হরতাল-অবরোধ নিয়ে দুশ্চিন্তায় বান্দরবানের শিম চাষিরা

‘বর্ষাকালীন ফসল পানির দামে বিক্রি করতে হয়েছে। ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার এখন একমাত্র ভরসা শিম। কিন্তু মৌসুমের শুরুতে হরতাল পড়লে শিমেও মার খেয়ে সব আশা শেষ হয়ে যাবে। তাই হরতাল নিয়ে দুঃশ্চিন্তায় আছি। আমরা এখন থেকে আর কোনো হরতাল চাই না।’
মাচানের নিচে শিম খেতে কাজ করতে করতে বলছিলেন বান্দরবান জেলার গোয়ালিয়াখোলা গ্রামের কৃষক মোহাম্মদ লোকমান। শহর থেকে আট কিলোমিটার দূরে ওই গ্রামে প্রায় এক একর জমিতে শিমের চাষ করেছেন তিনি। চলতি ডিসেম্বর ও জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত শিম আহরণ ও বিক্রির ভরা মৌসুম। খেতে ফলন ভালো হওয়ায় এবার লাভ পাওয়ার আশা করছেন লোকমান। কিন্তু হরতাল চলতে থাকলে তাঁর সে আশা মাঠে মারা যাবে। তাই এখন থেকে দুঃশ্চিন্তায় অস্থির তিনি।
লোকমানের মতো রেইছা ও গোয়ালিয়াখোলা এলাকার ইউছুফ, হাফেজ আহমদ, মোর্শেদ আলম, নজরুল ইসলামসহ সব কৃষকেরই একই অবস্থা এবং একই কথা-‘আমরা আর হরতাল-অবরোধ চাই না। কারণ এবার ক্ষতিগ্রস্ত হলে ধার-দেনা করে সংগ্রহ করা অবশিষ্ট পুঁজিও হারিয়ে পথে বসতে হবে।’
সরেজমিনে দেখা যায়, বান্দরবান-কেরানিহাট-চট্টগ্রাম সড়কের গোয়ালিয়াখোলা ও রেইছা এলাকায় বিস্তীর্ণ জমিতে শিম খেতের মাচান আর মাচান। প্রতিটি লতায় ঝুলে আছে থোকা থোকা শিম।
স্থানীয় কৃষকেরা জানান, এক সময় এ এলাকার বেশির ভাগ জমিতে ধান চাষ হতো। সড়কটি নির্মাণের পর থেকে অধিকাংশ জমিতে সবজি চাষ করে আসছেন তাঁরা। জেলায় এটি একমাত্র এলাকা যেখানে কোনো তামাক চাষ হয় না। তবে নানা কারণে ফসলে মার খেয়ে কেউ কেউ ইদানীং তামাক চাষের দিকে ঝুঁকছেন।
কৃষক মোর্শেদ আলম জানান, গত বর্ষায় তিনি ৪০ শতক জমিতে ২৫ হাজার টাকা খরচ করে কাকরোল ও শসা চাষ করেছিলেন। ফলন ভালো হলেও সরবরাহ বেশি থাকায় সেবার দারুণ মার খেয়েছেন। সব ফলন বিক্রি করে পেয়েছেন মাত্র পাঁচ হাজার টাকা। এখন শিমের ফলন ভালো হয়েছে। জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত শিম আহরণের ভরা মৌসুম। এ সময় শহর থেকে ব্যবসায়ীরা এসে খেত থেকে পাইকারি হারে শিম নিয়ে যান। কিন্তু হরতালের কারণে ব্যবসায়ীরা আসতে না পারলে কৃষকদের সব আশা শেষ হয়ে যাবে।
এ বিষয়ে উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা অংক্যনু মারমা বলেন, জেলার সবজি ভান্ডার রেইছা ও গোয়ালিখোলায় ৫৫৮ কৃষক পরিবার অনেক আগে থেকে শসা, কাকরোল, লাউ, বেগুন ও শিম চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছিল। এবার তারা ২০০ একর জমিতে শুধু শিম চাষ করেছে। শিমের দাম পেলে শসা ও কাকরোলের ক্ষতি পুষিয়ে তারা মোটামুটি দাঁড়াতে পারবে। তবে হরতাল-অবরোধের কারণে যান চলাচল বন্ধ থাকলে কিংবা ক্রেতা আসতে না পারলে তারা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।