হবু মায়ের যা খেতে হবে

মডেল ও অভিনেত্রী পিয়া জান্নাতুল সন্তান গর্ভে থাকাকালীন খেয়েছেন পুষ্টিবিদের পরামর্শ মেনে
ছবি: প্রথম আলো

গর্ভাবস্থা শুধু মায়ের জন্য নয়, সন্তানের জন্যও খুবই গুরুত্বপূর্ণ সময় হিসেবে বিবেচিত হয়ে থাকে। তাই গর্ভকালে অনেক বেশি সচেতন থাকতে হয় অনাগত শিশু ও নিজের সুস্থতা নিয়ে।

গর্ভকাল যেকোনো নারীর জীবনে পরম কাঙ্ক্ষিত মুহূর্ত। অনেক ক্ষেত্রেই হবু মায়েরা বুঝতে পারেন না, কী হচ্ছে বা কী হতে পারে। এ সময় তাঁরা গুরুজন এবং পাড়া-প্রতিবেশীর উপদেশ মানতে গিয়ে নানা বিষয়ে দোটানায় থাকেন। বিশেষ করে খাবারসংক্রান্ত পরামর্শে। অনেকেরই নিজের শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান থাকে না, জানা থাকে না কিসে সন্তানের ভালো বা খারাপ হতে পারে। তাই গর্ভকালে হবু মায়েদের করণীয়বিষয়ক জ্ঞান থাকা খুবই জরুরি।

গর্ভকালীন সময়ে প্রথম তিন মাসে শিশুর অঙ্গ–প্রত্যঙ্গের গঠন হয়। এ সময় হবু মাকে অবশ্যই পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে। গর্ভে থাকা শিশুর যেন ঠিকমতো বিকাশ হয়, সেদিকে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে। গর্ভস্থ শিশু যেন ভিটামিন ও খনিজ বিশেষ করে ফলিক অ্যাসিড, ক্যালসিয়াম, আয়রন পায়। খাদ্যতালিকায় রাখুন ব্রকলি, শিম, বরবটি, পাকা পেঁপে, বাঁধাকপি, গাজর, পুঁইশাক, পাটশাক, মূলাশাক, শর্ষেশাক, লেবুর মতো খাবারগুলো। কেনা শাকসবজি, ফলমূল বাজার থেকে আনার পর আধা ঘণ্টা পানিতে ভিজিয়ে তারপর খেলে ফরমালিনের ঝুঁকি এড়ানো সম্ভব। ফলও খেতে বলা হয়। কিন্তু এনজাইম প্রস্তুতকারী ফল যেমন পেঁপে বা আনারস খাওয়ার ক্ষেত্রে আবার সাবধানতা অবলম্বন করতে বলা হয়েছে। এ সময় প্রচুর বিশুদ্ধ পানি পান করতে হবে। অতিরিক্ত তেলযুক্ত খাবার এ সময় এড়িয়ে চলার চেষ্টা করুন।

গর্ভাবস্থার মধ্যবর্তী তিন মাসে স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে বেশ খানিকটা বাড়তি ক্যালরির প্রয়োজন হয়। দৈনিক ৩৪০ ক্যালরি বাড়তি গ্রহণ করতে হবে এ সময়। শেষ তিন মাসে এই বাড়তি পরিমাণ হবে ৩৫০ ক্যালরি। ক্যালরির হিসাব ঠিক রাখতে গর্ভধারণের আগেই পুষ্টিবিদের শরণাপন্ন হওয়া ভালো। জিংক ও ক্যালসিয়ামের চাহিদা বাড়ে ১২ সপ্তাহ পেরোনোর পর। দুধ ও দুধের তৈরি খাবার, ডিম ও ছোট মাছে ক্যালসিয়াম আছে পর্যাপ্ত।

গর্ভকালে খালি পেটে থাকবেন না। সব সময়ই অল্প করে ভাত, রুটি, দুধ, দই, মাছ, মাংস ও ডিম খেতে চেষ্টা করুন। ওজন স্বাভাবিক থাকলে গর্ভাবস্থায় ২৫ থেকে ৩৫ পাউন্ড ওজন বাড়তে পারে। এটা খুবই স্বাভাবিক। ক্যালরির উত্স হিসেবে শুধু ভাত বা শর্করাজাতীয় খাবার খেলেই হবে না, আমিষজাতীয় খাবারও পর্যাপ্ত পরিমাণ গ্রহণ করতে হবে। সাধারণভাবে মোট ক্যালরির অর্ধেক নিতে হবে শর্করা থেকে, এক–চতুর্থাংশ আমিষ থেকে, বাকি এক–চতুর্থাংশ নিতে হবে স্নেহজাতীয় খাবার থেকে। ১ গ্রাম শর্করাজাতীয় খাবার থেকে ৪ ক্যালরি, ১ গ্রাম আমিষজাতীয় খাবার থেকে ৪ ক্যালরি আর ১ গ্রাম স্নেহজাতীয় খাবার থেকে ৯ ক্যালরি পাওয়া যায়। এটা মাথায় রেখে ক্যালরির হিসাব করতে হবে।

মাছ, মাংস, দুধ, ডিম, ডাল ও অন্যান্য বিচিজাতীয় খাবার আমিষের উত্স। প্রাণিজ উত্স থেকে পাওয়া আমিষ সবচেয়ে ভালো। তবে প্রতিদিন পর্যাপ্ত প্রাণিজ আমিষ খেতে না পারলেও কয়েক ধরনের উদ্ভিজ্জ উৎস থেকে আমিষ গ্রহণ করুন (যেমন কয়েক ধরনের ডাল)। প্রতিদিন অন্তত একটা ডিম এবং দুইবার দুধ খেতে পারলে খুবই ভালো। দুই মাস পরপর ওজন মাপুন, প্রয়োজনে অভিজ্ঞ গাইনোকলোজিস্টের পরামর্শ নিন।