১২০ দেশের শিক্ষার্থীদের প্রতিযোগিতায় প্রথম তিনটি অবস্থানই চুয়েটের

যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগানভিত্তিক আন্তর্জাতিক পেশাজীবী সংগঠন আমেরিকান কংক্রিট ইনস্টিটিউট (এসিআই) গত ২৬ জুলাই আয়োজন করেছিল কংক্রিট প্রজেক্টস প্রতিযোগিতা ২০২১। ১২০টি দেশ নিয়ে অনলাইনে আয়োজিত এই প্রতিযোগিতায় প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয়—তিনটি অবস্থানই জিতে নিয়েছে চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট)।

এবারের প্রতিযোগিতায় নিয়ম ছিল—শিক্ষার্থীরা তাঁদের গবেষণাকর্মের দুটি অনুলিপি পাঠাবেন। দ্বিতীয় কপিতে শিক্ষার্থী কিংবা সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের নাম-ঠিকানা কিছুই উল্লেখ থাকবে না। এই কপিটিই বিচারকদের কাছে যাবে। অর্থাৎ মূল্যায়ন করা হয়েছে মূলত ‘ব্লাইন্ড’ পদ্ধতিতে।

বিজয়ী হওয়া তিন দলকেই আমেরিকান কংক্রিট ইনস্টিটিউট (এসিআই) তাঁদের সদর দপ্তর মিশিগানে পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। সেখানে তাঁরা সনদ ছাড়াও পুরস্কার হিসেবে পাবেন মোট ১৫০০ ডলার।

এ ছাড়া বিখ্যাত ‘কংক্রিট ইন্টারন্যাশনাল ম্যাগাজিন’-এর পরবর্তী সংখ্যায় তাঁদের কাজ নিয়ে সচিত্র প্রতিবেদনও প্রকাশিত হবে।

বাঁ থেকে মাহফুজুল ইসলাম ও ইমতিয়াজ ইবনে গিয়াস

প্রতিযোগিতায় যাঁরা প্রথম

অনলাইনের প্রতিযোগিতা, অনলাইনে কথা হলো বিজয়ী দল ও তাঁদের উপদেষ্টার সঙ্গে।

‘আ ক্রিটিক্যাল রিভিউ অন দ্য পারফরম্যান্স অব মাইক্রোবিয়াল কংক্রিট ডেভেলপড ইউজিং ই. কলি ব্যাকটেরিয়া’ শিরোনামের প্রকল্পের জন্য প্রথম পুরস্কার পেয়েছেন চুয়েটের পুরকৌশল বিভাগের শিক্ষার্থী মাহফুজুল ইসলাম ও ইমতিয়াজ ইবনে গিয়াস। তাঁদের উপদেষ্টা ছিলেন একই বিভাগের অধ্যাপক মঈনুল ইসলাম।

অধ্যাপক মঈনুল ইসলাম

সামুদ্রিক বা পানির নিচের স্থাপনায় কংক্রিটে নানা সময়ে নানা ধরনের ফাটল তৈরি হয়। এই ফাটলগুলোর মেরামত করা বেশ সময়সাপেক্ষ ও ব্যয়বহুল। ‘মাইক্রোবিয়াল কংক্রিটকে’ এই সমস্যার অন্যতম সমাধান হিসেবে দেখিয়েছেন দলের সদস্যরা।

মাহফুজুল ইসলাম জানালেন, তাঁরা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের অধ্যাপক ওয়াহিদা সুমির সহযোগিতায় নন ব্যাসিলাস গ্রুপের ই কোলি ব্যাকটেরিয়া ব্যবহার করে এক বিশেষ ধরনের কংক্রিট তৈরি করেন, যাতে ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রতর ফাটল ধরলেও সেই ফাটল স্বয়ংক্রিয় ভাবে মেরামত হয়ে যাবে।

এই কংক্রিটের কর্মপদ্ধতি ব্যাখ্যা করতে গিয়ে অধ্যাপক মইনুল ইসলাম বলেন, ‘যখন কোনো স্থাপনায় ফাটল ধরে, অণুজীব তখন এই ফাটল দিয়ে প্রবেশ করা পানির সঙ্গে কয়েকটি ধাপে বিক্রিয়া করে ক্যালসিয়াম কার্বনেট তৈরি করে। এই ক্যালসিয়াম কার্বনেট প্রায় ০.৫ মিলিমিটার পর্যন্ত ফাটলকে মেরামত করতে পারে।’

বাঁ থেকে সৈয়দ মারুফ-উল হাসান ও এজাজ আহমেদ
ছবি: সংগৃহীত

দ্বিতীয় যাঁরা

প্রতিযোগিতায় দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেছেন পুরকৌশল বিভাগের শিক্ষার্থী এজাজ আহমেদ ও সৈয়দ মারুফ-উল হাসান। তাঁদের উপদেষ্টা ছিলেন একই বিভাগের অধ্যাপক জি এম সাদিকুল ইসলাম। প্রকল্পের শিরোনাম—ইফেক্ট অব কমপ্যাকশন অন দ্য প্রপার্টিজ অব ইকো ফ্রেন্ডলি বিল্ডিং ব্লক ইউজিং ইন্ডাস্ট্রিয়াল বাই প্রোডাক্টস। পরিবেশ রক্ষার্থে এই গবেষক দল দেখিয়েছেন—কীভাবে ছাই এবং অন্যান্য বড় বড় শিল্পকারখানাগুলো থেকে উৎপন্ন আবর্জনা কাজে লাগিয়ে পরিবেশবান্ধব ইট তৈরি করা সম্ভব।

অধ্যাপক জি এম সাদিকুল ইসলাম

অধ্যাপক জি এম সাদিকুল ইসলাম বলেন, ‘এই ইটগুলোর উৎপাদন খরচ যেমন কম, তেমনি সাধারণ ইটের তুলনায় এগুলো বেশি টেকসই।’

সম্পূর্ণ কাজের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করতে দলের সদস্য এজাজ আহমেদ বলেন, ‘আমাদের বিভাগে এ ধরনের ইট তৈরির জন্য যথাযথ প্রযুক্তি ছিল না। তখন আমাদের উপদেষ্টা চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে বিএসআরএমের একটি ল্যাবে কাজের ব্যবস্থা করে দেন। আমরা ছুটির দিনগুলোতে চট্টগ্রাম থেকে ৭০-৮০ কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে সেখানে গিয়ে কাজটি সম্পন্ন করি।’

বাঁ থেকে জান্নাতুল ফেরদাউস ও তাবাসসিমা ফারিয়া

তৃতীয় যাঁরা

তৃতীয় স্থান অর্জন করছেন জান্নাতুল ফেরদাউস ও তাবাসসিমা ফারিয়া। এই দলের প্রকল্পের শিরোনাম—টারনারি কম্বিনেশন অব ইন্ডাস্ট্রিয়াল ওয়েস্টেজ ফর সাস্টেনেবল জিও পলিমার মরটারস। এই দলটিরও উপদেষ্টা ছিলেন অধ্যাপক জি এম সাদিকুল ইসলাম।

প্রকল্প সম্পর্কে তাবাসসিমা ফারিয়া বলেন, ‘শিল্পায়নের এই যুগে শিল্প বর্জ্য ব্যবস্থাপনাই আমাদের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। এ ছাড়া নির্মাণশিল্পে ব্যবহৃত সিমেন্ট থেকে প্রচুর গ্রিন হাউস গ্যাস তৈরি হয়। তাই আমাদের প্রধান উদ্দেশ্যে ছিল সিমেন্টের বিকল্প খুঁজে বের করা এবং পরিবেশ দূষণ কমানো।’

জানিয়ে রাখি, এই তিনটি প্রকল্পই শিক্ষার্থীরা তাঁদের চূড়ান্ত বর্ষের গবেষণা পত্র হিসেবে গত বছর মার্চ মাসেই সম্পন্ন করেছিলেন। এ বছরের ২১ মে যখন প্রতিযোগিতা শুরু হয়, তখন শিক্ষার্থীরা অনলাইন মিটিংয়ের মাধ্যমে উপদেষ্টাদের দিকনির্দেশনা অনুযায়ী কিছু পরিবর্তন করে প্রতিযোগিতায় জমা দেন।