পেজের লিংক এখানে।